বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মায় কইছে ভিক্ষা করা ভালা না। তাই ভিক্ষা করি না। মায় প্রতিদিন ১৫০ টেহার চকলেট কিইন্ন দেয়। আমি তা বেচি। যে টেহা লাভ হয় তা আমি মায়ের হাতে তুইল্লা দেই। কথা গুলো বলছিল ৮ বছরের ছোট্ট শিশু মো. হেলাল শেখ।
তখন দুপুর পৌনে ১টা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা চলছে। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতিসহ আরো বিভিন্ন জেলা ভর্তি সহায়ক কেন্দ্র স্থাপন করে পরীর্ক্ষাথীদের সহায়তা করে যাচ্ছে। ৮ বছরের শিশুটি চকলেট বিক্রি করার জন্যে ভর্তি সহায়ক কেন্দ্রের সামনে দাঁড়াল।
পরণে কালো গেঞ্জি সাথে নীল রংয়ের হাফ প্যান্ট। হাসি দিয়ে কয়টা চকলেট নেবার অনুরোধ করল। দুটি সেন্টার ফ্রুট এবং দুটি মিক্ল ক্যান্ডি দিতে বললাম। পঞ্চাশ টাকা একটি নোট বের করে দিলাম। ভাঙতি না থাকার কারণে সে সাইত্রিশ টাকা ঘুরিয়ে দিল ও সঙ্গে আরো সাতটি চকলেট দিল। সাতটি চকলেট তাকে ফিরত নিতে বললাম। কিন্তু ছোট্ট শিশুটি কোন ভাবেই চকলেট ছাড়া বাকি টাকা নিতে রাজি হল না। কারো কাছ থেকে হাত পেতে টাকা নেওয়া তার মায়ের পছন্দ না। তাই সে ভিক্ষা করে না।
ছেলেটির মা রাহেলা বেগম নবীনগরে ময়ূরের পাখনা বিক্রি করেন। বাবা মাহতার মিয়াকে জন্মের পর থেকে এখন সে দেখেনি। দু’ভাইয়ের মধ্যে মো. হেলাল শেখ ছোট। বড় ভাই কোন এক এতিম খানায় পড়ছে। বাবা হারা হেলাল মিয়া আজও তার ভাইকে এক নজর দেখেনি। সাভার নবীনগরের নসীমপুরে মাকে নিয়ে ছোট্ট দো-চালা ঘরে বসবাস করছে।
প্রথম শ্রেণি র্পযন্ত পড়াশুনা করেছে সাভার নবীনগরের একটি মাদ্রাসায়। টাকার অভাবে আর পড়াশুনা করতে পারে নাই। প্রতিদিন সকালে পানতা ভাত, দুপুরে কপালে যা জুটে আর রাতে প্রায় দিনই না খেয়ে কাটিয়ে দেয় মা-ছেলে। এখন তার ইচ্ছা একটি সাইকেলের। সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াতে চায় পুরো জাহাঙ্গীরনগরে। মা রাহেলা বেগমের সার্মথ্য নেই সেই স্বপ্ন পূরণ করে দেবার। বড় হয়ে সে বাস চালক হতে চায়।