ঢাকা , শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বৃষ্টি কবে কমবে, জানাল আবহাওয়া অফিস কর্মীদের বিদেশ পাঠানোর ক্ষেত্রে ৮০ ভাগ সমস্যা দেশ থেকেই তৈরি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কওমি সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের : ধর্ম উপদেষ্টা টাইম ম্যাগাজিনে হিলারি ক্লিনটনের কলামে ড. ইউনূসকে নিয়ে প্রশংসা বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ দেখা যাবে যে চ্যানেলে টিপ-কাণ্ডে তিন বছর পর মামলা কেনিয়ায় চা-বাগান নিয়ে স্থানীয় ও বিদেশি এস্টেটগুলোর দ্বন্দ্ব, ক্ষতির মুখে শিল্প প্রতিদিন একটি কলা খাওয়া কাদের জন্য জরুরি মেটার বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা, আলাদা হতে পারে ইনস্টাগ্রাম-হোয়াটসঅ্যাপ বাজারে কাঁকরোলের কেজি ১৪০, বেগুনের সেঞ্চুরি

খালি নুন থাকে, বাকি সব এক বেলায়ই শেষ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  ত্রাণের অপ্রতুলতা ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবসহ নানা দুর্ভোগে নাকাল হয়ে পড়েছেন কুড়িগ্রামের ৬টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বানভাসিরা। প্রায় ১০/১২ দিন ধরে পানিবন্দি জীবন কাটালেও ত্রাণ সহায়তার অভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন জেলার প্রায় পৌনে দুই লাখ পানিবন্দি মানুষ।  সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ সহায়তা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বানভাসিরা।

শুক্রবার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বন্যা কবলিত কয়েকটি চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায় এখনও ওই সব চরের মানুষ পানিবন্দি।

ত্রাণ পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে জাবাবে মশালের চর গ্রামের জেসমিন  বেগম বলেন,‘যে ত্রাণ দেয় খালি নুন (লবণ) থাহে, বাকি সব এক বেলায়ই শেষ। হের পর কি খামু সে চিন্তা কেটা করবো!’ তিনি আরও জানান তার স্বামী দিন মজুরের কাজ করেন। চারিদিকে পানি আর পানি।  স্বামীর  কাজ না থাকায় তিনি তিন সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

 

নৌকায় বসে কথা হয় জেসমিনের সঙ্গে। জেসমিন জানান, ‘১০/১২ দিন থাইকা পানির মধ্যে আছি। ছেলের বাবার (স্বামীর) কোনও কাজ নাই, কি খাই, বাচ্চাগো কি খাওয়াই! হেই জন্যে বাবার বাড়িতে আইছি।’

প্রায় প্রতিটি বাড়ি ও ঘরে কোমর সমান পানি। সব মানুষের একই অবস্থা। খাটের ওপর খাট দিয়ে কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছে, কেউবা বাড়ির আঙ্গিনায় নৌকা নিয়ে বন্যা মোকাবিলার চেষ্টা করছেন। গবাদি পশু-পাখি আর শিশুদের নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে দুর্গম চরাঞ্চলের এসব পরিবার। দিনমজুর হিসেবে আর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা এসব পরিবার এখন কর্মহীন হয়ে দু’বেলা খাবার জোটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চর গ্রামের কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানেও সরকারি ত্রাণ পৌঁছেছে কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এছাড়া আর কেউ কোনও সাহায্য-সহযোগীতা নিয়ে তাদের কাছে যাননি।

 

একই চরের দিন মজুর আব্দুল মালেক জানান, ‘যে ত্রাণ পাইছি তা দেড় দিনেই শেষ, অহন খালি নুন (লবণ) আছে।’ একই কথা বলেন ওই চরের অধিকাংশ বানভাসি মানুষ।

চর বালাডোবা গ্রামের নাছিমা নামের এক গৃহবধূ জানান, ১০ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে থাকলেও কোনও ত্রাণ তার ভাগ্যে জোটেনি। এমনকি কেউ একটা কলা গাছের ভেলাও দেয়নি, যে তিনি সাহায্যের জন্য কারও কাছে যাবেন। একই চিত্র দেখা গেছে চর বতুয়াতলি গ্রামেও, যেখানে এখনও কোনও সরকারি কিংবা বে-সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর (৭,৮ও ৯ নং ওয়ার্ড) রাবেয়া বেগমের প্রতিনিধি মো. নজরুল ইসলাম জানান,জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দকৃত ত্রাণের মধ্যে ৫ কেজি করে চাল ও এক কেজি চিড়া, হাফ কেজি লবণ ও মোমবাতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় অনেক কম হওয়ায় সবাই সেই ত্রাণ সহায়তা পাননি।

সরকারি হিসেবেই কুড়িগ্রামের ৪২টি ইউনিয়নের পাঁচশতাধিক গ্রামের প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গত ১৪ জুলাই পর্যন্ত এর বিপরীতে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে চারশ’ মেট্রিকটন খাদ্যদ্রব্য, চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং এগারো লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা।

 

এদিকে সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ সহায়তা শুরু হলেও কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা এনজিওর পক্ষ থেকে বানভাসিদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার কোনও খবর পাওয়া যায়নি। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ বানভাসিদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া যায়।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মো. ফেরদৌস খান জানান, ‘এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের যে তথ্য পাওয়া গেছে সরকারি পর্যায়ের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে তাদের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ কেউ ত্রাণ সহায়তা না পেলে তা জেলা প্রশাসনকে অবহিত করার আহ্বান জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক আরও জানান, ‘আমরা আরও চাহিদা পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত আরও পরিবারকে সহায়তা করা সম্ভব হবে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১০ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ফেরিঘাট পয়েন্টে ধরলার পানি ২২ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে এবং তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বৃষ্টি কবে কমবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

খালি নুন থাকে, বাকি সব এক বেলায়ই শেষ

আপডেট টাইম : ০২:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  ত্রাণের অপ্রতুলতা ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবসহ নানা দুর্ভোগে নাকাল হয়ে পড়েছেন কুড়িগ্রামের ৬টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বানভাসিরা। প্রায় ১০/১২ দিন ধরে পানিবন্দি জীবন কাটালেও ত্রাণ সহায়তার অভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন জেলার প্রায় পৌনে দুই লাখ পানিবন্দি মানুষ।  সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ সহায়তা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বানভাসিরা।

শুক্রবার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বন্যা কবলিত কয়েকটি চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায় এখনও ওই সব চরের মানুষ পানিবন্দি।

ত্রাণ পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে জাবাবে মশালের চর গ্রামের জেসমিন  বেগম বলেন,‘যে ত্রাণ দেয় খালি নুন (লবণ) থাহে, বাকি সব এক বেলায়ই শেষ। হের পর কি খামু সে চিন্তা কেটা করবো!’ তিনি আরও জানান তার স্বামী দিন মজুরের কাজ করেন। চারিদিকে পানি আর পানি।  স্বামীর  কাজ না থাকায় তিনি তিন সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

 

নৌকায় বসে কথা হয় জেসমিনের সঙ্গে। জেসমিন জানান, ‘১০/১২ দিন থাইকা পানির মধ্যে আছি। ছেলের বাবার (স্বামীর) কোনও কাজ নাই, কি খাই, বাচ্চাগো কি খাওয়াই! হেই জন্যে বাবার বাড়িতে আইছি।’

প্রায় প্রতিটি বাড়ি ও ঘরে কোমর সমান পানি। সব মানুষের একই অবস্থা। খাটের ওপর খাট দিয়ে কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছে, কেউবা বাড়ির আঙ্গিনায় নৌকা নিয়ে বন্যা মোকাবিলার চেষ্টা করছেন। গবাদি পশু-পাখি আর শিশুদের নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে দুর্গম চরাঞ্চলের এসব পরিবার। দিনমজুর হিসেবে আর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা এসব পরিবার এখন কর্মহীন হয়ে দু’বেলা খাবার জোটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চর গ্রামের কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানেও সরকারি ত্রাণ পৌঁছেছে কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এছাড়া আর কেউ কোনও সাহায্য-সহযোগীতা নিয়ে তাদের কাছে যাননি।

 

একই চরের দিন মজুর আব্দুল মালেক জানান, ‘যে ত্রাণ পাইছি তা দেড় দিনেই শেষ, অহন খালি নুন (লবণ) আছে।’ একই কথা বলেন ওই চরের অধিকাংশ বানভাসি মানুষ।

চর বালাডোবা গ্রামের নাছিমা নামের এক গৃহবধূ জানান, ১০ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে থাকলেও কোনও ত্রাণ তার ভাগ্যে জোটেনি। এমনকি কেউ একটা কলা গাছের ভেলাও দেয়নি, যে তিনি সাহায্যের জন্য কারও কাছে যাবেন। একই চিত্র দেখা গেছে চর বতুয়াতলি গ্রামেও, যেখানে এখনও কোনও সরকারি কিংবা বে-সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর (৭,৮ও ৯ নং ওয়ার্ড) রাবেয়া বেগমের প্রতিনিধি মো. নজরুল ইসলাম জানান,জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দকৃত ত্রাণের মধ্যে ৫ কেজি করে চাল ও এক কেজি চিড়া, হাফ কেজি লবণ ও মোমবাতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় অনেক কম হওয়ায় সবাই সেই ত্রাণ সহায়তা পাননি।

সরকারি হিসেবেই কুড়িগ্রামের ৪২টি ইউনিয়নের পাঁচশতাধিক গ্রামের প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গত ১৪ জুলাই পর্যন্ত এর বিপরীতে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে চারশ’ মেট্রিকটন খাদ্যদ্রব্য, চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং এগারো লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা।

 

এদিকে সরকারি পর্যায়ে ত্রাণ সহায়তা শুরু হলেও কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা এনজিওর পক্ষ থেকে বানভাসিদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার কোনও খবর পাওয়া যায়নি। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ বানভাসিদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া যায়।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মো. ফেরদৌস খান জানান, ‘এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের যে তথ্য পাওয়া গেছে সরকারি পর্যায়ের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে তাদের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ কেউ ত্রাণ সহায়তা না পেলে তা জেলা প্রশাসনকে অবহিত করার আহ্বান জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক আরও জানান, ‘আমরা আরও চাহিদা পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত আরও পরিবারকে সহায়তা করা সম্ভব হবে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১০ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ফেরিঘাট পয়েন্টে ধরলার পানি ২২ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে এবং তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।