আগাম বন্যায় সর্বস্ব হারিয়েছে হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। প্রায় সব হাওরই ডুবে গেছে। কৃষকদের সারা বছরের সারা বছরের চাহিদা মেটাত যে বোরো ধান তা ডুবে গিয়ে নষ্ট হওয়ায় তারা এখন দিশেহারা। হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল ভেসে গেছে বানের জলে। হাওরের বেশির ভাগ এলাকায় একটি ফসল ফলে। কিন্তু অসময়ের বন্যায় তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সারা বছর তাদের কিভাবে চলবে তা নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ফসলি হাওরের সংখ্যা ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪২। সব হাওরই ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে দেড় লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান। এবার জেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। এর বাইরে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় কৃষকেরা বলেছেন, আবাদ করা ধানের প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাওরাঞ্চলের দুর্গত মানুষদের জন্য সরকার পরিবারপ্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এই সাহায্য সেখানকার পরিবারগুলোর বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়। দ্রুত ব্যাপকভিত্তিক ত্রাণ কার্যক্রম শুরু না করলে হাওরবাসীর দুর্দশা আরো বাড়বে। এদিকে হাওর এলাকায় পানীয়জলের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে পানিবাহিত রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় প্রশাসন দুর্গতদের তালিকা তৈরি করছে। কিন্তু সে তালিকায় নাম থাকবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে দুর্গতদের মধ্যে। ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা এত কম যে অনেককে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ত্রাণ কার্যক্রমে কোনো গতি নেই। প্রশাসনের একধরনের উদাসীনতা লক্ষ করা যায়।
অভিযোগ রয়েছে, হাওরের লাখ লাখ মানুষের জীবন সংকটে। অথচ প্রশাসনের তৎপরতা নগন্য। দুর্গতদের রক্ষার বিষয়ে পদক্ষেপ, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। প্রশাসনের একটি অংশের গাফিলতি ও দুর্নীতির কারণে হাওরের এই দুরবস্থা বলে অভিযোগ রয়েছে। হাওরবাসীর মতে, পানি উন্নয়ন বোর্ড সময়মতো বেড়িবাঁধ মেরামত করলে আগাম বন্যায় এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না তাদের।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ, ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত এবং কী ধরনের ও কী পরিমাণ সাহায্যের প্রয়োজন, তার হিসেব তৈরি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এই মৌসুমের ফসল যেহেতু শেষ তাই আগামী ফসল কিংবা কৃষকদের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সাহায্য জুগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
যেখানে লাখ লাখ মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত, সেখানে প্রশাসনের আরো বেশি সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। দুঃখ দুর্দশা দূর করতে হবে হাওরবাসীর। এগিয়ে আসতে হবে জনপ্রতিনিধিদেরও। দ্রুত প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের হাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি কিংবা দুর্নীতি যাতে না হয় সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। যেকোনো ধরনের অবহেলা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।