বর্তমানে ই-কমার্সের ওপর স্বল্প উন্নত দেশগুলোতে কোনো শুল্ক আরোপ করা হয় না। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৪০ মিলিয়ন বা চার কোটি ডলার ডলার শুল্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রোববার (২৪ মার্চ) দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) গোলটেবিল আলোচনায় এ অভিমত দেওয়া হয়।
সম্প্রতি আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিওর ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের ফলাফলের ওপর এই আলোচনার আয়োজন করা হয়। এতে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আইসিএবির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন এফসিএ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট এমবিএম লুৎফুল হাদী, সিইও শুভাশীষ বসু, ও চিফ অপারেটিং অফিসার মাহবুব আহমেদ সিদ্দিকি।
অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত ৫৩ বছরে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে ৬০টি দেশ। ১৫টি দেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের বিভিন্ন ধাপে আছে।
বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশকে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য যেসব সূচক আছে তাতে বাংলাদেশ ভালো করছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের ক্যাটাগরিতে আসবে। ফলে স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ায় যেসব সুবিধা, যেমন—ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি ও প্রেফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্ট পাচ্ছে, তা আরো কিছুটা সময় অব্যাহত রাখার জন্য জোর আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সামনে তিনটি বিষয়—স্বল্পোন্নত দেশ, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নতি ও উন্নয়নশীল দেশ। উৎপাদন, দক্ষতা ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। ২০২৬ সালের পর বাজারে প্রবেশের সুবিধা না থাকলে টিকে থাকার জন্য পণ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে। রপ্তানি বাণিজ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে।
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের আরো ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট, কম্প্রিহেনসিভ ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট করতে হবে। পরিবহন খাতের উন্নয়নকে কাজে লগিয়ে অর্থনৈতিক করিডর গড়ে তুলতে হবে। তুলনামূলক সুবিধাকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধায় রূপান্তরের জন্য কাজ করতে হবে। ’
জাপান, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্ক সুবিধা প্রদান করে আসছে, সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে হবে।
আইসিএবির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন এফসিএ আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন। আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন মো. হাফিজুর রহমান, সদস্য, প্রতিযোগিতা কমিশন; মো. আল আমিন প্রামাণিক পিএইচডি, অর্থনৈতিক মন্ত্রী, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন; মোহাম্মদ মাশুকুর রহমান সিকদার, যুগ্ম সচিব (ডাব্লিউটিও সেকশন-২), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়; ড. মোস্তফা আবিদ খান, কম্পোনেন্ট ম্যানেজার, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন প্রজেক্ট, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি); মঞ্জুর আহমেদ, উপদেষ্টা, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই); আইসিএবির সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. শাহাদাৎ হোসেন এফসিএ; মিসেস ফেরদৌস আরা বেগম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড); ড. শিশির কুমার দেব, সাবেক সিইও, বিএফটিআই প্রমুখ।
আইসিএবির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ ফোরকান উদ্দীন এফসিএ বলেন, ডাব্লিউটিও হলো একটি বিকল্প বিরোধ বা মধ্যস্থতাকারী সত্তা, যা দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক নিয়মগুলোকে সমর্থন করে। এটি একটি প্ল্যাটফরম, যা সদস্য সরকারগুলোকে অন্য সদস্যদের সঙ্গে বাণিজ্য সমস্যাগুলো আলোচনা এবং সমাধান করার অনুমতি দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য অনেক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর মধ্যে একটি হলো এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন। বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) গ্রুপ থেকে স্নাতক হতে চলেছে। নিঃসন্দেহে এটি হবে স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অর্জনগুলোর একটি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে এবারের সম্মেলনটি আমাদের জন্য একটি সাফল্যের কারণ। কিন্তু আমাদের এলডিসি থেকে স্নাতক হওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে হবে। ’
ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, অর্থনীতিতে প্রাইভেট সেক্টরের অবদান হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ। কিন্তু সে তুলনায় বাণিজ্যিক সুবিধা নিয়ে আলাপ-আলোচনায় এই ফোরামে খুব বেশি একটা অংশগ্রহণ নেই। অ্যান্টি ডাম্পিং পণ্যের ক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টরকে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। বাণিজ্য আলোচনা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। ডাব্লিউটিওতে রুলস অব ল-এর পরিবর্তে ক্ষমতার প্রভাব বেশি লক্ষণীয়। ডাব্লিউটিওর গ্রিন রুমে যে আলোচনা হয় তা কেউই জানতে পারে না। তিনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া কোলাবোরেশন বাড়াতে হবে।