জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে রোপা আমন ধান কর্তন ও মাড়াই এর ধুম। কৃষক-কৃষানি ও শ্রমিকরা ধান কর্তন আর মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে তাই কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কয়েক বছর থেকে ধান আবাদ করে লোকসান খাচ্ছিলাম, এবার বাজার ভালো। লোকসান হবে না, লাভের মুখ দেখা যাবে। হাসিমুখে বলছিলেন নীলফামারী শহরের মধ্য হাড়োয়া মহল্লার কৃষক তালেব আলী(৪৫)। ১০বিঘা জমিতে চাষ করেছে রোপা আমন।চলছে কর্তনের কাজ। দুই একদিনের মধ্যে ক্ষেতের সব ধান কর্তন করে মাড়াই শুরু করবেন তিনি।
তালেবের মত জেলার হাজার হাজার কৃষক চলতি মৌসুমে আশার আলো দেখছেন রোপা আমন ধান আবাদ করে। কেউবা কর্তন শেষে করছেন মাড়াইয়ের কাজ।
কৃষক তালেব জানান, বীজ থেকে শুরু করে কর্তন পর্যন্ত খরচ হয়েছে চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি অন্তত ১২মণ ধান পাওয়া যাবে। বাজারে মণ প্রতি ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে ধান। সে হিসেবে বিঘা প্রতি চার হাজার টাকা লাভ উঠবে হাতে।
জেলা সদরের টুপামারী, গোড়গ্রাম, রামনগর, পলাশবাড়ি, কুন্দপুকুর, লক্ষ্মীচাপ, কচুকাটা, পঞ্চপুকুর ও চড়াইখোলা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে ধান কাটার চিত্র। শ্রমিকরা ধান কেটে কাঁধে নিয়ে দলে দলে ফিরছেন মালিকের উঠোনে। এমন সোনালি চিত্র গোটা জেলাজুড়ে।
তবে শ্রমিক সংকটে ধান কর্তন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। দৈনিক ৪শ’ টাকা মজুরিতেও পাওয়া যাচ্ছে না তাদের। নানান কাজে সম্পৃক্ত হওয়া এবং লাভের আশায় অন্যত্র যাওয়ায় সংকট বেড়েছে ধান কাটায়।
সাতজনের দল নিয়ে ধান কাটছেন নীলফামারী সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের সাহেব পাড়ায়। শ্রমিক সংকটের কথা স্বীকার করে দলনেতা সহিদুল ইসলাম জানান, দৈনিক চার’শ টাকা মজুরিতে কর্তন করছি আমরা। জেলার বাহিরে এমনকি অন্য কাজে জড়িত হওয়ায় সংখ্যা কমেছে বলে জানান তিনি।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে জেলায়। ক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি না হওয়া এবং বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকরা এবার লাভের মুখ দেখবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিব আবেদিন হিরু জানান, এবারে রোপা আমন ক্ষেতের জন্য আবহাওয়া পুরোপুরি উপযোগী ছিলো। থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় উপকার হয়েছে। আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েননি কৃষকরা। তাছাড়া বাজার দর ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে এবার হাসি ফুটছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারী উপ-পরিচালকের দফতর সূত্র জানায়, ১লাখ ১২হাজার ৪৭হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১লাখ ১২হাজার ১৯৫হেক্টরে জমিতে আবাদ করা হয়।
এর মধ্যে সদরে ২৮০৪০, সৈয়দপুরে ৮২১০, ডোমারে ১৮,৫০০, ডিমলায় ১৯,৩২৫, জলঢাকায় ২৩, ২৮৫ এবং কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৪, ৮৩৫হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ করেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নীলফামারীর প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আফতাব হোসেন জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় রোপা আমন আবাদ করে ভালো ফসল পেয়েছেন কৃষকরা। বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে ফলন হওয়া পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সহযোগিতা করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এবার ধানের বাজার দর ভালো। কৃষকরা লাভবান হবেন।
তিনি জানান, ২০১৫-১৬ মৌসুমে ৪লাখ ৫৯হাজার ২৫২ হেক্টরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৪লাখ ৯৭হাজার ৮৫৬হেক্টরে এবং ২০১৪-১৫ মৌসুমে ৪লাখ ৫১হাজার ৫৬০ হেক্টরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৪লাখ ৭০হাজার ৯৬৭ হেক্টরে রোপা আমন আবাদ করেন কৃষকরা।