আমরা ভালোবাসার চাষ করি

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ গ্রামের আঁকাবাঁকা সরু পথ ঘেঁষে অসংখ্য গোলাপের বাগান। যতদূর চোখ যায় শুধু টকটকে লাল গোলাপ। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ গিয়েছিলেন চোখজুড়ানো এ দৃশ্য উপভোগ করতে সাদুল্লাপুরের গোলাপ গ্রামে। সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে তুরাগ নদীর তীরে এই গ্রাম।

বন্ধুদের কাছ থেকে এ গ্রামের অনেক গল্প শুনতাম। কিন্তু কখনো যাওয়া হয়নি। ক্যাম্পাসে বেশির ভাগ সময় ক্লাসের চাপ থাকে। একদিন সকালে আমরা ছয়বন্ধু ক্লাসের জন্য অপেক্ষা করছি আর খুব জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছি। কখন যে দুপুর হয়ে গেছে টের পাইনি। বন্ধুরা থাকলে যা হয়। শুনলাম আজ ক্লাস হবে না। তাই হঠাৎ মাথায় আসলো সবাই মিলে গোলাপ গ্রাম যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ। বেরিয়ে পড়লাম।

গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬ কিলোমিটারের পথ গোলাপ গ্রাম। ২২ মাইল থেকে সাভার স্ট্যান্ড নেমে রিকশা বা অটোতে সহজেই এ গ্রামে যাওয়া যায়। এই গ্রামের আগেই ছোট্ট একটা বাজার। তাই গোলাপের রাজ্যে হারানোর আগেই দুপুরের খাবারটা হাতের কাছে হোটেলে খেয়ে নিলাম আমরা। ভরপেট খাবার ও এক কাপ চা শেষে আমাদের যাত্রা শুরু হয় গ্রামের দিকে।

প্রথম চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি। গ্রাম যেন রঙ-পেন্সিলে আঁকা ছবি। সবাই মেঠো পথ ধরে হাঁটছি, আর দুচোখ ভরে অবলোকন করছি। দুপাশ পুরোটাই গোলাপের বাগানে ঘেরা। কিছুটা কাছে গেলে মনে হয় লাল টকটকে গোলাপেরা যেন তাদেরই রাজ্যে খেলায় মশগুল।

গ্রামের ৯০ ভাগ স্থানীয়দের পেষা গোলাপ চাষ। যা পুরো গ্রাম জুড়ে সারা বছর হয়। এখানে গোলাপ ছাড়াও জারবেরা, গ্লাডিওলাস, গাদা, রজনীগন্ধা ফুলসহ আরো অনেক জাতের ফুল চাষ হয়। ঢাকার বেশির ভাগ ফুলের চাহিদা মেটানো হয় এখান থেকেই।
বাগানে কাজ করছিলেন কয়েকজন চাষি। সবার মুখেই মিষ্টি হাসি। এ হাসি আনন্দের, এ হাসি ভালো লাগার। তাদের মধ্যে একজন ফুলের মালা তৈরি করছেন। তিনি বলেন, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি গোলাপের মৌসুম। শীতের সময় বাগানগুলো অনেক সুন্দর লাগে। প্রতিটি ফুল দুই থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রি হয়। বাগানগুলোতে সকালে ও বিকেলে পর্যটনের ভিড় বেশি থাকে।

তিনি আরো বলেন, এ সময়টাতে যতটা ফুল বাগানে হয়, সারা বছর ততটা হয় না। অন্য সময় ইচ্ছা করলে অন্য কিছুও চাষ করতে পারি। কিন্তু তখন তো কেউ আমাদের দেখতে আসবে না। এখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন গোলাপ দেখতে, আর যাওয়ার সময় সবাই আমাদের মন ভরে ভালোবাসা দিয়ে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা ভালোবাসার চাষ করছি।

স্থানীয় এক ফুল চাষি বলেন, এক একটি গোলাপ গাছের বয়স প্রায় ২০ বছর। পঞ্চাশ বছর ধরে গোলাপ চাষ হয় এই গ্রামে। এ গ্রামে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য ফুল কেনার সুযোগ রয়েছে।

গোলাপের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে পড়ন্ত বিকেল। নিঝুম শান্ত এ গ্রামে ফুটন্ত গোলাপ দেখতে পাওয়া যায় বিকেলেই। কারণ, এসময় থেকেই ফুল তোলা শুরু হয়। গোছা বেঁধে প্রস্তুত করা হয় হাটের জন্য।

সাদুল্লাপুর ও এর আশেপাশের গ্রামে আছে তিনটি ফুলের বাগান। সেখানকার শ্যামপুরে প্রতিদিনই বসে গোলাপের হাঁট। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় ফুল ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। রাতভর চলে জমজমাট বেচাকেনা। স্বপ্নের এ গ্রাম থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে ফেলে আসা স্মৃতিগুলো বারবার তাড়া করছে। অসাধারণ কিছু ভালো লাগা নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরতে পারাটাই আনন্দের ছিল।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর