ঢাকা , রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

গ্রামাঞ্চলের পত্রিকা মানুষের মনে দাগ রেখে যায়

গ্রামাঞ্চলের সাহিত্য পত্রিকায় মানুষের জীবনযাত্রা যখন ফুটে ওঠে তখন সেই পত্রিকা হয়ে ওঠে মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন। প্রবল বন্যায় খড়কুটো ভেসে যায়, ভেসে যায় পশুপাখি,মানুষ,ঘরবাড়ি। হাহাকার আর আর্তনাদে ভরে ওঠে পৃথিবী। ঠিক সেখান থেকেই মানুষের মনের কথা বলে গ্রামাঞ্চলের সাহিত্য পত্রিকা। শহরকেন্দ্রিক বড়,ছোট সাহিত্য পত্রিকাগুলোর সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের পত্রিকাগুলোর বিস্তর তফাৎ। হয়তো আকার, বৈচিত্র্য ও মোড়কে পিছিয়ে কিন্তু শহরকেন্দ্রিক সাহিত্য পত্রিকাগুলির সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের সাহিত্য পত্রিকাগুলির মান তুলনা করলে দেখা যায় গ্রামাঞ্চলের পত্রিকাগুলি অনেক বেশি উজ্জীবিত, অনেক বেশি পরিপূর্ণ। এমনই একটি সাহিত্য পত্রিকা ‘এবং পঞ্চক’। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার

 

কমরপুর,চন্দ্রকোণারোড থেকে প্রকাশিত হয় ‘এবং পঞ্চক’। দিনটা ছিল ১লা মে,২০০৮ সাল। জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক পরিবেশ অশান্ত। খুন সন্ত্রাসের আবহ ছেয়ে ফেলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে।বাতাসে বারুদের গন্ধ, রাস্তায় রক্তের দগদগে দাগ তখন স্পষ্ট। এমন দিনেই খুন সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে শিলাবতী নদীর ধারে হাজির পাঁচ যুবক। সকলেই পরস্পরের বন্ধু। বয়স বছর আঠাশের দোরগোড়ায়। সিগারেটে টান দিচ্ছিলেন কেউ কেউ। হঠাৎ করেই নিজেদের মধ্যে একটি পত্রিকার কথা আলোচনা শুরু হয়। হ্যাঁ ‘এবং পঞ্চকের’  শুরুটা সেদিনই। কিন্তু কিভাবে একটি পত্রিকা প্রকাশ হবে। একজন ছাড়া সকলেইতো বেকার। চিন্তার ভাঁজ সরিয়ে শেষ পর্যন্ত শান্তিময় রায়ের অর্থে শুরু হল ‘এবং পঞ্চক’ পত্রিকার প্রথম প্রকাশ। পাঁচজন ছিলেন মূল কান্ডারী তাই নামটা তখন ছিল ‘পঞ্চক’। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণে অনেকেই আর আগ্রহ প্রকাশ করেননি। হারিয়েও যান অনেকেই।প্রায় দুবছর বন্ধ থাকার পর শেষ পর্যন্ত পত্রিকাটির হাল ধরেন সন্তু মুখ্যোপাধ্যায়। সন্তুর কাকু ছিলেন ‘পঞ্চকের’ একজন সদস্য। পত্রিকার টালমাটাল অবস্থা বুঝতে পেরে সন্তুর উপর পত্রিকার দায়িত্ব অর্পণ করেন কাকাবাবু। এ যেন সেই বাংলা সাহিত্যের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাকাবাবু’। সেদিন থেকে ‘পঞ্চক’ সন্তুর হাতে নবজন্ম পায় ‘এবং পঞ্চক’ নামে। বাংলার ১৪২২ সালে প্রকাশিত হয় ‘এবং পঞ্চক’ প্রথম বর্ষ, প্রথম শারদ সংখ্যা। বয়স কম, অভিজ্ঞতাও কম সাহিত্যে তাই ভয় আর উৎকন্ঠতার মধ্যেই সন্তু প্রকাশ করেন ‘এবং পঞ্চক’। সবকিছুর মাঝেও সন্তু জানতেন ‘কাকাবাবুর’ হাত তাঁর মাথায় রয়েছে তাই ভয়কে তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে যান। পত্রিকাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশ চমক রয়েছে। প্রচ্ছদ বিশেষ আকর্ষণীয়| লেখাগুণে সমৃদ্ধ ‘এবং পঞ্চক’। মোট একশ ষোলো টি কবিতা, একটি প্রবন্ধ এবং দুটি ছোট গল্প নিয়ে বেশ পরিপূর্ণ পত্রিকাটি। প্রথমেই চোখে পড়ল ‘প্রসঙ্গত……’। লেখার মান বিচার করতে গেলে বলতেই হয় সম্পাদক মহাশয় সত্যিই পত্রিকাটিকে মন থেকে ভালবেসেছেন। সব লেখাগুলিই বেশ ভাল। তবে বিবেকানন্দ চক্রবর্তীর ‘তোমাকে পেলাম’, কৃষ্ণা বসুর ‘ভেতরে সমুদ্র রয়েছে’,কৌশিক বর্মনের ‘ঘর’, সৌমিত্র চক্রবর্তীর ‘যাপন আপন’, অদিতি চক্রবর্তীর ‘ইউটোপিয়া’, নির্মাল্য বিশ্বাসের ‘বারোমাস্যা’, মৃণাল কোটালের ‘নীল পাহাড়ে কালো মেয়েটি’, তনুশ্রী ভট্টাচার্যের ‘সেইসব কথা’, মৌপর্না মুখ্যোপাধ্যায়ের ‘একটি শালফুলের জন্য’, সৌতিক হাতির ‘জীবন’, প্রতাপ রায়ের ‘জমি’ কবিতাগুলো বেশ চমৎকার। শ্রীতনু চৌধুরী লিখেছেন ‘এই সময় (জলাতঙ্ক)। সামান্য কয়েকটি কথা “জলাতঙ্কের টীকা নেবার কড়ি, বি.পি.এল কাড অথবা ভয় যাদের নেই তারাই কেবল সারমেয়কে কুত্তা বলে”। শ্রীতনুর লেখা সরাসরি এই পোড়া সমাজের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বঞ্চনার ছবি। গুরুপদ মুখ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ মনে দাগ কেটে যাবে প্রত্যেকটি পাঠকের। রঙ্গীত মিশ্রর ‘গ্রীস’ ছোট গল্পটি শেষ হয়েও শেষ হলনা। ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যই এরকম। ‘এবং পঞ্চক’ পাঠকদের মনে দাগ কেটে যাবে তা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

রাজধানীর ১৫টি খাল খননে দূর হবে ৮০ শতাংশ জলাবদ্ধতা

গ্রামাঞ্চলের পত্রিকা মানুষের মনে দাগ রেখে যায়

আপডেট টাইম : ০৪:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০১৬
গ্রামাঞ্চলের সাহিত্য পত্রিকায় মানুষের জীবনযাত্রা যখন ফুটে ওঠে তখন সেই পত্রিকা হয়ে ওঠে মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন। প্রবল বন্যায় খড়কুটো ভেসে যায়, ভেসে যায় পশুপাখি,মানুষ,ঘরবাড়ি। হাহাকার আর আর্তনাদে ভরে ওঠে পৃথিবী। ঠিক সেখান থেকেই মানুষের মনের কথা বলে গ্রামাঞ্চলের সাহিত্য পত্রিকা। শহরকেন্দ্রিক বড়,ছোট সাহিত্য পত্রিকাগুলোর সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের পত্রিকাগুলোর বিস্তর তফাৎ। হয়তো আকার, বৈচিত্র্য ও মোড়কে পিছিয়ে কিন্তু শহরকেন্দ্রিক সাহিত্য পত্রিকাগুলির সঙ্গে গ্রামাঞ্চলের সাহিত্য পত্রিকাগুলির মান তুলনা করলে দেখা যায় গ্রামাঞ্চলের পত্রিকাগুলি অনেক বেশি উজ্জীবিত, অনেক বেশি পরিপূর্ণ। এমনই একটি সাহিত্য পত্রিকা ‘এবং পঞ্চক’। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার

 

কমরপুর,চন্দ্রকোণারোড থেকে প্রকাশিত হয় ‘এবং পঞ্চক’। দিনটা ছিল ১লা মে,২০০৮ সাল। জঙ্গলমহলের রাজনৈতিক পরিবেশ অশান্ত। খুন সন্ত্রাসের আবহ ছেয়ে ফেলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে।বাতাসে বারুদের গন্ধ, রাস্তায় রক্তের দগদগে দাগ তখন স্পষ্ট। এমন দিনেই খুন সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে শিলাবতী নদীর ধারে হাজির পাঁচ যুবক। সকলেই পরস্পরের বন্ধু। বয়স বছর আঠাশের দোরগোড়ায়। সিগারেটে টান দিচ্ছিলেন কেউ কেউ। হঠাৎ করেই নিজেদের মধ্যে একটি পত্রিকার কথা আলোচনা শুরু হয়। হ্যাঁ ‘এবং পঞ্চকের’  শুরুটা সেদিনই। কিন্তু কিভাবে একটি পত্রিকা প্রকাশ হবে। একজন ছাড়া সকলেইতো বেকার। চিন্তার ভাঁজ সরিয়ে শেষ পর্যন্ত শান্তিময় রায়ের অর্থে শুরু হল ‘এবং পঞ্চক’ পত্রিকার প্রথম প্রকাশ। পাঁচজন ছিলেন মূল কান্ডারী তাই নামটা তখন ছিল ‘পঞ্চক’। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণে অনেকেই আর আগ্রহ প্রকাশ করেননি। হারিয়েও যান অনেকেই।প্রায় দুবছর বন্ধ থাকার পর শেষ পর্যন্ত পত্রিকাটির হাল ধরেন সন্তু মুখ্যোপাধ্যায়। সন্তুর কাকু ছিলেন ‘পঞ্চকের’ একজন সদস্য। পত্রিকার টালমাটাল অবস্থা বুঝতে পেরে সন্তুর উপর পত্রিকার দায়িত্ব অর্পণ করেন কাকাবাবু। এ যেন সেই বাংলা সাহিত্যের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাকাবাবু’। সেদিন থেকে ‘পঞ্চক’ সন্তুর হাতে নবজন্ম পায় ‘এবং পঞ্চক’ নামে। বাংলার ১৪২২ সালে প্রকাশিত হয় ‘এবং পঞ্চক’ প্রথম বর্ষ, প্রথম শারদ সংখ্যা। বয়স কম, অভিজ্ঞতাও কম সাহিত্যে তাই ভয় আর উৎকন্ঠতার মধ্যেই সন্তু প্রকাশ করেন ‘এবং পঞ্চক’। সবকিছুর মাঝেও সন্তু জানতেন ‘কাকাবাবুর’ হাত তাঁর মাথায় রয়েছে তাই ভয়কে তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে যান। পত্রিকাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশ চমক রয়েছে। প্রচ্ছদ বিশেষ আকর্ষণীয়| লেখাগুণে সমৃদ্ধ ‘এবং পঞ্চক’। মোট একশ ষোলো টি কবিতা, একটি প্রবন্ধ এবং দুটি ছোট গল্প নিয়ে বেশ পরিপূর্ণ পত্রিকাটি। প্রথমেই চোখে পড়ল ‘প্রসঙ্গত……’। লেখার মান বিচার করতে গেলে বলতেই হয় সম্পাদক মহাশয় সত্যিই পত্রিকাটিকে মন থেকে ভালবেসেছেন। সব লেখাগুলিই বেশ ভাল। তবে বিবেকানন্দ চক্রবর্তীর ‘তোমাকে পেলাম’, কৃষ্ণা বসুর ‘ভেতরে সমুদ্র রয়েছে’,কৌশিক বর্মনের ‘ঘর’, সৌমিত্র চক্রবর্তীর ‘যাপন আপন’, অদিতি চক্রবর্তীর ‘ইউটোপিয়া’, নির্মাল্য বিশ্বাসের ‘বারোমাস্যা’, মৃণাল কোটালের ‘নীল পাহাড়ে কালো মেয়েটি’, তনুশ্রী ভট্টাচার্যের ‘সেইসব কথা’, মৌপর্না মুখ্যোপাধ্যায়ের ‘একটি শালফুলের জন্য’, সৌতিক হাতির ‘জীবন’, প্রতাপ রায়ের ‘জমি’ কবিতাগুলো বেশ চমৎকার। শ্রীতনু চৌধুরী লিখেছেন ‘এই সময় (জলাতঙ্ক)। সামান্য কয়েকটি কথা “জলাতঙ্কের টীকা নেবার কড়ি, বি.পি.এল কাড অথবা ভয় যাদের নেই তারাই কেবল সারমেয়কে কুত্তা বলে”। শ্রীতনুর লেখা সরাসরি এই পোড়া সমাজের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বঞ্চনার ছবি। গুরুপদ মুখ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ মনে দাগ কেটে যাবে প্রত্যেকটি পাঠকের। রঙ্গীত মিশ্রর ‘গ্রীস’ ছোট গল্পটি শেষ হয়েও শেষ হলনা। ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যই এরকম। ‘এবং পঞ্চক’ পাঠকদের মনে দাগ কেটে যাবে তা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়।