বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ব্যক্তিভেদে ঝালের সহ্য ক্ষমতা ভিন্ন হয়ে থাকে। ঝাল মরিচের ঝালের মাত্রা পরিমাপ করার জন্য স্কোভাইল স্কেল ব্যবহার করা হয়।
স্কোভাইল স্কেলের নামকরণ করা হয় এ স্কেলের আবিষ্কারক এবং আমেরিকার প্রখ্যাত ফার্মাসিস্ট উলবার স্কোভাইলের নামানুসারে। মরিচে ঝালের মাত্রা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে প্রজাতিভেদে। তবে জলবায়ু (আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা), মাটির গঠন, সারের ধরন সহ অন্যান্য কারণও কিছু ক্ষেত্রে ঝালে তফাৎ তৈরি করে। এ প্রতিবেদনে বিশ্বের ঝাল মরিচ নিয়ে আলোকপাত করা হল।
১০. বেল পিপার: ০ স্কোভাইল ইউনিট
বেল পিপারকে সুইট পিপারও বলা হয়। এ মরিচ স্কোভাইল স্কেলে মোটেই রেজিস্টার হয় না। এ মরিচ বিভিন্ন রঙয়ের হতে পারে, যেমন- লাল, হলুদ, কমলা, সবুজ, চকলেট/বাদামী, ভ্যানিলা/সাদা এবং পার্পল বা রক্তবেগুনী। বেল পিপার ক্যাপসাইসিন উৎপাদন করে না। তাই স্কোভাইল স্কেলে পরিমাপ করলে ০ স্কোভাইল ইউনিট ঝালের মাত্রা পাওয়া যায়।
৯. ব্যানানা পিপার, কিউবানেল, পাপরিকা: ১০০-১০০০ স্কোভাইল ইউনিট
ব্যানানা পিপার হচ্ছে, হালকা প্রকৃতির ঝালমরিচ। কখনো কখনো একে ইয়েলো ওয়াক্স বা ব্যানানা চিলি নামেও উল্লেখ করা হয়। এসব মরিচ উজ্জ্বল হলুদ, সবুজ বা লাল রঙয়ের হতে পারে। ব্যানানা পিপারে ঝালের মাত্রা ০-৫০০ স্কোভাইল ইউনিটের মধ্যে থাকে।
কিউবানেল পিপার (ইটালিয়ান ফ্রাইং পিপার/কিউবান পিপার) কাঁচা অবস্থায় হলুদ-সবুজাভ এবং পাকা অবস্থায় লাল বর্ণের হয়ে থাকে। কিউবা, ইতালি, পুয়ের্টো রিকো এবং ডোমিনিকান রিপাবলিকে এ মরিচ ব্যবহৃত হয়। কিউবানেলে ঝালের মাত্রা ১০০০ স্কোভাইল ইউনিট।
পাপরিকা হচ্ছে, ক্যাপসিকাম অ্যানিউম প্রজাতির মরিচের মিশ্রণ।
৮. অ্যানাহাইম পিপার, পাসিলা পিপার, পিপাডিউ: ১,০০০-৩,৫০০ স্কোভাইল ইউনিট
অ্যানাহাইম পিপার হচ্ছে, ‘নিউ মেক্সিকো নম্বর নাইন’ এর একটি জাত। এ মরিচের নামকরণ করা হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যানাহাইম শহরের নামে। স্কোভাইল স্কেলে এ মরিচের ঝালের মাত্রা ৫০০ থেকে ২,৫০০ ইউনিট এবং ঝালের এই মাত্রা নিউ মেক্সিকোতে উৎপাদিত এটির জাতসমূহের থেকে খুব কম।
পাসিলা হচ্ছে, চিলাকা পিপারের শুকনো সংস্করণ। শুকনো করার ফলে এটি কৃষ্ণাভ হয় ও ভাঁজ পড়ে যায় এবং এ বৈশিষ্ট্যানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। ক্যাপসিকাম অ্যানিউম প্রজাতির এ মরিচে ঝালের মাত্রা ১,০০০-৩,৯৯৯ স্কোভাইল ইউনিট।
পিপাডু হচ্ছে, ক্যাপসিকাম ব্যাকাটুমের ব্র্যান্ড নাম। এটি ১৯৯৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কার হয়। টমেটো সদৃশ হালকা ঝালের এ মরিচে ঝালের মাত্রা ১,১৭৭ স্কোভাইল ইউনিট।
৭. গুয়াজিলো পিপার, ফ্রেশনো চিলি পিপার, জালাপেনো পিপার: ৩,৫০০-১০,০০০ স্কোভাইল ইউনিট
সচরাচর মেক্সিকোতে ক্যাপসিকাম অ্যানিউম প্রজাতির সদস্য গুয়াজিলো পিপারের ব্যবহার হয়ে থাকে। এ মরিচের ২,৫০০ থেকে ৫,০০০ স্কোভাইল ইউনিটের পানজেন্সি রেটিংকে হালকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ক্যাপসিকাম অ্যানিউমের অন্য একটি জাত হচ্ছে, ফ্রেশনো চিলি পিপার। এটি মেক্সিকান মরিচ। এর স্কোভাইল রেট ২,৫০০-৫,০০০ এর মধ্যে থাকে।
জালাপেনো পিপার হচ্ছে, ক্যাপসিকাম অ্যানিউমের আরেকটি জাত। জাত ভেদে এর পানজেন্সি রেটিং বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। জালাপেনো পিপারের সদস্য চিলটেপিন পিপারে ঝালের মাত্রা সর্বোচ্চ হয়ে থাকে, যা ৪৬২,৮৮৪ স্কোভাইল ইউনিট পর্যন্ত হতে পারে।
৬. বায়াজি চিলি, সিরানো পিপার, পিটার পিপার: ১০,০০০-৩০,০০০ স্কোভাইল ইউনিট
বায়াজি চিলি প্রধানত ভারতের কর্ণাটক-এ চাষ করা হয়। স্কোভাইল টেস্টে এ মরিচের স্কোর ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ স্কোভাইল ইউনিটের মধ্যে থাকে।
ক্যাপসিকাম অ্যানিউমের সদস্য সিরানো পিপারের উৎপত্তি হয়েছে মেক্সিকোতে। এর স্কোভাইল রেটিং ১০,০০০ থেকে ২৩,০০০ ইউনিট। এ মরিচ কাঁচা ব্যবহার করা হয়।
ক্যাপসিকাম অ্যানিউমের অন্য একটি সদস্য হচ্ছে, পিটার পিপার। এর উৎপত্তিস্থল কোথায় জানা যায়নি। এ মরিচ লাল এবং হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। এর স্কোভাইল রেটিং ১০,০০০-২৩,০০০ ইউনিট।
৫. গুন্টুর চিলি, সায়েন পিপার, টাবাসকো পিপার: ৩০,০০০-৫০,০০০ স্কোভাইল ইউনিট
গুন্টুর চিলি এসেছে ক্যাসিকাম চাইনিজ প্রজাতি থেকে। এটি ভারতের গুন্টুর জেলায় ব্যাপকভাবে জন্মানো হয়। এর ঝালের মাত্রা ৩০,০০০-৩৫০,০০০ স্কোভাইল ইউনিটের মধ্যে থাকে।
সায়েন পিপারের অনেকগুলো নাম রয়েছে, যেমন- গিনি স্পাইস, কাউ-হর্ন পিপার, রেড হট চিলি পিপার, অ্যালেভা, বার্ড পিপার এবং রেড পিপার। ক্যাপসিকাম অ্যানিউম প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত এ মরিচ নাতিশীতোষ্ণ ও গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে জন্মে। সায়েনের স্কোভাইল স্কোর ৩০,০০০-৩৫০,০০০ ইউনিট।
টাবাসকো পিপার ক্যাপসিকাম ফ্রুটিসেন্স প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এর উৎপত্তিস্থল হচ্ছে মেক্সিকো। এ মরিচে ঝালের মাত্রা ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ স্কোভাইল ইউনিট। এটি সচরাচর টাবাসকো সসে ব্যবহার করা হয়।
৪. ম্যালাগুয়েটা পিপার, চাইলটেপিন পিপার, পিরি পিরি: ৫০,০০০-১০০,০০০ স্কোভাইল ইউনিট
ম্যালাগুয়েটা পিপার ক্যাপসিকাম ফ্রুটিসেন্স প্রজাতির সদস্য। এটি প্রধানত মোজাম্বিক, ব্রাজিল এবং পর্তুগালে পাওয়া যায়। এর স্কোভাইল রেট ৬০,০০০-১০০,০০০ ইউনিট।
ক্যাপসিকাম অ্যানিউম প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত চাইলটেপিন পিপারের উৎপত্তিস্থল উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা। এ মরিচে ঝালের মাত্রা ৫০,০০০-১০০,০০০ স্কোভাইল ইউনিট।
পিরি পিরিকে পিলি পিলি বা আফ্রিকান বার্ড’স আই চিলি নামেও ডাকা হয়। এটি ক্যাপসিকাম চাইনিজের জাত। এ মরিচ আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। কয়েক প্রকারের পিলি পিলির পানজেন্সি রেটিং ১৭৫,০০০ স্কোভাইল ইউনিট পর্যন্ত হতে পারে।
৩. হাবানেরো চিলি, বার্ড’স আই চিলি, স্কচ বনেট পিপার: ১০০,০০০-৩৫০,০০০ স্কোভাইল ইউনিট
হাবানেরো চিলি খুব ঝাল হয়ে থাকে। এর ঝালের মাত্রা স্কোভাইল স্কেলে ১০০,০০০-৩৫০,০০০ ইউনিট পর্যন্ত হতে পারে। কাঁচাকালীন সময় এ মরিচের বর্ণ সবুজ থাকে, কিন্তু পরিপক্ব হলে লাল হয়ে যায়। এ শস্যোর উৎপত্তি অ্যামাজনে। এটি মেক্সিকোতে ছড়িয়ে পড়ে এবং খুব জনপ্রিয় হয়।
বার্ড’স আই চিলির কয়েকটি নাম আছে, যেমন- বার্ড’স চিলি, চিলি ডি আর্বল বা থাই চিলি। ক্যাপসিকাম অ্যানিউমের অন্তর্ভুক্ত এ মরিচ ইথিওপিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশে পাওয়া যায়। স্কোভাইল স্কেলে এ মরিচের স্কোর ১০০,০০০-২২৫,০০০ ইউনিট।
স্কচ বনেট পিপার হচ্ছে, জ্যামাইকান পিপার। এটির অন্যান্য নামও আছে। এর পানজেন্সি রেটিং ১০০,০০০-৪০০,০০০ স্কোভাইল ইউনিট।
২. রেড স্যাভিনা হাবানেরো পিপার: ৩৫০,০০০-৫৮০,০০০ স্কোভাইল ইউনিট
রেড স্যাভিনা হাবানেরো পিপার হচ্ছে, হাবানেরো চিলির একটি জাত। ১৯৯৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত, এ মরিচ সবচেয়ে বেশি ঝালের শিরোপা ধরে রেখেছিল। জিএনএস স্পাইসেস এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ফ্র্যাংক গার্সিয়া এ মরিচ ডেভেলপ করেন। স্কোভাইল স্কেলে এ মরিচের স্কোর ৫৭৭,০০০ ইউনিট।
১. ড্রাগন’স ব্রেথ, ঘোস্ট পিপার, ইনফিনিটি চিলি: ৮৫৫,০০০-২,৪৮০,০০০ স্কোভাইল ইউনিট
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঝাল মরিচ বলা হয় ড্রাগন’স ব্রেথকে। এ মরিচ খেলে অ্যানাফাইল্যাক্টিক শকে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। যুক্তরাজ্যের ওয়েলশের হর্টিকালচারালিস্ট মাইক স্মিথ এ মরিচ উদ্ভাবন করেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঝাল মরিচের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ঘোস্ট পিপার। উত্তর-পূর্ব ভারত এবং বাংলাদেশের কিছু জায়গায় এ মরিচের চাষ করা হয়। ঘোস্ট পিপারে ঝালের মাত্রা ৮০০,০০০-১,০৪১,৪২৭ স্কোভাইল ইউনিট।
ইনফিনিটি চিলি ‘সেভেন পট ইনফিনিটি’ নামেও পরিচিত। এটি ১,০৬৭,২৮৬ স্কোভাইট ইউনিট নিয়ে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই সপ্তাহের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচের শিরোপা ধরে রাখতে পেরেছিল। এ মরিচ ক্যাপসিকাম চায়নিজের সংকর। ইংল্যান্ডের মরিচ প্রজননবিদ নিক উডস এ মরিচ উদ্ভাবন করেন।