বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জন্ম বাংলাদেশে, বেড়ে ওঠাও এ দেশের মাটিতে তবুও তার নেই জাতীয় পরিচয়পত্র। স্থানীয় প্রভাবশালীদের রোষানলের শিকার হয়ে ৪৭ বছর ধরে নাগরিকত্বহীন জীবন কাটছে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরের ছকিনা বেওয়ারের (৭৬)।
জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় সকল নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছকিনা। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেলে না বয়স্ক ভাতা, ন্যূনতম সরকারি ত্রাণও জুটে না তার ভাগ্যে। তাই ক্ষুধা মেটাতে ৭৬ বছর বয়সেও ছকিনাকে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হয় ভিক্ষা করতে।
ছকিনা বেওয়ারের জন্ম ১৯৪২ সালে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরের গোড়াই পিয়ার গ্রামে। ছকিনা বেওয়ার বলেন, তার বাবা দুখু মিয়া তার বিয়ে দেন পার্শ্ববর্তী দলদলিয়া ঘাটিয়াল পাড়া গ্রামের কৃষক দবির উদ্দিনের সঙ্গে। একটি পুত্র সন্তান (মানসিক ভারসাম্যহীন) ছিল তার। ছিল জমিজমা ও স্বচ্ছল সংসার। ১৯৭১ সালে তার স্বামী দবির উদ্দিন মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর প্রতিবেশি মৃত ধবস হাজী তার সহায় সম্পদ কেড়ে নিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে বাড়ি ছাড়া করেন তাকে।
নিজের জীবন বাঁচাতে সন্তানকে নিয়ে ছকিনা আশ্রয় নেন পার্শ্ববর্তী থেতরাই ইউনিয়নের পাতিলাপুর গ্রামে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাকে বাড়ি ছাড়া করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি তার নাম ভোটার তালিকা থেকেও বাদ দেয়। এরপর থেকে তার নাম আর ভোটার তালিকায় ওঠেনি। তার একমাত্র ছেলে তাহাজল মারা যাওয়ার পর থেকে পেটের দায়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন। দিনভর ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে যেখানে রাত হয় সেখানেই ঘুমান তিনি। মৃত্যুর পর কবরের ঠিকানাও অনিশ্চিত তার। এখন আর শরীর চলে না, হাঁটতেও পারেন না ছকিনা। তবুও পেটের ক্ষুধা মেটাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হয় তাকে।
ছকিনা বেওয়া আক্ষেপ বলেন, ‘মোর (আমার) ভোট নেয় না, মোক ইলিফ (ত্রাণ) দেয় না, মোর কি হইবে? মুই (আমি) কতজনক ভিক্ষা দিছোং, এখন মুই ভিক্ষা করং বাহে। মোর দিকি কেউ চোখ তুলি দ্যাখে না বাবা।’
থেতরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুর আমিন বলেন, ছকিনার নাম ভোটার তালিকায় ওঠানোর জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু নির্বাচন অফিস আগ্রহ দেখায়নি। আমি চাই ছকিনা বেওয়া মৃত্যুর আগে দেশের নাগরিক হয়ে যেন মারা যান। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা জরুরি।
থেতরাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, ছকিনা বেওয়াকে তিনি চেনেন না। ছকিনা তার ইউনিয়নের বাসিন্দা কিনা সে বিষয়ে অবগত নন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, যদি ছকিনা ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হন তাহলে তাকে ভোটার বানিয়ে নাগরিকত্ব দেওয়াসহ সব ব্যবস্থা করা হবে।