অন্যয়ের প্রতিবাদ করতে বিন্দুমাত্র পিছপা হন না সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। আর সেই কারণে শ্রোতাদের কাছে জীবনমুখী বা প্রতিবাদী গানের শিল্পী হিসেবেও বেশ খ্যাতি রয়েছে তার। সকল দমনপীড়নে বরাবরই সরব এই গায়িকা। ছিলেন গান-কবিতা নিয়ে মিছিলের অগ্রভাগেও। তার গায়কিতে উঠে আসে প্রতিবাদের নানা কথা। শুধু গানই নয়, ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে শেয়ার করেন নিজের ভাবনাগুলোও। তারই ধারাবাহিকতায় এবার সায়ানের অনুরোধ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে।
গতকাল বুধবার ফেসবুকে সায়ান প্রকাশ করেন তার নতুন কবিতা। শিরোনাম ‘কর্মী এবং নেত্রী’। কবিতার সঙ্গে জুড়ে দেন একটি দীর্ঘ ক্যাপশনও। গায়িকার কথায়, ‘কর্মী এবং নেত্রী- একটি সদ্য লেখা পদ্য/ কবিতা/ লেখা। এই কবিতার উদ্দেশ আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি অনুধাবনের অনুরোধ। এই দেশে যতদিন রাজনীতি থাকবে, কর্মীরা থাকবেন, নেত্রীরা থাকবেন, নেতারা থাকবেন। এবারের পতিত রাজনৈতিক শক্তি এমন এক তথাকথিত রাজনৈতিক (?) চর্চার নজির রেখে গেছেন, যেটা থেকে আমাদের শেখার আছে। আগামী দিনের কর্মীদের শেখার আছে। উপরের দিকের নেতারা সব টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। সাধারণ মানুষ, যারা পতিত দলে রাজনীতি করতে এসেছিলেন, তারা নেতৃত্বকে প্রশ্ন করেননি কোনো দিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনো নোংরা কাজ দেশপ্রেম আর রাজনীতির নামে এদের দিয়ে করানো হয়েছে। এই সাধারণরা এখন মামলা খেয়ে বেড়াচ্ছেন। রাঘব বোয়ালরা টাকা-পয়সা নিয়ে নিরাপদে পালিয়ে গেছেন। এবং দূর থেকে বসে বসে এখনো সাধারণ-কর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। মামলার মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। যেন তারা আরামে থাকতে পারেন। আর সাধারণ কর্মীরা ঘৃণার শিকার হয়। তারা নিজেরা একটা রাজনৈতিক পরাজয়কে মানতে পারেননি। কিন্তু ব্যবহার করে চলেছেন সাধারণ কর্মীদের।’
দীর্ঘ ক্যাপশনে সায়ান আরও লিখেছেন, ‘এটা ভয়ংকর স্বার্থপর এক চর্চা। অথচ সাধারণ কর্মীরা ছাড়া যে কোনো নেতারাই অচল। এই জায়গাটা সাধারণ মানুষকে বুঝতে অনুরোধ করি। তার শক্তির জায়গাটা। কোনো নেতা তাকে দিয়ে খুন করাতে চাইলে, কারো ঘরে আগুন লাগাতে চাইলে, তার প্রশ্ন করতে পারা দরকার- “এটাই কি রাজনীতি?” এসব আমি করব না!’
সবশেষ তিনি লিখেছেন, ‘এই কথাগুলো কাব্যিক? আমি কবিতা দিয়েই আমার রাজনীতি করি। সকলকে একুশের মাসের ভালোবাসা। প্রেমে, প্রতিরোধে, প্রতিবাদে প্রকাশিত থাকুন সকলে।’
এরপর সায়ান সাড়ে ৬ মিনিটের একটি ভিডিওতে তার কবিতার কথাগুলো তুলে ধরেন। তার কবিতার কয়েকটি লাইন এমন- ‘এক কালে এক নেত্রী ছিল, আমাদের এই দেশে/ গুলি করে সাফ করে দেও, বলত হেসে হেসে/ লাশ ফেলে দাও, লাশ ফেলে দাও, আম জনতার লাশ/ গর্ব করে এই মাটিতে করত সে সন্ত্রাস/ সতিই সে বলত এসব, সাক্ষী আছে তারও/ তার অমতে চালতে পারার সাহস হয়নি কারো/ আকাশ, বাতাস, পাতাল, মর্ত্য চলত তারই মতে/ তার হুকুমেই লাশ পড়েছে, পিচঢালা রাজপথে।’