বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রেলওয়ের প্রায় ৪০ বিঘা জমি বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘিরে তা দখল করা হচ্ছে। জমিটির অবস্থান ঢাকা-আড়াইহাজার সড়কের পাশে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার তালতলায়। এ নিয়ে এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগে এখানে মদনগঞ্জ-নরসিংদী রেল চলাচল করত। জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ১৯৮৮ সালে রেললাইন তুলে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। এর পর থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নামে-বেনামে রেলওয়ের জায়গা দখল করে।
গত সোমবার দুপুরে তালতলায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে রেলওয়ের জমি টিনের বেড়া দিয়ে দখল করে তিনটি ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা অধ্যাপক রেজাউল করিমের ছোট ভাই বজলুর রহমানের মালিকানাধীন বিআর টেক্সটাইল কম্পোজিট, পারভেজ সাহাজাদা ও রেহানা পারভেজের নামে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, বালু ভরাটের কাজ করছেন জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা হা-মীম শিকদার শিপলু। তাঁর নেতৃত্বে আছে জামপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর নূর, জামপুর ইউনয়ন যুবলীগ নেতা আল-আমিন ওরফে ডিশ আল-আমিন, গোলজার হোসেন; মদনপুরের হাবিবুল্লা মিয়া, মিঠু মিয়া, আলমাছ হোসেন, মোশারফ হোসেন, কারখানার ব্যবস্থাপক রোমান মিয়াসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি শক্তিশালী চক্র। তারা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে ম্যানেজ করে গত শুক্রবার থেকে ভরাট শুরু করেছে। ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাটের জায়গায় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কথিত নেতারা। এ নিয়ে গত রবিবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসী লিখিতভাবে অভিযাগ দিয়েছে। তবে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো মুহূর্তে সংঘর্ষ হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানায়, বিএনপির আমলে বজলুর রহমানের বড় ভাই রেজাউল করিমের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে সাধারণ মানুষের ও সরকারি সম্পদ দখল করা হয়েছে। এবার ইউপি চেয়ারম্যান, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি সরকারি শত কোটি টাকার সম্পদ কম্পানির নামে দখল করছেন।
তালতলা বাজারের ব্যবসায়ী জামান মিয়া বলেন, তিন দিন ধরে সরকারি জমি দখল করে বালু ভরাট করার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আড়াইহাজারগামী অভিলাষ পরিবহনের যাত্রী শহিদ মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাস্তার দুই পাশে টিনের বেড়া দিয়ে জায়গা দখল করে নেওয়ায় প্রতিদিন যানজট হয়। এতে আমাদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ’
বস্তল গ্রামের কৃষক তাহের আলী বলেন, ‘যেভাবে সরকারি জায়গা বাউন্ডারি দিয়ে বালু ভরাট করে দখল করে নিচ্ছে, দেখলে মনে হয় দেশে কোনো সরকার ও প্রশাসন বলে কিছু নাই। ’
একই গ্রামের শুক্কুর আলী বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাই না। সব কিছু দেখেও মুখ বুজে সহ্য করে থাকি। কারণ স্পিনিং কারখানার ব্যবস্থাপক রোমান মিয়া সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে থাকেন। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধ দখল হতে রেলভূমি উদ্ধার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। উচ্ছেদের পর রেলভূমি ফিলিং বা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী রেলওয়ের জমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। পরে ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শাহ মো. ইমদাদুল হক এক প্রজ্ঞাপন জারি করেন। লিখিত প্রজ্ঞাপনে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে রেলভূমিতে বিদ্যমান দখলদার ও স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। এ জন্য রেলওয়ের এস্টেট বিভাগের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা বা বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলো।
এ বিষয়ে জামপুর ইউপি চেয়ারম্যান হা-মীম শিকদার শিপলু, যুবলীগ নেতা আল-আমিন, ছাত্রলীগ নেতা আব্দুর নূর বলেন, ‘আমরা শুধু বালু ভরাটের কাজের দায়িত্ব নিয়েছি। রেলওয়ের জমির বিষয়ে কারখানার মালিক বজলুর রহমান বলতে পারবেন। ’
বিআর টেক্সটাইল কম্পোজিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বজলুর রহমান বলেন, ‘কেনা জমিতে বালু ভরাট করছি। ’ রেলওয়ের জমিতে বালু ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রেলওয়ের কিছু জমি লিজ নিয়ে কারখানার কাজে ব্যবহার করছি। ’
তবে রেলওয়ের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সাল থেকে তাদের জমির আবাসিক লিজ বন্ধ রয়েছে।
সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার বলেন, ‘যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ অপকর্ম করলে এর দায়ভার আমরা নেব না। ’
রেলওয়ের ঢাকা বিভাগের এস্টেট কর্মকর্তা ওয়াহেদুন্নবী বলেন, ‘যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রেলওয়ের জায়গা দখল করে বালু ভরাট করে ফেলছে তাদের শিগগিরই উচ্ছেদ করে আমাদের জায়গা দখলমুক্ত করা হবে। ’
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনুর ইসলাম বলেন, ‘কম্পানির মালিককে অবৈধ টিনের বেড়া সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ’ বালু ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘বালু ভরাটের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। ’
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, ‘সরকারি সম্পত্তি কোনোভাবেই দখল করতে দেওয়া হবে না।