ঢাকা , সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষককে বাঁচাতে আলোক ফাঁদ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে দিনাজপুরে রোপনকৃত আমন ক্ষেতে পোকা ও রোগ-বালাই আক্রমণ দেখা দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক। আর এ থেকে কৃষককে মুক্তি দিতে কৃষি বিভাগ আলোক ফাঁদ ব্যবহার শুরু করেছেন।

ধানক্ষেতে আলোক ফাঁদ স্থাপন করে পোকা দমনের পাশাপাশি পোকা আক্রমণ হলে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সে ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন ওই বিভাগের কর্মকর্তারা।

দিনাজপুরের কৃষি বিভাগ জানায়, বিভিন্ন জেলাতে পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও দিনাজপুরে পোকার আক্রমণ অনেক কম। তাই যাতে করে কোনক্রমেই পোকা কিংবা রোগ-বালাই আক্রমণ করতে না পারে এবং কৃষকরা যাতে করে হাসিমুখে উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারে সেজন্য বিভিন্ন স্থানে আলোক ফাঁদের সাহায্যে পোকার উপস্থিতি শনাক্ত করে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। একইসাথে পোকা কিংবা রোগ বালাই আক্রমণ হলে কি ধরনের কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে এজন্য প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। কারেন্ট পোকা, বিপিএইচ ও বাদামি গাছ ফড়িং ধানের জমিতে আক্রমণ করলে এর জন্য প্লেনাম, মিফসিন ও সফসিন। চুঙ্গি পোকা আক্রমণ করলে এর জন্য ভিরতাকো। ব্লাস্ট ও খোলা পোচা রোগে জমি আক্রানত হলে এর জন্য এমিস্টার টপ, ফিলিয়া, নাটিভো ও ট্রুপার ব্যবহার করতে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছরে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলে ৪ লাখ ৯১ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপন করা হয়েছে।

এর মধ্যে দিনাজপুরে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৭১০ হেক্টর, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৫ হেক্টর ও পঞ্চগড়ে ৯৭ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমি। তিন জেলায় আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৫০৮ মে.টন চাল।

কৃষকরা বলছেন, এবারে গত ১৩ আগস্ট থেকে ভয়াবহ বন্যার ফলে তাদের রোপন করা চারার বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে যায়। তাই বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই অধিকাংশ জমিতে তাদেরকে বাড়তি খরচ করে ২ বার চারা রোপন করতে হয়েছে। এতে করে প্রতি হেক্টরে খরচ বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা।

তাদের মতে, এবারে বন্যার ফলে মাটিতে পলি জমায় জমি উর্বর হয়েছে। তাই বাড়তি খরচ করেও তাদের মনে একটা আশা রয়েছে ভাল ফলন হওয়ায়।

তবে আশঙ্কা রয়েছে, যদি নতুন করে পোকা মাকড় কিংবা রোগ-বালাই আক্রমণ করে তাহলে তাদের আশা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে।

এদিকে যাতে করে কৃষকদের ফসলে কোন পোকার আক্রমণ না হয় সেজন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা আলোক ফাঁদ করে পোকা দমনের কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। একইসাথে ফসলে কোন পোকা কিংবা রোগ বালাই দেখা দিলে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রতিকার পাওয়া সে ব্যাপারেও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে ভিডিও চিত্র প্রদর্শন ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে কৃষি ও কৃষকদের ফসল উৎপাদন নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

বিরলের ছেতরা গ্রামের কৃষক শ্যামল কুমার রায় জানান, এবারে বন্যার ফলে মাটিতে পলি জমেছে। তাই এখন তার ক্ষেত সবুজের সমারোহ হয়ে উঠেছে। তবে অনেক স্থানেই পোকা ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হওয়ায় কিছুটা চিন্তিত রয়েছেন তিনি। যদি তার ক্ষেতেও এই ধরনের পোকা কিংবা রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ হয়, তাহলে তাকে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

দিনাজপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, দিনাজপুর অঞ্চলের অবস্থা যেমন এতে করে নতুন কোন পোকা কিংবা রোগ বালাই দেখা না দিলে অনেকটা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে কৃষকরা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

কৃষককে বাঁচাতে আলোক ফাঁদ

আপডেট টাইম : ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে দিনাজপুরে রোপনকৃত আমন ক্ষেতে পোকা ও রোগ-বালাই আক্রমণ দেখা দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক। আর এ থেকে কৃষককে মুক্তি দিতে কৃষি বিভাগ আলোক ফাঁদ ব্যবহার শুরু করেছেন।

ধানক্ষেতে আলোক ফাঁদ স্থাপন করে পোকা দমনের পাশাপাশি পোকা আক্রমণ হলে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সে ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন ওই বিভাগের কর্মকর্তারা।

দিনাজপুরের কৃষি বিভাগ জানায়, বিভিন্ন জেলাতে পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও দিনাজপুরে পোকার আক্রমণ অনেক কম। তাই যাতে করে কোনক্রমেই পোকা কিংবা রোগ-বালাই আক্রমণ করতে না পারে এবং কৃষকরা যাতে করে হাসিমুখে উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারে সেজন্য বিভিন্ন স্থানে আলোক ফাঁদের সাহায্যে পোকার উপস্থিতি শনাক্ত করে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। একইসাথে পোকা কিংবা রোগ বালাই আক্রমণ হলে কি ধরনের কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে এজন্য প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। কারেন্ট পোকা, বিপিএইচ ও বাদামি গাছ ফড়িং ধানের জমিতে আক্রমণ করলে এর জন্য প্লেনাম, মিফসিন ও সফসিন। চুঙ্গি পোকা আক্রমণ করলে এর জন্য ভিরতাকো। ব্লাস্ট ও খোলা পোচা রোগে জমি আক্রানত হলে এর জন্য এমিস্টার টপ, ফিলিয়া, নাটিভো ও ট্রুপার ব্যবহার করতে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছরে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলে ৪ লাখ ৯১ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপন করা হয়েছে।

এর মধ্যে দিনাজপুরে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৭১০ হেক্টর, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৫ হেক্টর ও পঞ্চগড়ে ৯৭ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমি। তিন জেলায় আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৫০৮ মে.টন চাল।

কৃষকরা বলছেন, এবারে গত ১৩ আগস্ট থেকে ভয়াবহ বন্যার ফলে তাদের রোপন করা চারার বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে যায়। তাই বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই অধিকাংশ জমিতে তাদেরকে বাড়তি খরচ করে ২ বার চারা রোপন করতে হয়েছে। এতে করে প্রতি হেক্টরে খরচ বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা।

তাদের মতে, এবারে বন্যার ফলে মাটিতে পলি জমায় জমি উর্বর হয়েছে। তাই বাড়তি খরচ করেও তাদের মনে একটা আশা রয়েছে ভাল ফলন হওয়ায়।

তবে আশঙ্কা রয়েছে, যদি নতুন করে পোকা মাকড় কিংবা রোগ-বালাই আক্রমণ করে তাহলে তাদের আশা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে।

এদিকে যাতে করে কৃষকদের ফসলে কোন পোকার আক্রমণ না হয় সেজন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা আলোক ফাঁদ করে পোকা দমনের কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। একইসাথে ফসলে কোন পোকা কিংবা রোগ বালাই দেখা দিলে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রতিকার পাওয়া সে ব্যাপারেও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে ভিডিও চিত্র প্রদর্শন ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে কৃষি ও কৃষকদের ফসল উৎপাদন নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

বিরলের ছেতরা গ্রামের কৃষক শ্যামল কুমার রায় জানান, এবারে বন্যার ফলে মাটিতে পলি জমেছে। তাই এখন তার ক্ষেত সবুজের সমারোহ হয়ে উঠেছে। তবে অনেক স্থানেই পোকা ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হওয়ায় কিছুটা চিন্তিত রয়েছেন তিনি। যদি তার ক্ষেতেও এই ধরনের পোকা কিংবা রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ হয়, তাহলে তাকে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।

দিনাজপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, দিনাজপুর অঞ্চলের অবস্থা যেমন এতে করে নতুন কোন পোকা কিংবা রোগ বালাই দেখা না দিলে অনেকটা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে কৃষকরা।