ঢাকা , রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইটভাটায় পুড়ছে ফসল

ইটভাটার নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় চিরিরবন্দর উপজেলায় উঠতি বোরো ধান, কলাবাগান, ভুট্টা, ফলদ গাছের ক্ষতি হচ্ছে। এতে ভাটা এলাকার কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনাটি উপজেলার ঘণ্টাঘর বাজারের পূর্বপাশে সাতনালা ইউনিয়নের জোত সাতনালা গ্রামের শিববাড়িতে ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন করেছেন।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর  উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১৬ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমিতে উফশী এবং ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৮৪৯ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বিষফোঁড় হয়ে দাঁড়ায় ইটভাটার নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া। সরজমিন ওই ভাটাসংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আশপাশের ফসলের জমিতে কৃষকেরা কেউ ধান কাটছেন, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত ধান, ভুট্টা ও কলাবাগান নিয়ে আক্ষেপ করছেন। গত  ৪ঠা মে বৃহস্পতিবার বিকালে এসএনডি ব্রিকসের ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশ এলাকা ছেয়ে যায়। কৃষকেরা প্রথমদিকে বুঝতে পারেননিয, এ নির্গত ধোঁয়ার কারণেই তাদের ফসলের এত বড় ক্ষতি হবে। গত ক’দিন ধরে কৃষকরা ইটভাটার নির্গত ধোঁয়ায় ক্ষেতের ক্ষতি বুঝতে পারেন। এ ইটভাটার আশপাশের কলা, ভুট্টা, ফলদগাছসহ ধানক্ষেত আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেতে থাকে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তমিজউদ্দিন (৪২) জানান, ‘তাঁর আড়াই বিঘা জমিতে ১ হাজার ২০০টি কলাগাছ ছিল। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় তার কলাবাগানের সব গাছ শুকিয়ে মরে যেতে বসেছে।’ কৃষক জিয়ারুল ইসলাম (৩০) জানান, ‘ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আমার ১ বিঘা জমির উঠতি বোরোধান, ৩ বিঘা জমির ভুট্টাক্ষেত ও ২০০ কলাগাছ নষ্ট হয়েছে।’ কৃষক খোকা মোহাম্মদ বলেন, ‘জমি চাষাবাদ করেই আমাদের সংসার চলে। ধান বিক্রি করেই দায়দেনা পরিশোধ করি। কিন্তু ইটভাটার ধোঁয়ায় আমার আড়াই বিঘা জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উঠতি ফসল ঘরে তুলতে পারিনি।’ অনেক কৃষক জানান, আমাদের এলাকার আম, নারিকেল গাছের ক্ষতি হয়েছে। আমগুলো গাছ থেকে ঝরে পড়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও মফিজউদ্দিনের (৬০) দেড় বিঘা জমির ৯০০ কলাগাছ, রেয়াজুল ইসলামের (৩৫) ৭০০-৮০০ কলাগাছ, কেরামত আলীর (৫৫) ২ বিঘা জমির ১ হাজার ৫০০ কলাগাছ, জিকরুল হকের ২০০, ভুলু মিয়ার ২০০, আকতার মাস্টারের সাড়ে ৩ বিঘা জমির ধানসহ অনেক কৃষকের ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আরো জানান, কলাগাছের বয়স অন্তত ৯ মাস হয়েছে। এর মধ্যে অনেক কলাগাছে মোচাও বের হয়েছে। আর মাত্র ৩ মাস পরেই কলাগুলো বাজারজাত করা যেত। এতে বিভিন্ন বাগানের অন্তত ১০ হাজার কলা ক্ষতির স্বীকার হয়েছে। চাষাবাদকৃত ফসলের এমন ক্ষতি হওয়ায় কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। কৃষকরা বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় অন্তত ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তারা পুড়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতিপূরণ দাবি করে জনবসতি এলাকায় ইটভাটা বন্ধের দাবি জানান। সাতনালা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের জমির পরিমাণ জানাতে পারেননি। এসএনডি ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী এবং ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর আমাকে ভাটা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স দিয়েছে। যদি আমার ভাটার ধোঁয়ার কারণে কৃষকের ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে আমি তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেব। ক্ষতির বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান জানান, প্রকৃত ক্ষতি নিরুপণ করা যায়নি। তবে ইটভাটার কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ভাটা বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা যাতে ক্ষতিপূরণ পায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. গোলাম রব্বানী বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ইটভাটায় পুড়ছে ফসল

আপডেট টাইম : ১১:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুন ২০১৭

ইটভাটার নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় চিরিরবন্দর উপজেলায় উঠতি বোরো ধান, কলাবাগান, ভুট্টা, ফলদ গাছের ক্ষতি হচ্ছে। এতে ভাটা এলাকার কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনাটি উপজেলার ঘণ্টাঘর বাজারের পূর্বপাশে সাতনালা ইউনিয়নের জোত সাতনালা গ্রামের শিববাড়িতে ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট আবেদন করেছেন।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর  উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১৬ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমিতে উফশী এবং ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৮৪৯ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বিষফোঁড় হয়ে দাঁড়ায় ইটভাটার নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া। সরজমিন ওই ভাটাসংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আশপাশের ফসলের জমিতে কৃষকেরা কেউ ধান কাটছেন, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত ধান, ভুট্টা ও কলাবাগান নিয়ে আক্ষেপ করছেন। গত  ৪ঠা মে বৃহস্পতিবার বিকালে এসএনডি ব্রিকসের ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশ এলাকা ছেয়ে যায়। কৃষকেরা প্রথমদিকে বুঝতে পারেননিয, এ নির্গত ধোঁয়ার কারণেই তাদের ফসলের এত বড় ক্ষতি হবে। গত ক’দিন ধরে কৃষকরা ইটভাটার নির্গত ধোঁয়ায় ক্ষেতের ক্ষতি বুঝতে পারেন। এ ইটভাটার আশপাশের কলা, ভুট্টা, ফলদগাছসহ ধানক্ষেত আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেতে থাকে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তমিজউদ্দিন (৪২) জানান, ‘তাঁর আড়াই বিঘা জমিতে ১ হাজার ২০০টি কলাগাছ ছিল। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় তার কলাবাগানের সব গাছ শুকিয়ে মরে যেতে বসেছে।’ কৃষক জিয়ারুল ইসলাম (৩০) জানান, ‘ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আমার ১ বিঘা জমির উঠতি বোরোধান, ৩ বিঘা জমির ভুট্টাক্ষেত ও ২০০ কলাগাছ নষ্ট হয়েছে।’ কৃষক খোকা মোহাম্মদ বলেন, ‘জমি চাষাবাদ করেই আমাদের সংসার চলে। ধান বিক্রি করেই দায়দেনা পরিশোধ করি। কিন্তু ইটভাটার ধোঁয়ায় আমার আড়াই বিঘা জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উঠতি ফসল ঘরে তুলতে পারিনি।’ অনেক কৃষক জানান, আমাদের এলাকার আম, নারিকেল গাছের ক্ষতি হয়েছে। আমগুলো গাছ থেকে ঝরে পড়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও মফিজউদ্দিনের (৬০) দেড় বিঘা জমির ৯০০ কলাগাছ, রেয়াজুল ইসলামের (৩৫) ৭০০-৮০০ কলাগাছ, কেরামত আলীর (৫৫) ২ বিঘা জমির ১ হাজার ৫০০ কলাগাছ, জিকরুল হকের ২০০, ভুলু মিয়ার ২০০, আকতার মাস্টারের সাড়ে ৩ বিঘা জমির ধানসহ অনেক কৃষকের ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আরো জানান, কলাগাছের বয়স অন্তত ৯ মাস হয়েছে। এর মধ্যে অনেক কলাগাছে মোচাও বের হয়েছে। আর মাত্র ৩ মাস পরেই কলাগুলো বাজারজাত করা যেত। এতে বিভিন্ন বাগানের অন্তত ১০ হাজার কলা ক্ষতির স্বীকার হয়েছে। চাষাবাদকৃত ফসলের এমন ক্ষতি হওয়ায় কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। কৃষকরা বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় অন্তত ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তারা পুড়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতিপূরণ দাবি করে জনবসতি এলাকায় ইটভাটা বন্ধের দাবি জানান। সাতনালা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের জমির পরিমাণ জানাতে পারেননি। এসএনডি ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী এবং ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর আমাকে ভাটা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স দিয়েছে। যদি আমার ভাটার ধোঁয়ার কারণে কৃষকের ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে আমি তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেব। ক্ষতির বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান জানান, প্রকৃত ক্ষতি নিরুপণ করা যায়নি। তবে ইটভাটার কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ভাটা বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা যাতে ক্ষতিপূরণ পায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. গোলাম রব্বানী বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।