ঢাকা , বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিল্পকলায় মাঝপথে নাটক বন্ধের বিষয়ে যা বললেন মহাপরিচালক

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেছেন, গতকাল শনিবার (২ নভেম্বর) যে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক বন্ধ করে দিতে হয়েছে, সেটা কোনো অশনিসংকেতের বিষয় নয়। দর্শকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

গতকাল শনিবার (২ নভেম্বর) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় একদল ব্যক্তির বিক্ষোভের মুখে দেশ নাটক আয়োজিত ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেন আয়োজকেরা। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়ে শিল্পকলা একাডেমি। আজ রোববার সকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নাটক বন্ধের কারণ, ওই সময়ের পরিস্থিতি এবং করণীয় নিয়ে কথা বলেন শিল্পকলার মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।

মহাপরিচালক বলেন, এই ফেসবুক পোস্টটা একটা ভয়ানক উত্তেজনা তৈরি করেছে কিছু মানুষের মনের মধ্যে এবং আমার কাছে অন্যদিকে এটাও মনে হয় যে, আওয়ামী লীগের দোসররাও এ রকম উসকানিমূলক কিছু কথা বলে সমস্যাগুলো তৈরি করার চেষ্টা করছে। এখন আমাদের সবার উচিত শান্ত হওয়া, ঠান্ডা হওয়া। যেন আমরা শান্ত মনে বিবেচনা করতে পারি।

জানা গেছে, গতকাল বিকেল থেকে নাটকের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার প্রধান ফটকের সামনে দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে একাডেমির মহাপরিচালক গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু পরে বিক্ষোভকারীরা ফের সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে মহাপরিচালক দেশ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।

নাট্যাঙ্গনের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় কিংবা পরে বিভিন্ন নাট্যদলের একাধিক কর্মী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমান সরকারকে নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন। দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুর দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে এ ঘটনার সূত্রপাত।

সংবাদ সম্মেলনে মহাপরিচালক ওই পোস্টের বিষয়ে বলেন, ‘এই পোস্ট আমি আগেই দেখেছিলাম। আমাকে দেখানো হয়েছিল। আরও পোস্ট আছে, আরও কথা আছে, আরও মানুষের কথা আছে, এগুলো দেখানো হয়েছে। দেখানোর পরেও নাট্যকলার পরিচালক ফয়েজ জহির বলেছিলেন, এ রকম হওয়া উচিত না। শিল্পকলা একাডেমি আমাদের সবার জন্য খুলে দেওয়া উচিত। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা খুলে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, এটা কোনো অশনিসংকেতের বিষয় নয়। আমি আশা করব আপনারা সবাই আমার সঙ্গে থাকবেন। এখন পোস্টের বিষয়ে কথা বলছি এ জন্য যে, এই পোস্টটা একটা ভয়ানক উত্তেজনা তৈরি করেছে কিছু মানুষের মনের মধ্যে।

জামিল আহমেদ বলেন, এই পোস্টের ওপর বিবেচনা করে কিন্তু আমরা নাটক বন্ধ করব, এমন সিদ্ধান্ত নিইনি। কারণ আমরা আগে থেকেই দলগুলোকে হল দেওয়া শুরু করেছি। আমরা চাই, সবাই এখানে নাটক করুক। অনেক প্রশ্নবিদ্ধ দল আছে, তারা কিন্তু নাটক করে চলে গেছে। আমি এখন হিসাব দিচ্ছি না। তাতে সমস্যা আরও ঘোলাটে হবে। গতকাল সমস্যা হয়েছে বাবুর (এহসানুল আজিজ বাবু) পোস্ট নিয়ে। আমি বাবুকে বলেছি, আপনি যে কাজটা করেছেন, এটা খুব নিচু রুচিসম্পন্ন একটি কাজ। এ রকম কাজ না করে, যদি বুকের পাটা থাকে তাহলে একটা নাটক করে যুক্তি দিয়ে দেখান, এই সরকারের ব্যর্থতা কোথায়।

মহাপরিচালক মনে করেন, শিল্পকলা একাডেমির দায়িত্ব সবার কথা বলার। সবাই এখানে এসে নাটক করবে।

নাটক বন্ধ না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কেন নেননি, এমন প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, আমি খুব দায়িত্ব নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি মনে করি, এটা পুলিশ, সেনাবাহিনীর জায়গা না। এটা শিল্পকলা একাডেমির জায়গা। এর দায় একাডেমির মহাপরিচালকে মোকাবিলা করার। করেছি এ কারণে যে, বৃহৎ যুদ্ধে জিতব বলে, আপনার শুধু সঙ্গে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, সেনাবাহিনী এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিল। আমি তাদের জড়াতে চাইনি। কারণ আমার মনে হয়েছে, এর সঙ্গে সেনাবাহিনীকে জড়ানোর প্রয়োজন নেই। এগুলো এ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার দরকার নাই। শুধু আমাদের একটু শান্ত হতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

শিল্পকলায় মাঝপথে নাটক বন্ধের বিষয়ে যা বললেন মহাপরিচালক

আপডেট টাইম : ০৪:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেছেন, গতকাল শনিবার (২ নভেম্বর) যে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক বন্ধ করে দিতে হয়েছে, সেটা কোনো অশনিসংকেতের বিষয় নয়। দর্শকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

গতকাল শনিবার (২ নভেম্বর) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় একদল ব্যক্তির বিক্ষোভের মুখে দেশ নাটক আয়োজিত ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের প্রদর্শনী মাঝপথে বন্ধ করে দেন আয়োজকেরা। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়ে শিল্পকলা একাডেমি। আজ রোববার সকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নাটক বন্ধের কারণ, ওই সময়ের পরিস্থিতি এবং করণীয় নিয়ে কথা বলেন শিল্পকলার মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।

মহাপরিচালক বলেন, এই ফেসবুক পোস্টটা একটা ভয়ানক উত্তেজনা তৈরি করেছে কিছু মানুষের মনের মধ্যে এবং আমার কাছে অন্যদিকে এটাও মনে হয় যে, আওয়ামী লীগের দোসররাও এ রকম উসকানিমূলক কিছু কথা বলে সমস্যাগুলো তৈরি করার চেষ্টা করছে। এখন আমাদের সবার উচিত শান্ত হওয়া, ঠান্ডা হওয়া। যেন আমরা শান্ত মনে বিবেচনা করতে পারি।

জানা গেছে, গতকাল বিকেল থেকে নাটকের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে একদল লোক শিল্পকলার প্রধান ফটকের সামনে দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে একাডেমির মহাপরিচালক গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করলে যথারীতি নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। কিন্তু পরে বিক্ষোভকারীরা ফের সংগঠিত হয়ে নাট্যশালার গেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে মহাপরিচালক দেশ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।

নাট্যাঙ্গনের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় কিংবা পরে বিভিন্ন নাট্যদলের একাধিক কর্মী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্তমান সরকারকে নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন। দেশ নাটকের সদস্য এহসানুল আজিজ বাবুর দেওয়া একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে এ ঘটনার সূত্রপাত।

সংবাদ সম্মেলনে মহাপরিচালক ওই পোস্টের বিষয়ে বলেন, ‘এই পোস্ট আমি আগেই দেখেছিলাম। আমাকে দেখানো হয়েছিল। আরও পোস্ট আছে, আরও কথা আছে, আরও মানুষের কথা আছে, এগুলো দেখানো হয়েছে। দেখানোর পরেও নাট্যকলার পরিচালক ফয়েজ জহির বলেছিলেন, এ রকম হওয়া উচিত না। শিল্পকলা একাডেমি আমাদের সবার জন্য খুলে দেওয়া উচিত। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা খুলে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, এটা কোনো অশনিসংকেতের বিষয় নয়। আমি আশা করব আপনারা সবাই আমার সঙ্গে থাকবেন। এখন পোস্টের বিষয়ে কথা বলছি এ জন্য যে, এই পোস্টটা একটা ভয়ানক উত্তেজনা তৈরি করেছে কিছু মানুষের মনের মধ্যে।

জামিল আহমেদ বলেন, এই পোস্টের ওপর বিবেচনা করে কিন্তু আমরা নাটক বন্ধ করব, এমন সিদ্ধান্ত নিইনি। কারণ আমরা আগে থেকেই দলগুলোকে হল দেওয়া শুরু করেছি। আমরা চাই, সবাই এখানে নাটক করুক। অনেক প্রশ্নবিদ্ধ দল আছে, তারা কিন্তু নাটক করে চলে গেছে। আমি এখন হিসাব দিচ্ছি না। তাতে সমস্যা আরও ঘোলাটে হবে। গতকাল সমস্যা হয়েছে বাবুর (এহসানুল আজিজ বাবু) পোস্ট নিয়ে। আমি বাবুকে বলেছি, আপনি যে কাজটা করেছেন, এটা খুব নিচু রুচিসম্পন্ন একটি কাজ। এ রকম কাজ না করে, যদি বুকের পাটা থাকে তাহলে একটা নাটক করে যুক্তি দিয়ে দেখান, এই সরকারের ব্যর্থতা কোথায়।

মহাপরিচালক মনে করেন, শিল্পকলা একাডেমির দায়িত্ব সবার কথা বলার। সবাই এখানে এসে নাটক করবে।

নাটক বন্ধ না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কেন নেননি, এমন প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, আমি খুব দায়িত্ব নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি মনে করি, এটা পুলিশ, সেনাবাহিনীর জায়গা না। এটা শিল্পকলা একাডেমির জায়গা। এর দায় একাডেমির মহাপরিচালকে মোকাবিলা করার। করেছি এ কারণে যে, বৃহৎ যুদ্ধে জিতব বলে, আপনার শুধু সঙ্গে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, সেনাবাহিনী এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিল। আমি তাদের জড়াতে চাইনি। কারণ আমার মনে হয়েছে, এর সঙ্গে সেনাবাহিনীকে জড়ানোর প্রয়োজন নেই। এগুলো এ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার দরকার নাই। শুধু আমাদের একটু শান্ত হতে হবে।