ইভিএমে অনাস্থা, তবু শেষ পর্যন্ত থাকতে চায় বিএনপি

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ঢাকার দুই সিটি করপোরেন নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণে সরাসরি ‘অনাস্থা’ জানিয়েছে বিএনপি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে একাধিকার বৈঠকে, ভোটের প্রচারণায় এবং বক্তব্য-বিবৃতিতে বিএনপি নেতারা ইভিএমের বিরোধিতা করছেন। বুধবারও বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে গিয়ে ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, ইভিএমে আস্থা না থাকলেও এবার শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাড়ে চার ঘণ্টার মাথায় ভোট থেকে সরে দাঁড়ালেও এবার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকতে চায় দলটি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রয়োজনে ভোটের তারিখ পিছিয়ে হলেও ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করে ব্যালটে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। 

বুধবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (এ্যাব)-এর উদ্যোগে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ইভিএমের কারিগরি অপব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনী ফলাফল কারচুপির সম্ভাব্য সুযোগ’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ দাবি জানান। ইভিএমের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসুন, আজকে সবাই জনগণের কাছে এ কথা বলি যে, তারা অত্যন্ত জোরে তাদের ভয়েস, তাদের কণ্ঠকে সোচ্চার করুন যে, ‘আমরা ইভিএম মানি না। ইভিএম কখনোই জনগণের সঠিক রায়ের প্রতিফলন ঘটাবে না। আমরা এই ইভিএম প্রত্যাখ্যান করছি।’

ইভিএম পদ্ধতির বিরোধিতার কারণ ব্যাখ্যা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, মেশিন ব্যবহূত হয় মানুষের দ্বারা। মেশিনের পেছনে কারা থাকবেন সেটা একটা জরুরি প্রশ্ন। যেহেতু এই মেশিনের পেছনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন আছে এবং এই সরকার রয়েছে, যারা পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিচালনা করছে, তাদের ওপরে মানুষের কোনো আস্থা নেই। এবার সিটি নির্বাচনে আমরা প্রথম থেকেই ইভিএমের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছি।

বিএনপির একাধিক নেতা ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ইভিএমের বিরোধিতা করলেও এবার ভোট বর্জনের কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই তাদের। বরং ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের ভোটের চিত্র এবার মাথায় রাখা হয়েছে। কারণ, সেই ভোট মাঝপথে বর্জন করলেও এবং চূড়ান্ত ফলে হেরে গেলেও সাড়ে চার ঘণ্টাতেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে বিএনপি সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থী উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়েছিলেন। এই নেতারা জানান, এবার তারা হাল ছেড়ে দিতে চান না। কেন্দ্র থেকে স্থানীয় পর্যায়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ভোটে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনিসুল হক ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। আর সাড়ে চার ঘণ্টা ভোটে থেকেই উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল পেয়েছিলেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট, যা ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দক্ষিণে আওয়ামী লীগের সাঈদ খোকন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ ভোট পেয়ে মেয়র হন, আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মির্জা আব্বাস পেয়েছিলেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১ ভোট।

গত কয়েক বছরে বিএনপি বেশকিছু নির্বাচন বর্জন করেছে, আবার কিছু নির্বাচনে অংশও নিয়েছে। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর সে বছরই উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ও শরিক দল অংশ নেয় এবং তাদের অনেক প্রার্থী জয়ী হন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানায় বিএনপি। গতবছর উপজেলা নির্বাচনেও দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থী দেয়নি দলটি। এবার সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল, তাই তারা নির্বাচন করছেন।

ইসির প্রতি বারবার অনাস্থার কথা বলেও বিএনপির সিটি ভোটে অংশগ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, তা প্রমাণ করতেই বিএনপি বারবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। একটা কথা খুব স্পষ্ট, আমরা আন্দোলনের মধ্যেই রয়েছি। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি এবং শেষ পর্যন্ত আমরা লড়াইয়ে থাকব।’

বিএনপির মতো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকেও ইভিএমের আনুষ্ঠানিক বিরোধিতা করা হয়েছে। ইভিএমকে ‘নিঃশব্দে ভোট চুরির জঘন্য এক পদ্ধতি’ আখ্যায়িত করে ব্যালটে সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থা করতে ঐক্যফ্রন্টও দাবি তুলেছে। ফ্রন্টের মুখপাত্র ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ইভিএমে ব্যবহার হওয়া অডিট কার্ড, এসডি কার্ড, কন্ট্রোল ইউনিট সবই কর্তৃপক্ষের হাতে থাকবে এবং তারাই নিয়ন্ত্রণ করবে। ভোটাররা কোন প্রতীকে ভোট দিচ্ছেন, সেটির কোনো প্রমাণ না থাকায় এর বিরুদ্ধে মামলাও করা যাবে না। তাছাড়া বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে ইভিএম চালুর পর স্থগিত করা হয়েছে।

ইভিএম প্রশ্নে দল ও ফ্রন্টের সঙ্গে সহমত পোষণ করে ঢাকা উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ইত্তেফাককে বলেন, ‘সরে যাওয়ার জন্য তো আমরা মাঠে নামিনি, ভোটে আছি এবং থাকব।’ ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনও বললেন, শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার লক্ষ্য নিয়েই তিনি মাঠে নেমেছেন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর