শীতে জনজীবনে ‘ছন্দপতন

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পৌষের প্রথম সাপ্তাহে সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। হঠাৎ হাড়কাঁপানো শীতে কাবু রাজধানীবাসীও। আবহাওয়া অফিস বলছে তাপমাত্রা আরো ১ থেকে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে। ঘন কুয়াশা আর শৈত্য প্রবাহে নিদারুণ কষ্টে পড়ে গেছেন ছিন্নমূল মানুষ। কর্মজীবী মানুষকে সকালে হালকা-মাঝারি ধরনের কুয়াশায় বের হতে হয়। হঠাৎ করে শীত ঝাঁকিয়ে বসায় কম্বলসহ গরম কাপড় কেনার ধুম পড়ে গেছে রাজধানীর ফুটফাটে।

ফটোসাংবাদিক এস এ মাসুম। প্রতিদিন মুন্সিগঞ্জের গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা-মাওয়া রোড দিয়ে কর্মস্থলে আসেন। বৃহস্পতিবার প্রচন্ড শীতের কারণে পথে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয় তাকে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত গরম কাপড়ে মুড়িয়ে অফিসে আসার পথে কোথাও ঘন কুয়াশা কোথাও হালকা কুয়াশায় শির শিরে হিম ঠাÐা বাতাসে কাবু হয়ে যায়। সে জানায় মাওয়া মহাসড়ক দিয়ে ঢাকায় আসার পথে কোথাও কোথাও আগুন জ্বালিয়ে মানুষের শীত নিবারণের চেষ্টার দৃশ্য দেখেছেন।

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মতোই রাজধানী ঢাকা কুয়াশায় চাদরে মোড়ানো ছিল। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। গতকাল রাজধানীর মানুষের দিন কেটেছে সূর্যের অপেক্ষায়। সকাল পেরিয়ে দুপুর, অতপর বিকেল। তবুও রাজধানীতে দেখা মেলেনি সূর্যের। প্রতিদিনের ঝলমলে রোদের আলোয় ধুলো-ধোঁয়ার কালো রংয়ের পরিবর্তে সাদা কুয়াশায় ঢেকে পড়েছিল রাজধানীর আকাশ। একইসঙ্গে গত কয়েকদিন সাধারণ পোশাকে সবাই বাইরে বেরুলেও একদিনের শীতেই পাল্টে গেছে রাজধানীর সেই দৃশ্য। গরম পোশাক আর কর্মস্থলে চায়ের কাপের উঞ্চতায় এখন ওম খুঁজতে চেষ্টা করেছে শীতের অপেক্ষায় থাকা শীত প্রিয় মানুষগুলো।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই রাজধানীবাসী কর্মস্থলে বেরিয়েছেন গায়ে শীতের পোশাক মুড়ে। স্কুলের শিশু থেকে কর্মস্থলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাটিও ঘর ছেড়েছেন সোয়েটার বা জ্যাকেট পরে। চাদর মুড়িয়েছেন কর্মজীবী নারীরা।

জানতে চাইলে ঢাকা বারের সদস্য অ্যাডভোকেট মু. মিজানুর রহমান মিজান বলেন, এটা জানি যে ঢাকাতে বরাবরই শীত নামে হুট করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গ্রামে অনেক আগে শীত এলেও ঢাকাতে শীত পড়ছে আজ দুইদিন। বিশেষত বৃহস্পতিবার বেশি। সারাদিন কুয়াশার কারণে এখনো স‚র্যের আলোও দেখা যায়নি। তাই শীতকে বরণ করতে শীতের পোশাকেই বেরিয়েছি কর্মস্থলে।

গতকাল সকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের কর্মজীবী মানুষকে দেখা গেছে শীতের বাহারি পোশাক পড়ে বের হয়েছেন। ছোট শিশুরা রং-বেরংয়ের সোয়েটার বা জ্যাকেটের সঙ্গে পরেছে জিন্স আর জুতো। মেয়েরা পরেছে সোয়েটার বা হাতের কাজ করা চাদর। ছেলেদের পোশাকের মধ্যে ছিল উলের সোয়েটার, মাফলার, কোর্টসহ প্রভৃতি। বস্তিগুলোতে দেখা গেছে নিম্নআয়ের মানুষগুলো নিজেদের মতো করে শীতের কাপড় পড়ে ঠান্ডা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন।
মূলত সকাল থেকে ঠান্ডা বাতাসের দাপুটে প্রবাহ বেশ খানিকটা মলিন করে রাখে সাধারণ মানুষদের। অনেকে আবার ঠান্ডায় জড়োসড়ো হয়েও পড়েছেন। বিছানা ছেড়েছেন অন্যদিনের তুলনায় দেরি করে।

মতিঝিলে ঠান্ডায় কাপতে থাকা আনোয়ার নামের এক ব্যাংক কর্মচারী শৈত্যপ্রবাহ প্রসঙ্গে বলেন, ঝুপ করেই যেন নেমে এসেছে শীত। ঢাকায় শীতের সময়টা খুব কম হওয়ায় এর জন্য একটা অপেক্ষা থাকে বলতে পারেন। সে অপেক্ষার পালা শেষে শীত যখন এসেছে তখন তাকে আপ্যায়ন না করলে কী চলে! সে তো আমাদের শহরের নতুন অতিথি।

গরম কাপড়ের দোকানে ভিড়
রাজধানীতে হঠাৎ করে শীত ঝাঁকিয়ে বসায় চাদর, সোয়েটার, কম্বল, তোষকসহ গরম কাপড় কেনার ধুম পড়েছে। গুলিস্তান ও মতিঝিলের ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক দিন ধরেই হালকা শীত পড়ার পর গরম কাপড় কেনাবেচা শুরু হয়। গত বুধবার থেকে শৈত্যপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর ফুটপাতে গরম কাপড় বিক্রি বেড়ে গেছে। এ ছাড়াও ছোট-বড় মার্কেট ও শপিংমলে কম্বল, জ্যাকেট, সোয়েটার, কার্ডিগান, শাল, হাতমোজা ও কানটুপিসহ বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় দোকানিরা বেশ খুশি।

গতকাল রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ি, বায়তুল মোকাররম, বঙ্গবাজার, পল্টন, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেইটের পাইকারি ও খুচরা কাপড়ের বাজার ঘুরে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে। টিকাটুলির রাজধানী মার্কেট, গুলিস্তানের বিভিন্ন বিপণীবিতান ও ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে নানা শীতের কাপড়। নারী-পুরুষ ও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা দামের পর্যন্ত।

গুলিস্তান স্টেডিয়ামের বিপরীত পার্শে ফুটপাতে কয়েকজন শীতের চাদর সাজিয়ে বসেছেন। সেখানে নানা বয়সের নারী-পুরুষ দোকানে ভিড় জমিয়েছেন শীতের পোষাক কেনার জন্য। প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরিজীবী শারমিন আক্তার নামে একজন ক্রেতা বলেন, শীত নিবারণে নারী কিংবা পুরুষ সকলের সঙ্গেই শাল বা চাদর মানিয়ে যায়। আর আমরা শীতে যতই অন্য পোশাক পরি না কেন চাদর না জড়ালে যেমন শীত শীত ভাব মনে হয় না, তেমনি শীত মানতেও চায় না । তাই এখানে এসেছি চাদর কিনতে। ফুটপাতের দোকান বলে দামে কিছুটা কমে পাওয়া যাচ্ছে। ছেলেদের হুডি নিয়ে বসেছেন আরিফ নামে আরেকজন। তিনি বলেন, শীত বাড়ায় ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে, তাই বেচাবিক্রি ভাল। হুডি ৩০০ টাকা থেকে ৮শ টাকায় বিক্রি করছেন।

পাইকারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত বঙ্গবাজারে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় কম্বলসহ গরম কাপড়ের প্রায় প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। অন্য সময় ক্রেতা দেখলেই ডাকাডাকি করে বিক্রেতারা। তবে বৃহস্পতিবার ক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের ডাকাডাকি করতে দেখা যায়নি। গরমের কাপড়ও কম দামাদামিতেই বিক্রি হতে দেখা যায়। তাছাড়া মার্কেটের বেশির ভাগ দোকানে পাইকারি ভাবে কাপড় বিক্রি হয়। বিক্রেতারা জানান, ঢাকার মানুষ যেমন গরম কাপড় কিনছেন তেমনি সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা বঙ্গবাজারে এসেছেন গরম কাপড় কিনতে। শীতের কাপড় বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে আবদুস সালাম নামের এক পাইকারি বিক্রেতা জানান, এবার সিজনের গরমের কাপড় বিক্রি দিন দশেক আগে শুরু হয়েছে। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় বিক্রি বেড়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর