ঢাকা , শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বান্দরবান সীমান্তে আর আসছে না রোহিঙ্গারা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের ঢল আপাতত বন্ধ হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ির জনপ্রতিনিধি ও অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে ঘুনধুম ও তুমব্রু সীমান্তের এ পাড়ে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে কক্সবাজারের উখিয়ায় সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। আজ সোমবার পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৫০০ পরিবারকে নেওয়া হয়েছে বলে নির্বাহী হাকিম জানিয়েছেন।
গত আগস্টের শেষ দিকে মিয়ানমারে সেনা নিপীড়ন শুরু হলে হাজার হাজার সেখানকার রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে থাকে। এর মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুম, তুমব্রু, চাকঢালা, আশারতলি ও রেজু আমতলি এলাকায় আশ্রয় নেয় তারা।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, তাঁর ইউনিয়নের চাকঢালা ও আশারতলি সীমান্ত পয়েন্টগুলো দিয়ে গত তিন দিনে নতুন কোনো রোহিঙ্গা আসেনি। ঘুনধুমের রেজু আমতলির রোহিঙ্গা নেতা ও ওকজু (গ্রাম পঞ্চায়েত) চেয়ারম্যান কালু মিয়া (কালু চেয়ারম্যান) বলেছেন ঘুনধুম, তুমব্রু ও রেজু আমতলি সীমান্তের ওপারের মিয়ানমারের গ্রামগুলো এখন জনমানবশূন্য। সেখান থেকে আসার আর কেউ নেই। এখন টেকনাফ ও উখিয়ার সীমান্ত দিয়ে লোকজন আসছে।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘুনধুম ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নেয়। তারা কোথাও এক জায়গায় অনেক পরিবার, আবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাঁবু টানিয়ে রয়েছে। এলোমেলো অবস্থায় থাকায় তাদের তালিকাভুক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সেখান থেকে বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়েও পড়ছে। এ জন্য দ্রুত তাঁদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঘুনধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বলেছেন, সরিয়ে নেওয়ার আগে উখিয়ায় নির্দিষ্ট শরণার্থীশিবিরে গেলে কী কী সুবিধা তারা পাবেন, সবকিছু অবহিত করে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এতে রোহিঙ্গারা রাজি হওয়ায় গত রোববার বেলা দুইটা থেকে একজন নির্বাহী হাকিমের উপস্থিতিতে পুলিশ ও বিজিবির সহযোগিতায় সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়।
নির্বাহী হাকিম আজিজুর রহমান বলেছেন, ঘুনধুমের পাহাড়পাড়া, টিভি টাওয়ারের পূর্ব পাশসহ বিভিন্ন স্থানে যারা অবস্থান নিয়েছে, আপাতত তাদের উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ও তাইংখালীতে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার পরিবার নেওয়া হয়েছে এবং এখনো সরিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে। আজিজুর রহমান বলেন, তুমব্রু পশ্চিমকুল বা জলপাইতলি ও তুমব্রু কোনাপাড়ায় অবস্থান করছে প্রায় আরও ২ হাজার ৪০০ পরিবার। তবে তুমব্রু কোনাপাড়া এলাকায় যারা রয়েছে, তাদের তালিকা করা কঠিন হয়েছে। কারণ, শূন্যরেখায় হলেও তাঁরা মিয়ানমারের ভূখণ্ডে অবস্থান করছেন। সেখানে তালিকা করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হতে পারে—এমন আশঙ্কা রয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সারোয়ার কামাল বলেন, শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এ পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার ৩০০ পরিবার ও ঘুনধুম ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার ৬০০ পরিবারকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তালিকা শেষে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তত্ত্বাবধানের জন্য গঠিত ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের মাধ্যমে তাঁদের উখিয়ায় সরিয়ে নেওয়া হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বান্দরবান সীমান্তে আর আসছে না রোহিঙ্গারা

আপডেট টাইম : ০২:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের ঢল আপাতত বন্ধ হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ির জনপ্রতিনিধি ও অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে ঘুনধুম ও তুমব্রু সীমান্তের এ পাড়ে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে কক্সবাজারের উখিয়ায় সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। আজ সোমবার পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৫০০ পরিবারকে নেওয়া হয়েছে বলে নির্বাহী হাকিম জানিয়েছেন।
গত আগস্টের শেষ দিকে মিয়ানমারে সেনা নিপীড়ন শুরু হলে হাজার হাজার সেখানকার রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে থাকে। এর মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুনধুম, তুমব্রু, চাকঢালা, আশারতলি ও রেজু আমতলি এলাকায় আশ্রয় নেয় তারা।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, তাঁর ইউনিয়নের চাকঢালা ও আশারতলি সীমান্ত পয়েন্টগুলো দিয়ে গত তিন দিনে নতুন কোনো রোহিঙ্গা আসেনি। ঘুনধুমের রেজু আমতলির রোহিঙ্গা নেতা ও ওকজু (গ্রাম পঞ্চায়েত) চেয়ারম্যান কালু মিয়া (কালু চেয়ারম্যান) বলেছেন ঘুনধুম, তুমব্রু ও রেজু আমতলি সীমান্তের ওপারের মিয়ানমারের গ্রামগুলো এখন জনমানবশূন্য। সেখান থেকে আসার আর কেউ নেই। এখন টেকনাফ ও উখিয়ার সীমান্ত দিয়ে লোকজন আসছে।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘুনধুম ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নেয়। তারা কোথাও এক জায়গায় অনেক পরিবার, আবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাঁবু টানিয়ে রয়েছে। এলোমেলো অবস্থায় থাকায় তাদের তালিকাভুক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সেখান থেকে বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়েও পড়ছে। এ জন্য দ্রুত তাঁদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঘুনধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বলেছেন, সরিয়ে নেওয়ার আগে উখিয়ায় নির্দিষ্ট শরণার্থীশিবিরে গেলে কী কী সুবিধা তারা পাবেন, সবকিছু অবহিত করে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এতে রোহিঙ্গারা রাজি হওয়ায় গত রোববার বেলা দুইটা থেকে একজন নির্বাহী হাকিমের উপস্থিতিতে পুলিশ ও বিজিবির সহযোগিতায় সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়।
নির্বাহী হাকিম আজিজুর রহমান বলেছেন, ঘুনধুমের পাহাড়পাড়া, টিভি টাওয়ারের পূর্ব পাশসহ বিভিন্ন স্থানে যারা অবস্থান নিয়েছে, আপাতত তাদের উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ও তাইংখালীতে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার পরিবার নেওয়া হয়েছে এবং এখনো সরিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে। আজিজুর রহমান বলেন, তুমব্রু পশ্চিমকুল বা জলপাইতলি ও তুমব্রু কোনাপাড়ায় অবস্থান করছে প্রায় আরও ২ হাজার ৪০০ পরিবার। তবে তুমব্রু কোনাপাড়া এলাকায় যারা রয়েছে, তাদের তালিকা করা কঠিন হয়েছে। কারণ, শূন্যরেখায় হলেও তাঁরা মিয়ানমারের ভূখণ্ডে অবস্থান করছেন। সেখানে তালিকা করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হতে পারে—এমন আশঙ্কা রয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সারোয়ার কামাল বলেন, শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এ পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজার ৩০০ পরিবার ও ঘুনধুম ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার ৬০০ পরিবারকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তালিকা শেষে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তত্ত্বাবধানের জন্য গঠিত ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের মাধ্যমে তাঁদের উখিয়ায় সরিয়ে নেওয়া হবে।