বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নবান্নের পূর্ব মুহূর্তে কার্তিকে নিম্নচাপের কবলে পড়েছে সামগ্রিক কৃষি। নিম্নচাপের প্রভাবে অবিরাম বর্ষণে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে রোপা আমন ধান ও সবজির। অনিশ্চিত হচ্ছে ডাল ও তেলজাতীয় ফসল আবাদ। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, অন্তত ১৫ বছরের মধ্যে এমন রেকর্ড পরিমাণ কার্তিক মাসে ৩ দিনের ব্যবধানে দিনরাত সমানতালে অঝোরে আষাঢ়ের মতো বাদল নামেনি। সারাদেশে রোপা আমন ধান আর ক’দিন পরই কাটা শুরু হওয়ার কথা। এই সময়ে গত ৩ দিনের অঝোর ধারার বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় প্রায় ৩০/৪০ ভাগ পাকা ধান মাটিতে পড়ে গেছে। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা সমন্বিত উদ্যোগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মাঠে নেমে মাটিতে নুইয়ে পড়া ও পানিতে ডুবে যাওয়া পাকা ধান ঝুটি বেধে রক্ষা করার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। যে পাকা ধান ঝুটি বেধে পানির উপর তোলা সম্ভব হবে না তার অধিকাংশই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক জাতের পাকা ধান টানা ৩দিন পানিতে থাকলে অঙ্কুরোদগম হয়ে যায়।
কৃষি সপ্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ গোলাম মারুফ গতকাল মুঠেফোনে বাঙালী কণ্ঠকে জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে আকস্মিক অবিরাম বর্ষণে রোপা আমন ধান ও সবজি আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে এখনো বলা যাবে না, বলা যেতে পারে ক্ষতির আশংকা। সারাদেশের কৃষি কর্মকর্তারা এখন দিনরাত বৃষ্টির মধ্যেও মাঠে নেমে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন কিভাবে ফসল রক্ষা করা যায়। আমি মাঠপর্যায়ের কৃষিকর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি মাঠে নেমে কৃষকের পাশে যেতে। তিনি বলেন, বাঙালী কণ্ঠ আমার বরাত দিয়ে দু’দিন আগে লিখেছে রোপা আমন ধানের ফলন হবে। কৃষকরাও খুব খুশী ছিল। এভাবে হঠাৎ আঘাত আসবে কল্পনাও করতে পারেনি। বর্ষণ আর ঝড়ো হাওয়ায় পাকা ধান কাটার মুহূর্তে মাটিতে পড়ে যাওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে আপল্যান্ডের জন্য এই বৃষ্টি রিচার্জ হয়েছে এবং বাদামী ফড়িংসহ পোকা মাকড়ের উপদ্রব থেকে ফসল রক্ষা হয়েছে এটি বলা যায়। তিনি বলেন, হেড অফিস থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। কিভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করা যায় তার উপায় খোঁজা হচ্ছে। তবে আর বৃষ্টি না হলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে আশা করি। আমাদের দেশের কৃষকরা প্রতিমুহুর্র্তে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা সমস্যা মোকাবিলা করেই কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এবারও কৃষকরা সফল হবেন ইনশাআল্লাহ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সারাদেশে কোথাও পাকা ধান কাটার স্টেজে, কোথাও দুধস্টেজে ছিল রোপা আমন ধান। মাঠের চিত্র হচ্ছে কৃষকদের কষ্টের ফসল আকস্মিক অবিরাম বর্ষণে কমবেশী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মাথায় হাত উঠেছে। শীতকালীন সবজির বীজতলা নষ্ট হয়েছে বৃষ্টিতে। বর্ষণে মাঠ খাল বিল পানিতে একাকার হওয়ায় এই মৌসুমে দেশের অনেক এলাকায় ডাল ও তেলজাতীয় ফসলের আবাদ সম্ভব না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। যদিও কোন কোন এলাকায় আবাদ হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। আবার আবাদ যদি সম্ভব হয় তবে তা হবে খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সারাদেশে সামগ্রিক কৃষির কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারেনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে বলেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি তো হয়েছে কমবেশী। এখন ফসল রক্ষার কাজে সবাই ব্যতিব্যস্ত। নিরুপণ শেষে ক্ষতির হিসাবটা পরে জানানো যাবে। এখন একটাই প্রত্যাশা আগে ফসল রক্ষা হোক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক চন্ডিদাস কুন্ডু জানান, গত ৩দিনের অবিরাম বর্ষণ বিশেষ করে বিল ও নিম্নাঞ্চলের জমির ধান পানিতে ও মাটিতে পড়ে গেছে। পাকা ধান মাথা ভারি হয় এবং গোড়া নরম থাকে। বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় নুইয়ে পড়েছে। এখন পাটকাঠির আটির মতো ঝুটি বেধে ধান রক্ষার চেষ্টা চলছে। সুত্র জানায়, সারাদেশের মধ্যে সবজি উৎপাদনে রেকর্ডের জেলা যশোরে অতিবর্ষণে সবজির বেশ কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। শীতকালীন সবজির বীজতলা, আগাম আবাদের মুলা, পাতা কপি, ফুলকপি, কাচা মরিচ, পেঁপেসহ সবজির ক্ষতি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ ড. সুনীল কুমার রায় জানান, এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কারোরই হাত নেই। আমরা দুর্যোগ মোকাবিলার চেণ্টা করছি। তিনি জানান, আমি যতদুর জেনেছি রাজশাহী, ভোলা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, নওগা, মাগুরা, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিম্নচাপের প্রভাবে অবিরাম বর্ষণে রোপা আমন ধান ও সবজির ক্ষতির আশংকায় আছে। যশোরের সবজি আবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, সবজির যেসব জমি পানিবদ্ধ হয়েছে। কোদাল দিয়ে মাটি কেটে পানি সরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উচু জমির সবজির কোন ক্ষতি হয়নি। তবে নীচু জমিতে যেসব কৃষক সবজি আবাদ করেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, যশোরে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২শ’২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। এটি নিম্নচাপের কারণে হয়েছে। সাধারণত কার্তিকে এমন বর্ষণ হয় না। মাঠে কর্মরত যশোরের সবজি ভান্ডার বারীনগরের সবজি চাষি লিয়াকত হোসেন জানান, এই বৃষ্টিতে আমাদের সর্বনাশ ঘটে গেল। সবজির বীজতলা আবার নতুন করে করতে হবে। অনেক সবজি নষ্ট হয়েছে। যদিও পানি সরানোর কাজ করছি। আর যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে কিছুটা রক্ষা। যশোরের শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের শালকোনা গ্রামের কৃষক বাবুল আকতার জানান, রোপা আমন ধান মাটিতে পড়ে যাওয়ায় রক্ষার কাজে ব্যস্ত।
সংবাদ শিরোনাম :
শেরপুরে বন্যার পানিতে শিশুর মৃত্যু
১৫ অক্টোবর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ
চিকিৎসায় নোবেল পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিজ্ঞানী
রাজধানীতে তুমুল বৃষ্টি, জলজটে ভোগান্তি
এইচএসসির ফল জানা যাবে যেদিন
পাকিস্তানে এসে সব দল চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলবে: পিসিবি চেয়ারম্যান
ময়মনসিংহে উজানের পানি নামছে, ভাটিতে নতুন এলাকা প্লাবিত
জাহেলি যুগ ও বর্তমান সমাজ
১৫ বছরে টাকায় ধস : ৬৭ টাকার ডলার ছাড়ায় ১২০ টাকা
শেষ ম্যাচে রেকর্ড গড়তেই নামবেন মেসিরা
অকাল বৃষ্টিতে কৃষির ক্ষতি
- বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্ক
- আপডেট টাইম : ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ অক্টোবর ২০১৭
- 346
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ