ঢাকা , মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাগেরহাটের মুড়ির গ্রাম ‘বারইখালী’

 বাঙালী কণ্ঠঃ  বাগের উপজেলার কচুয়া সদর ইউনিয়নের ‘বারইখালী’ গ্রাম। এ গ্রামের প্রায় অধিকাংশের পেশা মুড়ি তৈরি। গ্রামের দু’শতাধিক পরিবারের জীবন-জীবিকার সঙ্গে মিশে রয়েছে এ শিল্প। বছরজুড়ে মুড়ির চাহিদা থাকলেও রমজান এলে তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাই রোজার আগে থেকেই মুড়ি ভাজার ধুম পড়ে বারইখালী গ্রামে। দিন-রাত সমানে চলছে এখন হাতে তৈরি মুড়ি ভাজার কাজ। ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে এই মুড়ি বিক্রি করা হয়। বাগেরহাটের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা পিরোজপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বাজারেই এই মুড়ি বিক্রি হয়। মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে এসেও মুড়ি কিনে নেয় পাইকাররা। উত্পাদনকারীদের দাবি, বর্তমানে জ্বালানি ও মুড়ির ধানসহ অন্যান্য দ্রব্যের দাম বেশি হওয়ায় মুড়ির উত্পাদন খরচ বেড়ে গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বাড়িতে বাড়িতে এখন মুড়ি তৈরির ধুম। একদিকে চলছে ধান সেদ্ধ, ভেজানো ও উঠানে শুকানোর কাজ। অন্যদিকে পাশাপাশি চুলায় ভেজা চাল আর বালি উত্তপ্ত করে চলছে মুড়ি তৈরি। বারইখালী গ্রামের প্রতিটি বাড়ির চিত্রই এখন এমন। মনি সাহা জানান, মুড়ি তৈরির জন্য এই ধান আমরা কিনে আনি, তারপর শুকাই, সেদ্ধ করি। সেদ্ধ করার পর এই ধান দুই রাত এক দিন পানিতে থাকে। তারপর আবার শুকিয়ে বাজারে নিয়ে মিলে ভেঙে চাল করি। এই চাল বাড়িতে এনে খুঁটে-বেছে (পরিষ্কার করে) তারপর মুড়ির চুলা জ্বালাই। এক ধারে বালি থাকে, আরেক ধারে চাল। চাল যখন ভাজতে ভাজতে একটু লাল হয়ে যায় তখন বালির ভেতর দিয়ে নাড়া দিলে মুড়িটা ফোটে। এই মুড়ি ভাজতে কোনো ধরনের রাসায়নিক বা কেমিক্যাল দেওয়া হয় না। শুধু একটু লবণ-পানি দেওয়া হয়। অলক সাহা জানান, আমন মৌসুমে হুগলি, ছালট, গিগজ প্রভৃতি জাতীয় মোটা জাতের মুড়ির ধান সংগ্রহ করেন তারা। এক মণ ধান থেকে (২৯ কেজি চাল) ২৩-২৪ কেজি মুড়ি হয়। দিনে একেকটি পরিবার প্রায় ২৫ কেজি মুড়ি উত্পাদন করতে পারে। রোজার সময় চাহিদা বাড়ায় বরিশাল এবং ঢাকায়ও এই মুড়ি কিনে নেয় পাইকাররা। বারইখালী গ্রামের সাহাপাড়া এলাকার গোবিন্দ সাহা জানান, আগে এ এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মুড়ি ভাজা হতো। মেশিনের মুড়ি আসায় গ্রামে মুড়ি উত্পাদন কমে গেছে। আমাদের গ্রাম ছাড়াও পাশের চরকাঠি গ্রামের ১৫-২০টি পরিবার এখনও মুড়ি তৈরি করে। বাগেরহাট জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত খান জানান, ‘বাগেরহাটের বারইখালী গ্রামে প্রায় আড়াইশ’ পরিবার মুড়ি উত্পাদন শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এদের কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায় সে বিষয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এখানকার মুড়ি তৈরির কারিগরদের প্রশিক্ষণ এবং সহজশর্তে ঋণ প্রদান করা উচিত। রাসায়নিকমুক্ত এই মুড়ির বাজার সম্প্রসারণ হলে ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি গ্রামীণ এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বাগেরহাটের মুড়ির গ্রাম ‘বারইখালী’

আপডেট টাইম : ০৬:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুন ২০১৭

 বাঙালী কণ্ঠঃ  বাগের উপজেলার কচুয়া সদর ইউনিয়নের ‘বারইখালী’ গ্রাম। এ গ্রামের প্রায় অধিকাংশের পেশা মুড়ি তৈরি। গ্রামের দু’শতাধিক পরিবারের জীবন-জীবিকার সঙ্গে মিশে রয়েছে এ শিল্প। বছরজুড়ে মুড়ির চাহিদা থাকলেও রমজান এলে তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাই রোজার আগে থেকেই মুড়ি ভাজার ধুম পড়ে বারইখালী গ্রামে। দিন-রাত সমানে চলছে এখন হাতে তৈরি মুড়ি ভাজার কাজ। ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে এই মুড়ি বিক্রি করা হয়। বাগেরহাটের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা পিরোজপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বাজারেই এই মুড়ি বিক্রি হয়। মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে এসেও মুড়ি কিনে নেয় পাইকাররা। উত্পাদনকারীদের দাবি, বর্তমানে জ্বালানি ও মুড়ির ধানসহ অন্যান্য দ্রব্যের দাম বেশি হওয়ায় মুড়ির উত্পাদন খরচ বেড়ে গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বাড়িতে বাড়িতে এখন মুড়ি তৈরির ধুম। একদিকে চলছে ধান সেদ্ধ, ভেজানো ও উঠানে শুকানোর কাজ। অন্যদিকে পাশাপাশি চুলায় ভেজা চাল আর বালি উত্তপ্ত করে চলছে মুড়ি তৈরি। বারইখালী গ্রামের প্রতিটি বাড়ির চিত্রই এখন এমন। মনি সাহা জানান, মুড়ি তৈরির জন্য এই ধান আমরা কিনে আনি, তারপর শুকাই, সেদ্ধ করি। সেদ্ধ করার পর এই ধান দুই রাত এক দিন পানিতে থাকে। তারপর আবার শুকিয়ে বাজারে নিয়ে মিলে ভেঙে চাল করি। এই চাল বাড়িতে এনে খুঁটে-বেছে (পরিষ্কার করে) তারপর মুড়ির চুলা জ্বালাই। এক ধারে বালি থাকে, আরেক ধারে চাল। চাল যখন ভাজতে ভাজতে একটু লাল হয়ে যায় তখন বালির ভেতর দিয়ে নাড়া দিলে মুড়িটা ফোটে। এই মুড়ি ভাজতে কোনো ধরনের রাসায়নিক বা কেমিক্যাল দেওয়া হয় না। শুধু একটু লবণ-পানি দেওয়া হয়। অলক সাহা জানান, আমন মৌসুমে হুগলি, ছালট, গিগজ প্রভৃতি জাতীয় মোটা জাতের মুড়ির ধান সংগ্রহ করেন তারা। এক মণ ধান থেকে (২৯ কেজি চাল) ২৩-২৪ কেজি মুড়ি হয়। দিনে একেকটি পরিবার প্রায় ২৫ কেজি মুড়ি উত্পাদন করতে পারে। রোজার সময় চাহিদা বাড়ায় বরিশাল এবং ঢাকায়ও এই মুড়ি কিনে নেয় পাইকাররা। বারইখালী গ্রামের সাহাপাড়া এলাকার গোবিন্দ সাহা জানান, আগে এ এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মুড়ি ভাজা হতো। মেশিনের মুড়ি আসায় গ্রামে মুড়ি উত্পাদন কমে গেছে। আমাদের গ্রাম ছাড়াও পাশের চরকাঠি গ্রামের ১৫-২০টি পরিবার এখনও মুড়ি তৈরি করে। বাগেরহাট জেলা বাজার কর্মকর্তা সুজাত খান জানান, ‘বাগেরহাটের বারইখালী গ্রামে প্রায় আড়াইশ’ পরিবার মুড়ি উত্পাদন শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এদের কীভাবে সহায়তা দেওয়া যায় সে বিষয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এখানকার মুড়ি তৈরির কারিগরদের প্রশিক্ষণ এবং সহজশর্তে ঋণ প্রদান করা উচিত। রাসায়নিকমুক্ত এই মুড়ির বাজার সম্প্রসারণ হলে ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি গ্রামীণ এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।