ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রমজীবী মানুষ কী বলতে চায়, শুনুন

মহান মে দিবস। শ্রমিকের দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস। এখন থেকে ১৩১ বছর আগে শ্রমিক তার ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস এবং ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আন্দোলন করে। ধর্মঘটের মাধ্যমে শ্রমিক শ্রেণী ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করতে সক্ষম হয়। এই সার্থক ধর্মঘট ও আন্দোলনের সূত্র ধরে শ্রমিক শ্রেণী লড়াই করে বাঁচার এবং অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হতে শেখে।
মহান মে দিবসের শিক্ষায় ব্রতী হয়ে পৃথিবীর দেশে দেশে শ্রমজীবী মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী এবং নিজেদের দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় শ্রমিক শ্রেণী পৃথিবীর কয়েকটি দেশে নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমে সক্ষম হলেও আইএলও’র ২৬তম অধিবেশনে ১৯৪৪ সালে অর্থাৎ এখন থেকে ৭০ বছর আগে গৃহীত প্রস্তাব বা ফিলাডেলফিয়া ঘোষণা হিসেবে স্বীকৃত- (অ) শ্রমিক শ্রেণী কোনো পণ্য নয়, (আ) প্রগতি বা উন্নয়নের প্রয়োজনে সংগঠন ও মত প্রকার্শে স্বাধীনতা, (ই) উন্নয়নের বা অগ্রগতির পথে দারিদ্র্য প্রতিবন্ধক, (ঈ) অগ্রগতির সোপানকে সার্বজনীন করার প্রয়োজনে ত্রিপক্ষীয়তার নীতির ভিত্তিতে শ্রমিক-মালিক-সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে মুক্ত আলোচনা ও গণতান্ত্রিকতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ সব বিষয়ের সমাধান খোঁজার মতো ন্যূনতম অধিকার অর্জনের সৌভাগ্য হয়নি বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণীর। এই না হওয়ার কারণ হচ্ছে, আমরা প্রকৃত অর্থে মহান মে দিবসের দীক্ষার আলোকে দাবি আদায়ে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে পারিনি। পারিনি আত্মপ্রত্যয়ী হতে। পারিনি লক্ষ্য অর্জনে ত্যাগ স্বীকার করতে। এই না পারার কারণ হচ্ছে, শ্রমিক হিসেবে শ্রমিক শ্রেণীর নিজস্ব শ্রেণীসত্তায় বিকশিত না হতে পারা। ক্রমান্বয়ে শ্রমিক শ্রেণীকে বহুধাবিভক্তিতে ঠেলে দেয়া হয়েছে। খুব সুকৌশলে ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’-এর ক্ষেত্রে ‘জাতীয় বেতন কাঠামো’ ও জাতীয় মজুরি কমিশনে বিভক্তি টেনে এর কার্যকারিতা সরকারি ও আধা সরকারি কর্মচারী ও শ্রমিকের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রেখে বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়। আর ব্যক্তিমালিকানাধীন শ্রমিককে সেক্টরে শ্রেণীবিন্যাস করে ভিন্ন ভিন্ন ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভক্ত করে দেয়া হচ্ছে। এই ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ ১০ শতাংশ মালিকও মানেন না।
বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে নাগরিক অধিকারের বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। সেসব দেশে কর্মচারী ও শ্রমিককে আলাদা না করে, সরকারি বা আধা সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ না করে সর্বস্তরের শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য একটি ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ নির্ধারিত থাকে। তারা এ ধরনের ব্যবস্থা এ জন্যই রাখেন, যাতে খেটে খাওয়া মানুষ প্রাপ্য ন্যূনতম মজুরির ভিত্তিতে অন্তত একজন সভ্য মানুষ হিসেবে তার ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে সক্ষম হন। অর্থাৎ জীবনযাত্রার সর্বনিম্ন মান বজায় রাখার জন্যই ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’। আমাদের শ্রমিকেরা জাতীয় ন্যূনতম মজুরিপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত। বঞ্চিত প্রায় সর্বক্ষেত্রে। বঞ্চিত সামাজিক ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা থেকেও। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দিকে কেউ অঙ্গুলি তুলছেন না। এত বড় ট্র্যাজেডির পরও কেন সত্য আড়ালের চেষ্টা হবে? এ কি রাজনৈতিক অপচেষ্টা, না অন্য কিছু? শ্রমিকের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও কেন সেদিন শ্রমিককে ওই ভবনে কাজ করতে বাধ্য করা হলো? কারা বাধ্য করল? কারা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী? এ ভবন তৈরিতে সার্টিফিকেট দিয়েছিল কে বা কারা? ভবন ধসের দুই দিন আগেই ওই ভবনের ফাটল ধরা নিয়ে হইচই হচ্ছিল। এমনকি, মিডিয়াতে খবর প্রচার হওয়ার পরও বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ৬১ ধারার প্রয়োগ হলো না কেন? ২০১০ সালের ২৭ জুন গঠিত যা রানা প্লাজার ভবন ধসের সময় এমনকি জানা মতে এখনো বিদ্যমান- সেই ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত কোর কমিটি’ ঘুমিয়েছিল কেন? সমস্যা নিরসনে গোটা রাষ্ট্র ঝাঁপিয়ে পড়ার পরও ৩৭০ দিনেও রানা প্লাজায় ধ্বংসস্তূপের ক্ষত শুকানো গেল না কেন? বিভিন্ন তহবিলের মাধ্যমে এ পর্যন্ত যে টাকা পাওয়া গেছে তা যথাযথভাবে বণ্টনের ব্যবস্থা হলেই তো সমস্যার সমাধান দেয়া যেত চমৎকারভাবে। চাকরি খুইয়ে যারা অসহায় হয়ে পড়েছেন তাদের সংস্থান বিজেএমইএর ৫৪০০ সদস্যের কারখানাতে কি হতে পারে না? দুর্ঘটনায় (তাও মালিকের দোষে-) ক্ষতিপূরণ প্রদানের দায়িত্ব মালিকপক্ষের। সরকার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের এলিট শ্রেণীর দায়িত্ব হচ্ছে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা। সহযোগীরা তো আপনাদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন। পোশাক শিল্পের সঙ্কটের চিত্র তুলে ধরে সরকারের কাছ থেকে মালিকরা কর সুবিধা পেয়েছেন দুই হাজার কোটি টাকা (প্রথম আলোর সম্পাদকীয় মতে)। এরপরও এ ক্ষত সারাতে এত ইতস্তত করা কি ন্যায়সঙ্গত? যত দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন ততই আপনাদের মঙ্গল। বিদেশী ক্রেতারাও আমাদের প্রতি ততই আস্থাশীল হবে। শিল্প বেঁচে থাকবে। শ্রমিক রুটি-রুজির সংস্থান পাবে। দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে অর্থনীতির মজবুত ভিত গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
মহান মে দিবস শ্রমিক-মালিক সংহতি রচনার শিক্ষা দেয়। মালিক কর্তৃক শ্রমিককে আস্থায় নেয়ার শিক্ষাও দেয়। মালিকপক্ষকে নিবেদন করতে চাই, শ্রমিককে আস্থায় নিন, শ্রমিককে তার অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ দিন, ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দিন। যথাসময়ে শ্রমিকের সাথে আলোচনার টেবিলে বসুন, শ্রমিক কী বলতে চান শুনুন। ন্যায়সঙ্গত মজুরি দিন। বিদেশের মালিকেরা এসব করতে পারলে আপনারা পারবেন না কেন? এসব ক্ষেত্রে সরকারিভাবে শ্রম ও শিল্প আইন বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের উচিত, মালিকপক্ষকে চোখবুজে সমর্থন না জুগিয়ে যথাসময়ে আইনের যথোপযুক্ত বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া। তাহলেই শ্রম ও শিল্পক্ষেত্রে বিরাজিত সমস্যার দ্রুত নিরসন সম্ভব। এতে অর্থনীতির চাকা সচল হবে। দেশে সমৃদ্ধি আসবে। শ্রমিকও বাঁচবেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

শ্রমজীবী মানুষ কী বলতে চায়, শুনুন

আপডেট টাইম : ০৫:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

মহান মে দিবস। শ্রমিকের দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস। এখন থেকে ১৩১ বছর আগে শ্রমিক তার ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস এবং ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আন্দোলন করে। ধর্মঘটের মাধ্যমে শ্রমিক শ্রেণী ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করতে সক্ষম হয়। এই সার্থক ধর্মঘট ও আন্দোলনের সূত্র ধরে শ্রমিক শ্রেণী লড়াই করে বাঁচার এবং অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হতে শেখে।
মহান মে দিবসের শিক্ষায় ব্রতী হয়ে পৃথিবীর দেশে দেশে শ্রমজীবী মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী এবং নিজেদের দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় শ্রমিক শ্রেণী পৃথিবীর কয়েকটি দেশে নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমে সক্ষম হলেও আইএলও’র ২৬তম অধিবেশনে ১৯৪৪ সালে অর্থাৎ এখন থেকে ৭০ বছর আগে গৃহীত প্রস্তাব বা ফিলাডেলফিয়া ঘোষণা হিসেবে স্বীকৃত- (অ) শ্রমিক শ্রেণী কোনো পণ্য নয়, (আ) প্রগতি বা উন্নয়নের প্রয়োজনে সংগঠন ও মত প্রকার্শে স্বাধীনতা, (ই) উন্নয়নের বা অগ্রগতির পথে দারিদ্র্য প্রতিবন্ধক, (ঈ) অগ্রগতির সোপানকে সার্বজনীন করার প্রয়োজনে ত্রিপক্ষীয়তার নীতির ভিত্তিতে শ্রমিক-মালিক-সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে মুক্ত আলোচনা ও গণতান্ত্রিকতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ সব বিষয়ের সমাধান খোঁজার মতো ন্যূনতম অধিকার অর্জনের সৌভাগ্য হয়নি বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণীর। এই না হওয়ার কারণ হচ্ছে, আমরা প্রকৃত অর্থে মহান মে দিবসের দীক্ষার আলোকে দাবি আদায়ে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে পারিনি। পারিনি আত্মপ্রত্যয়ী হতে। পারিনি লক্ষ্য অর্জনে ত্যাগ স্বীকার করতে। এই না পারার কারণ হচ্ছে, শ্রমিক হিসেবে শ্রমিক শ্রেণীর নিজস্ব শ্রেণীসত্তায় বিকশিত না হতে পারা। ক্রমান্বয়ে শ্রমিক শ্রেণীকে বহুধাবিভক্তিতে ঠেলে দেয়া হয়েছে। খুব সুকৌশলে ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’-এর ক্ষেত্রে ‘জাতীয় বেতন কাঠামো’ ও জাতীয় মজুরি কমিশনে বিভক্তি টেনে এর কার্যকারিতা সরকারি ও আধা সরকারি কর্মচারী ও শ্রমিকের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রেখে বৈষম্যের সৃষ্টি করা হয়। আর ব্যক্তিমালিকানাধীন শ্রমিককে সেক্টরে শ্রেণীবিন্যাস করে ভিন্ন ভিন্ন ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভক্ত করে দেয়া হচ্ছে। এই ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ ১০ শতাংশ মালিকও মানেন না।
বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে নাগরিক অধিকারের বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। সেসব দেশে কর্মচারী ও শ্রমিককে আলাদা না করে, সরকারি বা আধা সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ না করে সর্বস্তরের শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য একটি ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ নির্ধারিত থাকে। তারা এ ধরনের ব্যবস্থা এ জন্যই রাখেন, যাতে খেটে খাওয়া মানুষ প্রাপ্য ন্যূনতম মজুরির ভিত্তিতে অন্তত একজন সভ্য মানুষ হিসেবে তার ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে সক্ষম হন। অর্থাৎ জীবনযাত্রার সর্বনিম্ন মান বজায় রাখার জন্যই ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’। আমাদের শ্রমিকেরা জাতীয় ন্যূনতম মজুরিপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত। বঞ্চিত প্রায় সর্বক্ষেত্রে। বঞ্চিত সামাজিক ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা থেকেও। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দিকে কেউ অঙ্গুলি তুলছেন না। এত বড় ট্র্যাজেডির পরও কেন সত্য আড়ালের চেষ্টা হবে? এ কি রাজনৈতিক অপচেষ্টা, না অন্য কিছু? শ্রমিকের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ সত্ত্বেও কেন সেদিন শ্রমিককে ওই ভবনে কাজ করতে বাধ্য করা হলো? কারা বাধ্য করল? কারা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী? এ ভবন তৈরিতে সার্টিফিকেট দিয়েছিল কে বা কারা? ভবন ধসের দুই দিন আগেই ওই ভবনের ফাটল ধরা নিয়ে হইচই হচ্ছিল। এমনকি, মিডিয়াতে খবর প্রচার হওয়ার পরও বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ৬১ ধারার প্রয়োগ হলো না কেন? ২০১০ সালের ২৭ জুন গঠিত যা রানা প্লাজার ভবন ধসের সময় এমনকি জানা মতে এখনো বিদ্যমান- সেই ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত কোর কমিটি’ ঘুমিয়েছিল কেন? সমস্যা নিরসনে গোটা রাষ্ট্র ঝাঁপিয়ে পড়ার পরও ৩৭০ দিনেও রানা প্লাজায় ধ্বংসস্তূপের ক্ষত শুকানো গেল না কেন? বিভিন্ন তহবিলের মাধ্যমে এ পর্যন্ত যে টাকা পাওয়া গেছে তা যথাযথভাবে বণ্টনের ব্যবস্থা হলেই তো সমস্যার সমাধান দেয়া যেত চমৎকারভাবে। চাকরি খুইয়ে যারা অসহায় হয়ে পড়েছেন তাদের সংস্থান বিজেএমইএর ৫৪০০ সদস্যের কারখানাতে কি হতে পারে না? দুর্ঘটনায় (তাও মালিকের দোষে-) ক্ষতিপূরণ প্রদানের দায়িত্ব মালিকপক্ষের। সরকার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের এলিট শ্রেণীর দায়িত্ব হচ্ছে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা। সহযোগীরা তো আপনাদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন। পোশাক শিল্পের সঙ্কটের চিত্র তুলে ধরে সরকারের কাছ থেকে মালিকরা কর সুবিধা পেয়েছেন দুই হাজার কোটি টাকা (প্রথম আলোর সম্পাদকীয় মতে)। এরপরও এ ক্ষত সারাতে এত ইতস্তত করা কি ন্যায়সঙ্গত? যত দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন ততই আপনাদের মঙ্গল। বিদেশী ক্রেতারাও আমাদের প্রতি ততই আস্থাশীল হবে। শিল্প বেঁচে থাকবে। শ্রমিক রুটি-রুজির সংস্থান পাবে। দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে অর্থনীতির মজবুত ভিত গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
মহান মে দিবস শ্রমিক-মালিক সংহতি রচনার শিক্ষা দেয়। মালিক কর্তৃক শ্রমিককে আস্থায় নেয়ার শিক্ষাও দেয়। মালিকপক্ষকে নিবেদন করতে চাই, শ্রমিককে আস্থায় নিন, শ্রমিককে তার অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ দিন, ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দিন। যথাসময়ে শ্রমিকের সাথে আলোচনার টেবিলে বসুন, শ্রমিক কী বলতে চান শুনুন। ন্যায়সঙ্গত মজুরি দিন। বিদেশের মালিকেরা এসব করতে পারলে আপনারা পারবেন না কেন? এসব ক্ষেত্রে সরকারিভাবে শ্রম ও শিল্প আইন বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের উচিত, মালিকপক্ষকে চোখবুজে সমর্থন না জুগিয়ে যথাসময়ে আইনের যথোপযুক্ত বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া। তাহলেই শ্রম ও শিল্পক্ষেত্রে বিরাজিত সমস্যার দ্রুত নিরসন সম্ভব। এতে অর্থনীতির চাকা সচল হবে। দেশে সমৃদ্ধি আসবে। শ্রমিকও বাঁচবেন।