ঢাকা , রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২২ হাজার পরিবার চাল ক্রয় থেকে বঞ্চিত হবেন

সুনামগঞ্জের ফসলহারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) খোলাবাজারে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি আজ বুধবার থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে করে জেলার ২২ হাজার দরিদ্র পরিবার প্রতিদিন কম মূল্যে ৫ কেজি করে চাল ক্রয় করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।
ওএমএস কার্যক্রম সুনামগঞ্জের জন্য নিয়মিত চালু রাখার জন্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা প্রশাসক ইতোমধ্যে খাদ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখলেও গতকাল মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আসেনি।
নতুন করে আবারো এই কর্মসূচি চালু হবে কি না তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা প্রশাসক। চাল বিক্রির ওএমএস কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সংবাদে হতাশ হয়েছেন হাওরপাড়ের হতদরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। যত দ্রুত সম্ভব এই কার্যক্রম আবারও চালু দাবি জানিয়েছেন, হাওরপাড়ের সাধারণ মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের বোরো ফসলহানির পর গত ৯ এপ্রিল থেকে সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার ৪২ জন ডিলারের মাধ্যমে জেলা শহরসহ ৪২ টি পয়েন্টে ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) খোলাবাজারে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল ও ১৭ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী মাত্র দুই মাসের
(এপ্রিল ও মে)  জন্য এই কার্যক্রম চালু করা হয়। শুরুতে ৪২ জন ডিলার প্রতিদিন ১ মে. টন চাল ও ১ মে. টন আটা বিক্রি করতেন। যে কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে ৫ কেজি চাল ও ৫ কেজি আটা কিনতে পারতেন। কিন্তু সুনামগঞ্জে আটার চাহিদা না থাকায় ৩০ এপ্রিল আটা বিক্রি বন্ধ করা হয়। জেলার বিভিন্ন সংগঠনসহ কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ৯ মে থেকে ৪২ জন ডিলারের স্থলে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ডিলার নিয়োগ করে পৌরসভাসহ মোট ১১০ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়। ১১০ জন ডিলার বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন ১ মে. টন ( ১ হাজার কেজি) চাল প্রত্যেকের মাঝে ৫ কেজি করে বিক্রি করতেন। এতে জেলার ২২ হাজার দরিদ্র পরিবার প্রতিদিন ৫ কেজি করে চাল কেনার সুযোগ পেত। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী মাত্র দুই মাসের (এপ্রিল ও মে)  জন্য এই কার্যক্রম আজ বুধবার শেষ হয়ে যাবে। নতুন করে এই কার্যক্রম আবারো শুরু হবে কি না তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মোস্তফা।
ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের কৃষক আলী আহমদ বলেন,‘ আমি একদিন পর পর মধ্যনগর বাজার থাইক্কা ১৫ টেকার কেজির চাউল কিনি। এই চাউল বেচা বন্ধ অইয়া গেলে আমরা বিপদও পড়মু। ঘরও কোন ধান নাই, বেশী টেকার চাউল কিনমু কেমনে ? আমরার উপাস থাকন লাগবও। ’
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক অ্যাড. বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন,‘ দরিদ্র মানুষের জন্য চালু করা ওএমএস কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। যদি এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় তাহলে হাওরাঞ্চলের অনেক মানুষকেই না খেয়ে থাকতে হবে। কারণ একজন কৃষকের পকেটেও বাজার থেকে বেশী দামে চাল কেনার মত অর্থ নেই। সুনামগঞ্জের জন্য ওএমএস নিয়মিত চালু রাখার জন্য আমরা জোর দাবি জানাই।’
জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ওএমএস ডিলার আকবর হোসেন বলেন,‘বোরো ফসলহানির পর ওএমএস কার্যক্রম চালু হওয়ায় কৃষকসহ দরিদ্র পরিবারের লোকজন কম মূল্যে চাল করার সুযোগ পেয়েছিল। যদি এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে তাহলে অনেকেই বেশী দামে বাজার থেকে চাল কিনতে পারবেন না।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মোস্তফা বলেন,‘হাওরের ফসলহানির পর ওএমএস কার্যক্রম চালুর জন্য আমরা খাদ্য অধিদপ্তর থেকে আমরা ৬ এপ্রিল চিঠি পেয়েছিলাম। ৯ এপ্রিল থেকে জেলার ৪২ জন ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন ৪২ টন চাল ও ৪২ টন আটা বিক্রি শুরু হয়। পরে ৯ মে ডিলার সংখ্যা ইউনিয়ন পর্যায়ে বাড়িয়ে ১১০ জন করা হয়। অধিদপ্তরের পূর্বের চিঠি অনুযায়ী আজ বুধবার এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। এই কার্যক্রম নিয়মিত রাখার জন্য আমরা খাদ্য অধিদপ্তরে চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু ওএমএসের কার্যক্রম নিয়মিত করা হবে কিনা তার কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে আমরা আশা করি খুব দ্রুতই কিছু জানা যাবে। ’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন,‘ ওএমএস চাল বিক্রির কার্যক্রম সুনামগঞ্জের জন্য নিয়মিত চালু রাখার জন্য আমি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে কথা বলব। যাতে এই কার্যক্রমটি সুনামগঞ্জের জন্য নিয়মিত রাখা হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

২২ হাজার পরিবার চাল ক্রয় থেকে বঞ্চিত হবেন

আপডেট টাইম : ০৫:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০১৭

সুনামগঞ্জের ফসলহারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) খোলাবাজারে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি আজ বুধবার থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে করে জেলার ২২ হাজার দরিদ্র পরিবার প্রতিদিন কম মূল্যে ৫ কেজি করে চাল ক্রয় করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।
ওএমএস কার্যক্রম সুনামগঞ্জের জন্য নিয়মিত চালু রাখার জন্য জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা প্রশাসক ইতোমধ্যে খাদ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখলেও গতকাল মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আসেনি।
নতুন করে আবারো এই কর্মসূচি চালু হবে কি না তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও জেলা প্রশাসক। চাল বিক্রির ওএমএস কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সংবাদে হতাশ হয়েছেন হাওরপাড়ের হতদরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। যত দ্রুত সম্ভব এই কার্যক্রম আবারও চালু দাবি জানিয়েছেন, হাওরপাড়ের সাধারণ মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের বোরো ফসলহানির পর গত ৯ এপ্রিল থেকে সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার ৪২ জন ডিলারের মাধ্যমে জেলা শহরসহ ৪২ টি পয়েন্টে ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) খোলাবাজারে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল ও ১৭ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী মাত্র দুই মাসের
(এপ্রিল ও মে)  জন্য এই কার্যক্রম চালু করা হয়। শুরুতে ৪২ জন ডিলার প্রতিদিন ১ মে. টন চাল ও ১ মে. টন আটা বিক্রি করতেন। যে কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে ৫ কেজি চাল ও ৫ কেজি আটা কিনতে পারতেন। কিন্তু সুনামগঞ্জে আটার চাহিদা না থাকায় ৩০ এপ্রিল আটা বিক্রি বন্ধ করা হয়। জেলার বিভিন্ন সংগঠনসহ কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ৯ মে থেকে ৪২ জন ডিলারের স্থলে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ডিলার নিয়োগ করে পৌরসভাসহ মোট ১১০ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়। ১১০ জন ডিলার বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন ১ মে. টন ( ১ হাজার কেজি) চাল প্রত্যেকের মাঝে ৫ কেজি করে বিক্রি করতেন। এতে জেলার ২২ হাজার দরিদ্র পরিবার প্রতিদিন ৫ কেজি করে চাল কেনার সুযোগ পেত। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী মাত্র দুই মাসের (এপ্রিল ও মে)  জন্য এই কার্যক্রম আজ বুধবার শেষ হয়ে যাবে। নতুন করে এই কার্যক্রম আবারো শুরু হবে কি না তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মোস্তফা।
ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের কৃষক আলী আহমদ বলেন,‘ আমি একদিন পর পর মধ্যনগর বাজার থাইক্কা ১৫ টেকার কেজির চাউল কিনি। এই চাউল বেচা বন্ধ অইয়া গেলে আমরা বিপদও পড়মু। ঘরও কোন ধান নাই, বেশী টেকার চাউল কিনমু কেমনে ? আমরার উপাস থাকন লাগবও। ’
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক অ্যাড. বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন,‘ দরিদ্র মানুষের জন্য চালু করা ওএমএস কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক। যদি এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় তাহলে হাওরাঞ্চলের অনেক মানুষকেই না খেয়ে থাকতে হবে। কারণ একজন কৃষকের পকেটেও বাজার থেকে বেশী দামে চাল কেনার মত অর্থ নেই। সুনামগঞ্জের জন্য ওএমএস নিয়মিত চালু রাখার জন্য আমরা জোর দাবি জানাই।’
জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ওএমএস ডিলার আকবর হোসেন বলেন,‘বোরো ফসলহানির পর ওএমএস কার্যক্রম চালু হওয়ায় কৃষকসহ দরিদ্র পরিবারের লোকজন কম মূল্যে চাল করার সুযোগ পেয়েছিল। যদি এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে তাহলে অনেকেই বেশী দামে বাজার থেকে চাল কিনতে পারবেন না।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মোস্তফা বলেন,‘হাওরের ফসলহানির পর ওএমএস কার্যক্রম চালুর জন্য আমরা খাদ্য অধিদপ্তর থেকে আমরা ৬ এপ্রিল চিঠি পেয়েছিলাম। ৯ এপ্রিল থেকে জেলার ৪২ জন ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন ৪২ টন চাল ও ৪২ টন আটা বিক্রি শুরু হয়। পরে ৯ মে ডিলার সংখ্যা ইউনিয়ন পর্যায়ে বাড়িয়ে ১১০ জন করা হয়। অধিদপ্তরের পূর্বের চিঠি অনুযায়ী আজ বুধবার এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। এই কার্যক্রম নিয়মিত রাখার জন্য আমরা খাদ্য অধিদপ্তরে চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু ওএমএসের কার্যক্রম নিয়মিত করা হবে কিনা তার কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে আমরা আশা করি খুব দ্রুতই কিছু জানা যাবে। ’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন,‘ ওএমএস চাল বিক্রির কার্যক্রম সুনামগঞ্জের জন্য নিয়মিত চালু রাখার জন্য আমি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে কথা বলব। যাতে এই কার্যক্রমটি সুনামগঞ্জের জন্য নিয়মিত রাখা হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।’