২০১৩ সালে রাজধানীর মালিবাগে পুলিশ পরিদর্শক ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার দায়ে তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশীকে গত বছর ফাঁসির আদেশ দেন আদালত৷ ঐশীর দণ্ড মকুবের আবেদন জানিয়েছেন অনেকে৷এবিসি রেডিওর ফেসবুক পাতায় একটি লিঙ্ক শেয়ার করে লেখা হয়, ‘ঈদের আগেই ঐশীর ফাঁসি কার্যকর’৷ যদিও লিংক ক্লিক করে কোনো সংবাদই পাওয়া যায়নি৷ তারপরও শিরোনাম দেখে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়৷ কবি, সাহিত্যিকসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিই এতে প্রতিক্রিয়া জানান৷ যদিও পরে অনেকেই এ খবরের সত্যতা পাননি৷ কিন্তু বিষয়টি নিয়ে মতামত প্রকাশ করেছেন অনেকেই৷
গত বছরের ১২ নভেম্বর ঢাকায় পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে তাদের মেয়ে ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত৷ রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছিলেন, ‘‘ঐশী পরিকল্পিতভাবে, সময় নিয়ে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায়৷ সে খুনের সময় সুস্থ স্বাভাবিক ছিল৷ আসামিপক্ষ তাকে অপ্রাপ্তবয়স্ক বললেও তা প্রমাণ করতে পারেনি৷ সে মাদকাসক্ত হলেও বাবা-মাকে সে হত্যা করেছিল সুস্থ মস্তিষ্কে৷”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরি গায়েন তার ফেসবুক পাতায় দুটি মন্তব্য করেছেন৷ প্রথমটি খবরটি দেখার পর৷ যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘যাঁরা মানবতাবিরোধী ৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তাঁদেরও দেখি ঐশীর মৃত্যুদণ্ডে উল্লসিত৷ বিশ্বের মানবতাবাদী সংগঠনগুলোও কেউ উচ্চবাচ্য করছে না৷ ঐশী একা তার মা-বাবাকে খুন করেছে, এটা আমি বিশ্বাস করি না৷ আমার ধারণা, ঐশীর পেছনের ক্রীনড়কদের বের করা সম্ভব হয়নি৷
তবে ঐশী একা এই কাজ সত্যি ঘটিয়ে থাকলেও তার বয়স বিবেচনা করে ঐশীর মৃতুদণ্ড বাতিলের জোর দাবি জানাই৷ তার জীবন মাত্র শুরু হয়েছে এবং এই ঘটনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যদি কেউ হয়ে থাকে তবে ঐশী নিজে৷ ঐশীকে তার ভুল শোধরানোর সুযোগ দেয়া হোক৷ তার মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে সংশোধিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মানবিক ব্যবস্থা নেয়া হোক৷”
এই লেখায় মন্তব্য করেছেন অনেকে৷ মোরশেদুল মারাজ লিখেছেন, ‘‘ঐশিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার রায়ে বয়স কেন বিবেচনা করা হয়নি সেটা আমার কাছে সবচেয়ে বড় বিস্ময়…৷”
এর উত্তরে কাবেরি গায়েন আবার লিখেছেন, ‘‘কিন্তু সাঈদীর ৭১ সালের বয়স অনেকের কাছেই খুব বড় বিবেচনার বিষয়৷”
এছাড়া সরকার মুহাম্মদ আব্বাস লিখেছেন, ‘‘মাননীয় বিচারকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই বলতে চাই, রায় প্রকাশের আগেই অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন ছিল, যা বিচারক করাতে পারতেন৷”
সংবাদটি ভুল জানার পর কাবেরি গায়েন আবার লিখেছেন, ‘‘আমি ফেসবুকে ঐশীর মৃত্যুদণ্ড বহাল নামে একটি খবর দেখে আমার বিস্ময় এবং অবিশ্বাস জানিয়ে দু’লাইনের একটি পোস্ট দিয়েছিলাম৷ বেশ কয়েক ঘন্টা পরেও এ বিষয়ে নতুন কোনো খবর মূল ধারার পত্রিকায় না পেয়ে পোস্টটি মুছে দিচ্ছি৷ আশা করি আমাদের সবার আকাঙ্খাই বাস্তবায়িত হবে৷ ঐশীর মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হবে৷”
এবিসি রেডিও’র ফেসবুক পাতায় লেখা ছিল – ‘‘ঐশীর ফাঁসি কার্যকরের ব্যাপারে আপনার কি মতামত? কমেন্টে জানান এবং জনমত গড়তে শেয়ার করুন৷”
বিশিষ্ট কবি নির্মলেন্দু গুণও এ খবর দেখে ঐশীর সাজা কমানোর জন্য রাষ্ট্রপতির বরাবর একটি লেখা লিখেছেন ফেসবুকে৷
২০০৪ সালে ভুটানে মৃত্যুদণ্ডের বিধান তুলে নেয়া হয়৷ দেশটিতে সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ১৯৭৪ সালে৷
তিনি লিখেছেন, ‘‘ঐশীর প্রাণরক্ষার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমাদের আকুল আবেদন৷ ঐশীর মৃত্যুদণ্ড মকুব করার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করার বিষয়টি নিয়ে আমিও ভাবছিলাম৷ একটু দ্বিধার মধ্যে ছিলাম৷ এমন সময় ঐশীর প্রাণদণ্ড মকুব করার জন্য মাননীয় রাষ্টপতির উদ্দেশে লেখা কবি সৈয়দ তারিকের আবেদনটি চোখে পড়ল৷ দেখলাম কবি তারিকের আবেদনটির প্রতি বহু মানুষের সমর্থনও আছে৷ তারা নেশার কবলে পড়ে বিবেক বা চৈতন্য হারানো কিশোরী ঐশীকে প্রাণভিক্ষা দেবার পক্ষে৷ আমিও ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে তাকে অন্য কোনো লঘু দণ্ড দেয়ার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি৷”
‘‘এই স্বকর্মদোষে অভিভাবকহারা, প্রায়-মস্তিষ্ক-বিকৃত কিশোরী ঐশীর পক্ষ থেকে আমি মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে মেয়েটির প্রাণরক্ষার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি৷ মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনি ঐশীকে প্রাণ ভিক্ষা দিন৷ তাতে কবরে শায়িত হতভাগিনী ঐশীর মা-বাবাও অখুশি হবেন বলে আমার মনে হয় না৷ আমার ধারণা, দেশের অধিকাংশ মানুষও ঐশীকে ফাঁসির রশিতে ঝুলতে দেখতে চাইছেন না৷”
তাঁর লেখাটি ফেসবুকে শেয়ার হয়েছে ৭৩ বার৷ মন্তব্য অসংখ্য৷ রাসেল তার লেখাটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘সবারই একটা দ্বিতীয় সুযোগ প্রাপ্য৷ তাকে এমনভাবে তৈরি করার জন্য আমাদের সমাজও অনেকাংশে দায়ী৷”
তামিম চৌধুরী লেখাটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘‘ঐশীকে প্রাণদণ্ড নয়, বরঞ্চ সমাজকে মাদকমুক্ত করা হোক৷ আমার মতে ঐশীর প্রাণদণ্ড মানে রাষ্ট্রের জন্য চরম লজ্জা এবং প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যর্থতা, যেহেতু রাষ্ট্রব্যবস্থাই নাগরিককে পরোক্ষভাবে ঢেলে দিচ্ছে মাদকের দিকে৷ মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কতটুকু তৎপর – এই নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে৷” -ডচভেলে