একতাই বল : তুমি বাঁচো এবং গোটা উম্মাকে বাঁচাও

বাঙালী কন্ঠ ডেস্কঃ সমাপ্ত হল বিশ্ব ইজতেমা। মুমিনরা বারবার ছুটে আসেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ বিশ্ব ইজতেমাতে টঙ্গীর তুরাগ তীরে।

সাধারণ জনগণ বড়দের মতো অতশত বিভেদ বোঝে না। চায় একটি শান্তির সমাজ গড়তে। মানুষ মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়তে এবং সঠিক পথে চলতে। তিন দিনব্যাপী শুনতে এসেছেন এ হেদায়াতি বয়ানে যাদের সিংহভাগ গ্রামাঞ্চলের সরলমনা মানুষ।

এ বয়ানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্রষ্টার পথ ধর এবং সৃষ্টিকে পথ দেখাও। নিজেকে সংশোধন কর, অন্যকে এ পথে আহ্বান কর। নবীওয়ালা এ কাজ নবীওয়ালাদের আদর্শ দিয়েই দ্যুতি ছড়ায়। এ কাজ মানুষকে শেখায় গিবত করো না, পরনিন্দা করো না, হিংসা আর অসদাচরণ করো না, এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে দেখে ভ্রু কুঁচকায়ো না।

আফ্সোস! পরিবেশ এখন সম্পূর্ণ বিপরীত অথচ সবাই এক কালেমার প্রতি বিশ্বাসী, তাহলে কেন দাওয়াতি কাজে বিভেদ হবে? কেন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মসজিদে যাওয়ার পথে সালামের পরিবর্তে একজন আরেকজনকে দেখে হৃদয়ে অভক্তি জন্ম দেবে?

কোরআন তো নিজেকে একা বাঁচতে বলেনি, পরিবারকে নিয়ে বাঁচতে বলেছে, যেমন- কোরআন বলেছে, হে মুমিনগণ! তোমরা বাঁচ এবং তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও (সূরা আত্-তাহরিম, আয়াত ৬)।

কোরআন পরিবারের কথা বলেছে, এখন বোঝার বিষয় হল, পরিবার কারা? একজন দায়ী যখন তার নিজের ঘরে প্রবেশ করে, তখন ঘরের সবাই তার পরিবার। যখন সে ঘর থেকে বের হয়, তখন প্রতিবেশী তার পরিবার। যখন সমাজে প্রবেশ করে, তখন সমাজের সব মানুষ তার পরিবার। যখন রাষ্ট্রের কোনো পদে প্রবেশ করে, তখন রাষ্ট্রের সব জনগণ তার পরিবার।

আরেকজন আলেম একেকজন দায়ী। এবার আয়াতের সারমর্ম হল, তুমি বাঁচ এবং গোটা উম্মতকে বাঁচাও।

মাওলানা সা’দ সাহেবের মন্তব্য নিয়ে ঢালাওভাবে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতাকে কিংবা তাবলিগ জামাতকে বিচ্ছিন্ন করা কি উচিত? একজনের মন্তব্যের কারণে কেন পুরো জামাতকে বিতর্কিত করব।

তাহলে তো তাবলিগ প্রচারে গতি কমে যাবে (যা বিভিন্ন পরিসংখ্যানে জানা গেছে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মেহমানদের উপস্থিতি একেবারে স্বল্প, যা ভবিষ্যতে দাঁড়াবে শূন্যের কোঠায় এবং এটিই বাস্তবতা) ও ইসলামের ভিত দুর্বল হয়ে পড়বে, তখন ষড়যন্ত্রকারীরা আরও বেশি সুযোগ পেয়ে বসবে। তাই ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।

আর ঐক্যবদ্ধতাই ভিতকে মজবুত করে, কোরআন বলেছে, তোমরা সবাই একসঙ্গে আল্লাহ্র রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না (সূরা আল ইমরান, আয়াত ১০৩)। এক সুতায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং বিচ্ছিন্ন না হওয়া দুটোই কোরআনের নির্দেশ, আলেম সমাজ এখন তাবলিগের যতটা গুরুত্ব বুঝেছে ইতিপূর্বে ততটা গুরুত্ব বোঝেনি।

এখন ঐক্যবদ্ধ না হলে ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধতার গুরুত্ব বুঝে আসবে, তখন শুধু আফ্সোস করা যাবে ক্ষতি করা যাবে না। যার খেসারত ইসলামের ক্ষতি ছাড়া আর কী? কারণ, আলেম সমাজ বসে থাকবে কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে থাকবে না।

আমার আশঙ্কা হচ্ছে, বাংলাদেশের বাজারে আগামী ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা পর্যন্ত কথার প্রতিযোগিতা চলবে, কার পর্বে লোক বেশি সমাগম হয়েছে। প্রথম পর্বের অনুসারীরা বলবে আমরা জয়ী হয়েছি। কারণ, আমাদের পর্বে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। দ্বিতীয় পর্বের অনুসারীরা হেরে গেছে, ওরা বাতিলপন্থী, তাই ওদের পর্বে মানুষের সমাগম কম হয়েছে ইত্যাদি।

আর দ্বিতীয় পর্বের অনুসারীরা বলবে আলেমরা সব মাদ্রাসার ছাত্রদের বাধ্য করেছে ইজতেমায় আসার জন্য, তাই বেশি হয়েছে। নয়তো আমরাই সংখ্যাতে বেশি। পরস্পর কথার যুদ্ধ হবে, একে অপরে কাদা ছোড়াছুড়ি করবে, মাঝখানে লাভবান হবে ষড়যন্ত্রকারীরা।

এই কথাগুলো হয়তো বড়দের অনুসারী, অন্যান্য আলেম ও সাধারণ জনগণ বলবে, আমার আফ্সোস নেই, যেহেতু তারা বড়দের অনুসারী; কিন্তু আফ্সোস, বড় আলেমদের কিংবা মুরব্বিদের নিয়ে কেন তারা একটু ফিকির করেনি, দুই পর্বকে মিলাতে এই বিভেদে ভবিষ্যতে তাবলিগকে আরও খণ্ড খণ্ড করা হবে, (যার পরিণাম জেলায় জেলায় আমির ঘোষণা হবে এবং স্বতন্ত্র দল হবে, যেমন- আলেমদের রাজনৈতিক বহু দল রয়েছে) বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নোংরা চরিত্র ফুটে উঠবে এবং বিদেশি মেহমান বিশ্ব ইজতেমায় আসার ফিকির ছেড়ে দেবে।

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশেও তাবলিগের প্রচার ও প্রসার কমে যাবে। হয়তো সেই দিন বেশি দূরে নয়। একটা জরিপ করা যেতে পারে, বিগত ২০১৭ ও ২০১৮ সালের তাবলিগ প্রচারে জামাত বের হওয়ার সাথী ও সংখ্যা এবং নতুন ২০২০ সালের তাবলিগ প্রচারে জামাত বের হওয়ার সাথী ও সংখ্যা কত হবে, এ জরিপ হয়তো আগামী ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেই বোঝা যাবে তাবলিগের করুণ চিত্র।

(আমি আমার পাড়ায় এখনই বুঝতে পারছি, আগের মতো তাবলিগ জামাত এখন আর পাড়ায় পাড়ায় আসেনি) তাই তাবলিগের এই বিভেদে কারা লাভবান হচ্ছে ভেবে দেখুন! আফ্সোস!! আমরা ছোটরা কোথায় যাব? হে কবি নজরুল! তোমার কবিতা মনে পড়ে, কে আছো জোয়ান, হও আগুআন, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ, এতুফান ভারি। দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

এখন কীভাবে, কোন ফিকিরে আবার তাবলিগের সেই সোনালি দিন ফিরিয়ে আনা যাবে? সাথী ভাই সাথী ভাই মিলে কোলাকুলি করবে, হাত ধরে একসঙ্গে পাড়ায় পাড়ায় যাবে, সেই ফিকির না করে যদি ঢালাওভাবে বলে বেড়াই, সা’দপন্থীরা গোমরাহ; এতে কি করে ঐক্যবদ্ধ হবে তাবলিগ? দ্বিতীয় পর্বেও তো লাখ লাখ লোকের সমাগম হয়েছে বলুন! সবাই কি গোমরাহ?

আহ! আমরা একপক্ষ আরেক পক্ষকে গোমরাহী বলে আনন্দ পাই অথচ আমরা সবাই দায়ী।আমি বুঝতে পারছি না! ক্ষমতার দ্বন্দ্বে গোটা বিশ্বে তাবলিগ বিভক্ত হবে কেন? ব্যক্তি ব্যক্তির দ্বন্দ্বে কেন এক সাথী আরেক সাথী ভাইকে দেখে ভ্রু কুঁচকাবে?

সরলমনা তাবলিগ প্রেমিকরা তো অনেকে জানেই না, এ বিভক্তির কারণ কী? বলুন, এরাও কি গোমরাহী? তাহলে কেন আমরা বলে বেড়াই সা’দপন্থীরা গোমরাহী? অথচ সবাই ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের ওপর বিশ্বাসী। হে আমাদের তাবলিগের ছেরেতাজ ওলামাগণ! ভেবে দেখুন, এ বিভক্তিতে তাবলিগ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।

যুগান্তরের সাংবাদিকরা কি আলেম সমাজ? তারা আলেম না হয়েও দেশ ও ইসলাম ভালোবাসে বিধায় বারবার পত্রিকায় মিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা ও আবেদন করে যাচ্ছে, হে প্রভু! সফলতা দাও! এখন আমাদের এ চেষ্টা তুমি কবুল করে নাও।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর