রূপের রাণী খাগড়াছড়ি

বাঙালী কণবঠ ডেস্কঃ রূপের রাণী খাগড়াছড়ি। চার পাশে বিছিয়ে রাখা শুভ্র মেঘের চাদরের নিচে রয়েছে সবুজ বনরাজিতে ঘেরা ঢেউ খেলানো অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়। তার মাঝ দিয়ে আঁকা বাকা হয়ে সর্পিল রাস্তা চলে গেছে দিগন্ত জুড়ে। পাহাড়ের বুক চিরে আপন মনে বয়ে চলা নাম না জানা নদ-নদী ও ঝর্ণাধারা যে কোনো ভ্রমণ পিপাসুদের মন কাড়তে সক্ষম।

ঢেউ খেলানো পাহাড়ের দেয়াল, বিভিন্ন রঙের পাহাড়ি ফুল, মেঘ-সূর্যের লুকোচুরি আর পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘের ভেলা আর বুক ভেদ করে উঠা প‚র্ণিমার চাঁদ দেখতে আপনাদের আসেতেই হবে এ জনপদে।

খাগড়াছড়ির ম‚ল আর্কষণ আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। এখানে আছে গা ছমছম করা অনুভ‚তির রহস্যময় অন্ধকার সূড়ঙ্গ (গুহা), আছে ওয়াচ টাওয়ার, সুউচ্চ পাহাড়ের উপর আলুটিলা তারেং। তারেং থেকে পাখির চোখে দেখা যায় পুরো খাগড়াছড়ি শহর। যা আপনাকে মুহূর্তেই নিয়ে যাবে অন্য এক ভ‚বনে।
এছাড়াও এ জেলায় আছে পাহাড়ের উপর দেবতা পুকুর (স্থানীয় ভাষায় মাতাই পুখুরি), রিছাং ঝর্ণা, জেলা পরিষদ পার্ক, হর্টি কালচার পার্ক, পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, তৈদু ছড়া ঝর্ণা, হাজাছড়া ঝর্ণা, খাগড়াছড়ি শাহী জামে মসজিদ, দীঘিনালার বন বিহার, শতায়ু বটগাছ, মহালছড়ি হ্রদ, পানছড়ি অরণ্য কুটিরসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী স¤প্রদায়ের বর্ণিল সংস্কৃতির জীবন যাত্রা। এতসব রহস্যময় সৌন্দর্য দেখলে মনে হবে এ যেন এক রূপ গল্পের রাণী ।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র ও তারেং: অপ‚র্ব সৌন্দর্য্যে ভরপুর দর্শনীয় স্থান খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। এখান থেকে পুরো খাগড়াছড়ি শহরটাকে দেখা যায় পাখির চোখে। এ জায়গায় দাঁড়িয়ে দিগন্তে তাকালে মনে হবে যেন আকাশ পাহাড়ের গায়ে মিশে গেছে। এখানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান হচ্ছে রহস্যময় স‚ড়ঙ্গ। ঘুটঘুটে এই অন্ধকার গুহার ভেতরে প্রবাহিত পানি পা ধুয়ে দেয় ঘুরতে আসা পর্যটকদের। গুহার প্রবেশ পথেই ১০ টাকা করে পাওয়া যায় মশাল। এ মশাল নিয়েই ঢুকতে হয় স‚ড়ঙ্গে।

রিছাং ঝর্ণা : পাহাড়ের পাদদেশে প্রকৃতির গড়া এই ঝর্ণার পানি অঝোর ধারায় ঝরছে। এ ঝর্ণাটিকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরতে ও পিকনিকে আসেন পর্যটকরা।

জেলা পরিষদ পার্ক : শহরের খুব কাছাকাছি জিরো মাইল সংলগ্ন এই পার্ক তৈরি হয়েছে। এ পার্কের বিশেষ আকর্ষণ কৃত্রিম ঝুলন্ত সেতু। শহরের কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিদিনই পর্যটক ভীড় জমায় এ পার্কে। এখানে রয়েছে বিশেষ সুবিধার রেস্ট হাউজ।

ঠান্ডা ছড়া : খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণার উল্টো দিকে খাগড়াছড়ি আদর্শ বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে ৫ মিনিট হেঁটে গেলে দেখা যাবে একটি পাহাড়ী ছোট নদী। হাঁটু পানির এই নদী ধরে প‚র্ব দিকে আরও ৫ মিনিট হাঁটলে হাতের ডান দিকে পাহাড় থেকে আসা ছোট ছড়াটিকে দেখতে অনেকটা ড্রেনের মতো মনে হয়। দুই দিকে পাহাড় মাঝখানে ছিকন ছড়া, উপরে নানা জাতের গাছের ছাউনি সব মিলিয়ে একটি সুড়ঙ্গ পথের মতো। ধীর গতিতে পা টিপে টিপে ছড়ার ভিতর ঢুকতে হবে। ছড়ার শেষ মাথায় পৌঁছতে কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা লাগবে। পুরো ছড়াটি দেখতে হলে সকালেই এই স্পটটিতে পৌঁছতে হবে এবং সঙ্গে দুপুরের খাবার সঙ্গে নিতে হবে। ছড়াটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো গরমের দিনে এর পানি ফ্রিজের মতো ঠান্ডা থাকে। তাইএর নামকরণ করা হয়েছে ঠান্ডা ছড়া।

তৈদু ছাড়া ঝর্ণা : খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তৈদুছড়া ঝর্ণা। এ ঝর্ণাকে ঘিরে পাশে রয়েছে আরো ৩টি ছোট ঝর্ণা এবং ২টি মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত।

পানছড়ি অরণ্য কুটির : দৃষ্টিনন্দন এই বৗদ্ধমুর্তি দেখতে প্রতিদিন দেশি বিদেশি পর্যটকরা এখানে আসেন। যেতেই চোখে রাবার ড্যাম। যা এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নতুন সংযোজন।

বিডিআরের জন্মভ‚মি রামগড় : রামগড়কে বলা হয় বিডিআরের জন্মভ‚মি। স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই রামগড়ে দেখা মিলবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বিভক্তকারী ফেনী নদী। রয়েছে বেশকটি মুল্যবান ভাস্কর্য। রয়েছে কৃত্রিম লেক, ঝুলন্ত সেতু, বোটানিক্যাল গার্ডেন। আছে সীমান্তের গা ঘেঁষা দুই ধারে চা বাগান।

দুই ও তিন টিলা : প্রকৃতির এক অপ‚র্ব বিস্ময় এই দুই টিলা ও তিন টিলা। এই টিলার অচেনা দৃশ্য যেন ক্যানভাসের ওপর কোন বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর তুলির আঁচড়।

হাতির মাথা আকৃতির পাহাড় : প্রকৃতির আরও এক রহস্য হাতির মাথা আকৃতির পাহাড়। কয়েকটি ছোট ছোট পাহাড় পার হয়ে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট উচ্চতার এই পাহাড়টিকে দেখতে হয় লোহার সিঁড়ি বেয়ে। এই সিঁড়িতে ওঠা মানে হাতির শুড়েঁর উপরে ওঠা আর সামনে চলা মানে শুড়ঁ বেয়ে হাতির মাথায় অর্থাৎ পাহাড়ের মাথায় ওঠা।

আবাসন ব্যবস্থা : খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের থাকার জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি পর্যটন মোটেল রয়েছে। তাছাড়া মোটেলের সামনেই রয়েছে আনসারের নিয়ন্ত্রিত হেরিটেজ পার্ক। পর্যটকদের সময় কাটানোর আরেকটি মনোমুগ্ধকর জায়গা। পর্যটকদের থাকার জন্যে জেলা শহরে রয়েছে হোটেল ন‚র, অরণ্য বিলাস, ইকোছড়ি ইনসহ বেশকটি আধুনিক হোটেল। জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য রয়েছে পিক আপ, চাঁদের গাড়ি (জীপ গাড়ি), সিএনজি।

প্রকৃতি ও প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোকে সমৃদ্ধ করে গড়ে উঠতে পারে বিশেষ অর্থনৈতিক পর্যটন জোন। এতে করে এখানকার অধিবাসিদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের পাশাপাশি সরকার উদ্যোগ নিলে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন শিল্প। আর এ শিল্পকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারেন সরকার। এজন্য দরকার সকলের সহযোগিতা।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর