ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ১৫ দিন পরও আসেনি সহায়তা

‘ফসলহারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনামুল্যে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি হাওরাঞ্চলের কৃষকদের গবাদিপশুর জন্য সরকারিভাবে গো-খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন ঘোষণা দিলেও গতকাল রোববার পর্যন্ত কোন নির্দেশনা পায়নি সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস।
উল্লেখ্য, গত ৩০ এপ্রিল সুনামগঞ্জের শাল্লায় বোরো ফসলহারা ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন,‘ হাওরের বোরো ফসলহারা কৃষকদের ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি কৃষকদের গবাদিপশুর জন্য গো-খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। ’
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও আগাম বন্যা কবলিত সুনামগঞ্জের গবাদিপশুর জন্য গো-খাদ্য সহায়তা আসেনি। গতকাল রোববার পর্যন্ত কোন নির্দেশনা পায়নি জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস। যদিও গত শুক্রবার থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সারা জেলায় ২৫ কেজি ওজনের ৮০০ ব্যাগ প্রক্রিয়াজাত গো-খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে গো-খাদ্য সহায়তা কবে আসবে তা জানেন না সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগাম বন্যায় এবার সুনামগঞ্জে বন্যা কবলিত গরুর সংখ্যা ৪ লাখ ৭৯ হাজার, মহিষের সংখ্যা ১২৫০, ছাগল ৬৮ হাজার ৫০০, ভেড়ার সংখ্যা ৩২ হাজার ৪৫০, পাতি হাঁসের সংখ্যা ১২ লাখ ১০ হাজার, মোরগ ৯ লাখ ৬২ হাজার। কিন্তু বন্যা কবলিত এসব গবাদিপশুর কোন খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায়নি।
শাল্লা উপজেলা সদরের ডুমরা গ্রামের কৃষক রবীন্দ্র সরকার বলেন,‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন কৃষকদের গবাদিপশুর জন্য সরকারিভাবে গো-খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ১৫ দিন হলেও এখন পর্যন্ত কোন ধরনের সহায়তা আসে নাই।’
একই উপজেলার শাল্লা ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের কৃষক মোহন মিয়া বলেন,‘ অসময় আওর তল অইয়া ধান ও গরুর ঘাস সব পানিত গেছে। সরকার তাইক্কা গরু-বাছুরের খানি দিব, ইতা অনেক দূরের কথা। মানুষের খানিই তো ঠিকমত পাওয়া যায় না। চেয়ারম্যান-মেম্বার দেইক্কা-দেইক্কা ভিজিএফের কার্ড দিতাছে। আমরার এলাকার কেউ অখনও গরু-বাছুরের খানি পাইছে না।’
ধর্মপাশার গোরমার হাওর পাড়ের সরস্বতীপুর গ্রামের স্বাবলম্বী কৃষক এনামুল হক এনাম বলেন,‘আমাদের হাওরডুবির দেড় মাস হয়ে গেছে। গরু-বাছুর নিয়ে মহা বিপদে আছি। ১২০০ মণ ধান পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হাওর ডুবে যাওয়ায় বাড়িতে এক ছটাক ধান নেই, পাশাপাশি গরুরও কোন ঘাস নেই। মানুষের চেয়ে গরু-বাছুর পালন করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৮টি গরুর মধ্যে ৪টি বিক্রয় করে চাল কিনেছি। এখন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে আছি, এখানে খড় কিনতে এসেছি।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন,‘ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খাদ্য সহায়তা হিসাবে চাল ও নগদ টাকা দেয়া হচ্ছে। তবে কৃষকদের গবাদিপশুর জন্য সরকারিভাবে গো-খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য রবিবার পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আসেনি।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বেলাল হোসেন বলেন,‘ জেলায় আগাম বন্যা কবলিত গবাদিপশুর (গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ভেড়া ও মহিষের) তালিকা আমরা জেলা প্রশাসনকে দিয়েছি। আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের চাহিদার চিঠি পাঠিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের গবাদিপশুর জন্য সরকারিভাবে গো-খাদ্য প্রদানের কোন নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোন চিঠিপত্র আসে নাই। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মাত্র ৮০০ ব্যাগ গো-খাদ্য পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় তা জেলার সকল উপজেলায় বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারি সহায়তা আসা মাত্রই আমরা তা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা করব।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ১৫ দিন পরও আসেনি সহায়তা

আপডেট টাইম : ০৩:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ মে ২০১৭

‘ফসলহারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনামুল্যে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি হাওরাঞ্চলের কৃষকদের গবাদিপশুর জন্য সরকারিভাবে গো-খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন ঘোষণা দিলেও গতকাল রোববার পর্যন্ত কোন নির্দেশনা পায়নি সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস।
উল্লেখ্য, গত ৩০ এপ্রিল সুনামগঞ্জের শাল্লায় বোরো ফসলহারা ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন,‘ হাওরের বোরো ফসলহারা কৃষকদের ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি কৃষকদের গবাদিপশুর জন্য গো-খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। ’
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও আগাম বন্যা কবলিত সুনামগঞ্জের গবাদিপশুর জন্য গো-খাদ্য সহায়তা আসেনি। গতকাল রোববার পর্যন্ত কোন নির্দেশনা পায়নি জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস। যদিও গত শুক্রবার থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সারা জেলায় ২৫ কেজি ওজনের ৮০০ ব্যাগ প্রক্রিয়াজাত গো-খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে গো-খাদ্য সহায়তা কবে আসবে তা জানেন না সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগাম বন্যায় এবার সুনামগঞ্জে বন্যা কবলিত গরুর সংখ্যা ৪ লাখ ৭৯ হাজার, মহিষের সংখ্যা ১২৫০, ছাগল ৬৮ হাজার ৫০০, ভেড়ার সংখ্যা ৩২ হাজার ৪৫০, পাতি হাঁসের সংখ্যা ১২ লাখ ১০ হাজার, মোরগ ৯ লাখ ৬২ হাজার। কিন্তু বন্যা কবলিত এসব গবাদিপশুর কোন খাদ্য সহায়তা পাওয়া যায়নি।
শাল্লা উপজেলা সদরের ডুমরা গ্রামের কৃষক রবীন্দ্র সরকার বলেন,‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন কৃষকদের গবাদিপশুর জন্য সরকারিভাবে গো-খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ১৫ দিন হলেও এখন পর্যন্ত কোন ধরনের সহায়তা আসে নাই।’
একই উপজেলার শাল্লা ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের কৃষক মোহন মিয়া বলেন,‘ অসময় আওর তল অইয়া ধান ও গরুর ঘাস সব পানিত গেছে। সরকার তাইক্কা গরু-বাছুরের খানি দিব, ইতা অনেক দূরের কথা। মানুষের খানিই তো ঠিকমত পাওয়া যায় না। চেয়ারম্যান-মেম্বার দেইক্কা-দেইক্কা ভিজিএফের কার্ড দিতাছে। আমরার এলাকার কেউ অখনও গরু-বাছুরের খানি পাইছে না।’
ধর্মপাশার গোরমার হাওর পাড়ের সরস্বতীপুর গ্রামের স্বাবলম্বী কৃষক এনামুল হক এনাম বলেন,‘আমাদের হাওরডুবির দেড় মাস হয়ে গেছে। গরু-বাছুর নিয়ে মহা বিপদে আছি। ১২০০ মণ ধান পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হাওর ডুবে যাওয়ায় বাড়িতে এক ছটাক ধান নেই, পাশাপাশি গরুরও কোন ঘাস নেই। মানুষের চেয়ে গরু-বাছুর পালন করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৮টি গরুর মধ্যে ৪টি বিক্রয় করে চাল কিনেছি। এখন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে আছি, এখানে খড় কিনতে এসেছি।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন,‘ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খাদ্য সহায়তা হিসাবে চাল ও নগদ টাকা দেয়া হচ্ছে। তবে কৃষকদের গবাদিপশুর জন্য সরকারিভাবে গো-খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য রবিবার পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আসেনি।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বেলাল হোসেন বলেন,‘ জেলায় আগাম বন্যা কবলিত গবাদিপশুর (গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ভেড়া ও মহিষের) তালিকা আমরা জেলা প্রশাসনকে দিয়েছি। আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের চাহিদার চিঠি পাঠিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের গবাদিপশুর জন্য সরকারিভাবে গো-খাদ্য প্রদানের কোন নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোন চিঠিপত্র আসে নাই। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মাত্র ৮০০ ব্যাগ গো-খাদ্য পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় তা জেলার সকল উপজেলায় বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারি সহায়তা আসা মাত্রই আমরা তা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা করব।’