বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কালীগঞ্জের নিয়ামতপুর ইউনিয়নের মহেশ্বরচাঁদা গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন (৭০) এক ধান থেকে দুই চালের জাত আবিষ্কার করে চমক সৃষ্টি করেছেন। তিনি এ ধানের নাম দিয়েছেন ‘মকবুল ধান’।
এমনিতে কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট (জৈব সার) উৎপাদন, জৈব বালাইনাশক, ঔষধি গাছ রোপণ ও উন্নত মানের ধান আবিষ্কার করে দিন বদল করেছেন কৃষক মকবুল।
তিনি এখন বাংলাদেশে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত ফসল উৎপাদনের স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বয়োবৃদ্ধ মকবুল ফেনী, নোয়াখালী, রংপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, বরগুনা, ফেনী, হবিগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নরসিংদী, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন।
কৃষিতে এসব করেই থেমে থাকেননি তিনি, নিজ নামে আবিষ্কার করা মকবুল ধান থেকে তিনি একসঙ্গে দুটি চাল পাওয়ার উপায় বের করেছেন। তার এই আবিষ্কার ঝিনাইদহ জেলাসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বিভিন্ন জেলার মানুষ ১০০ টাকা কেজি দরে তার কাছ থেকে এ ধান সংগ্রহ করে তা চাষ করছেন।
পাশাপাশি ধান গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে তার আবিষ্কৃৃত ধান সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। ধান আবিষ্কার সম্পর্কে মকবুল জানান, ২০০৬ সালের দিকে মাঠের বিভিন্ন খেত থেকে ১৫টি বাইল বা ছড়া সংগ্রহ করেন।
তার সেই ধানগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর একটি ধানের মধ্যে দুটি চাল দেখতে পান।
এরপর সেই ধানের চারা জমিতে রোপণ করে সফলতা পান। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ভারপ্রাপ্ত) উপ-পরিচালক ড. খান মো. মনিরুজ্জামান বলেন, গ্রামে কৃষক মকবুলের ধানেও ভালো ফলন দেখছি। এরই মধ্যে তার ধান পরীক্ষার জন্য গবেষণা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
মকবুল হোসেন জানান, স্বাধীনতার পর থেকে তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান রফিউদ্দিনের বাড়িতে মাইনে থেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ছেলে-মেয়ে-মাসহ ছয়জনের সংসারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। আশানুরূপ রোজগার না হওয়ায় রিকশা চালানো শুরু করেন। তাতেও জীবন দুর্বিষহ হতে থাকে। এরপর গ্রামে ফিরে তিনি মনে মনে পরিকল্পনা করেন- কিছু একটা করতে হবে। গ্রামের কৃষকদের নিয়ে তিনি গ্রামের হাটখোলায় একটি কৃষি ক্লাব গড়ে তোলেন। সেখানে এলাকার কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়।
১৯৮২ সালের দিকে কৃষিবিদ ড. গুল হোসেন ও ইউএনডিপির কর্মকর্তা নাইমুজ্জামান মুক্তা মহেশ্বরচাঁদা গ্রামে এসে আধুনিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে যান। তাদের কাছ থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির প্রযুক্তি গ্রহণ করেন। ওই বছরে তিনি ইট দিয়ে প্লান্ট তৈরি করে তার মধ্যে গোবর ও লতা-পাতা ময়লা-আবর্জনার স্তূপ তৈরি করে বিশেষ প্রজাতির কেঁচো ছেড়ে দেন।
তারপর ময়লা স্তূপের মধ্যে কেঁচো বংশবিস্তার করে পচা গোবর খেয়ে মলত্যাগ করতে থাকে। পরে কেঁচোর এই মল রোদে শুকিয়ে অধিক উর্বরা শক্তি তৈরি করেন। ২০০৫ সালে যশোর মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রে তার এ জৈব সার পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়া হয়।
বাজারের যেসব টিএসপি পাওয়া যায় তার মান ৪৫%, অন্যদিকে ভার্মি কম্পোস্ট সারের মান ৮৫% (সার্বিক)। বর্তমানে তার তৈরি এ সারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে আরও প্লান্ট বাড়ানো হয়েছে। এখন তিনি নিজের চাহিদা মেটানোর পর অন্য কৃষকদের মাঝে বিক্রি করছেন। এতে করে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। প্রতি কেজি সার ১২-১৫ টাকা দরে বিক্রি করেন। যা থেকে বছরে প্রায় দেড় দুই-লাখ টাকা আয় করছেন।