বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার নূরনগর এলাকার শত বছরের ঐতিহ্য ঘেরা কাইতলা জমিদার বাড়ি। আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেকেই জমিদার বাড়ি সম্পর্কে জ্ঞাত নয়।
আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে কাইতলা জমিদার বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল। এই জমিদার বাড়িটি ছিল ত্রিপুরার রাজা বিরেন্দ্র কিশোর মানিক্যর অধিভুক্ত। আর কাইতলার জমিদারের নাম ছিল বিশ্বনাথ রায় চৌধুরী। তার ছিল তিন ছেলে- তিলক চন্দ্র রায় চৌধুরী, অভয় চন্দ্র রায় চৌধুরী, ঈশান চন্দ্র রায় চৌধুরী। লোকমুখে কথিত আছে যে, বিশ্বনাথ রায় চৌধুরী কলকাতার পশ্চিমবঙ্গের শিমগাঁও থেকে এসে কাইতলায় বসতি স্থাপন করেছিল।
এক সময় এ জমিদার বাড়িতে ছিল নাচমহল। রাত হলেই বসতো বাইজীর আসর। পায়েলের ঝুমঝুম, নূপুরের নিক্কন, মায়াবী অট্টহাসির ধ্বনি ভেসে আসত অন্দর মহল থেকে। পাগলা হাতির সওয়ার হয়ে বের হয়ে আসত মাহুত, বাজত বিচারালয়ের ঘণ্টাধ্বনি, সারা বাড়ি ছিল পাইক-পিয়াদায় ভরপুর। কিন্তু আজ জমিদারের বিত্ত-বৈভব নেই, নেই কোন সম্পদের জৌলুস, প্রাচীন পাথরে লেখা শিলালিপি ক্ষয়ে যাচ্ছে, আজ সবই অতীত সবই স্মৃতি।
অবশ্য জমিদার আমলে করা এলাকার কিছু উন্নয়নের চিত্র চোখে পড়ে কোথাও কোথাও। অভয় চন্দ্র রায় চৌধুরীর নাম অনুসারে বল্লভপুর গ্রামের পশ্চিম অংশের নাম ‘অভয়নগর’, ঈশান রায় চৌধুরীর নামে মেহেরী ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম ‘ঈশান নগর’ এবং তার পুত্র যজ্ঞেশ্বর রায়ের নাম অনুসারে ‘কাইতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়’ রয়েছে। আর যজ্ঞেশ্বরের স্ত্রী সুখমনি রায়ের নামে ৪০ একরের একটি দীঘি রয়েছে। দীঘির নাম হল ‘সুখ সাগর’ দীঘি।
জমিদার বাড়ির পাশে রয়েছে একটি জলাশয়। তার নাম ‘আন্ধা পুকুর’। এই আন্ধা পুকুরকে ঘিরে নানান কিংবদন্তী চালু আছে সেখানে সোনা রুপার কলস সিন্দুক কষ্টিপাথর আর গুপ্তধন রয়েছে। শত বছরেও আন্ধা পুকুরের সংষ্কার খনন সম্ভব হয়নি। কেননা এর কালো চিকচিক পানি সাপে পরিপূর্ণ। বলা হয়, সাপগুলো নাকি গুপ্তধনের পাহারাদার। সময়ের বিবর্তনে জমিদারের স্মৃতি চিহ্ন বিলীন হবার পথে। জমিদার বাড়ি শুনশান নিরবতার প্রতিবিম্ব এক। কিন্তু আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কাইতলা জমিদার এই বাড়িটি।