ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুঁজিবাজারে অনিশ্চয়তার ঝড়

কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের গতি এখন ভিন্নমাত্রায় গড়িয়েছে। কী হবে, কী হতে যাচ্ছে—এমন অনিশ্চয়তার দোলাচলে রয়েছে দেশের সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি। যার প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে পুঁজিবাজারে। বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজারের লেনদেনে বড় দরপতনের ঘটনা ঘটেছে। একটি ছাড়া সব খাতেই ঋণাত্মক রিটার্ন দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার কোটি টাকা।  এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা বেশ সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত অর্থাৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই এখন নতুন বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত থেকে বিরতই থাকছেন।

এই বাস্তবতায় দেশের বর্তমান পুঁজিবাজার নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না কেউ। তবে বিনিয়োগকারী, পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অংশীজনেরা মনে করছেন, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত কোনো স্থির সমাধানে আসা গেলে হয়তো পুঁজিবাজার তথা সার্বিক অর্থনীতি ফের আগের মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

দেশের এই পরিস্থিতির মধ্যে কীভাবে বিনিয়োগ করা যায়—জানতে চাইলে এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী সানী মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোনো ধরনের অনিশ্চয়তার আভাস পেলে সেখানে বিনিয়োগ স্থবির থাকে। অর্থনীতি বিরূপ আচরণ করে। অস্বাভাবিক গতিবিধি থাকে শেয়ারবাজারে। এখন সেটাই হচ্ছে। তাই নতুন করে বিনিয়োগের কথা এ মুহূর্তে ভাবছি না। কারণ, এই পুঁজিবাজার থেকে এখন আর বেশি কিছু পাওয়ার আশা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আল-আমিন বলেন, ‘এখন এক দফা, এক দাবিতে মানুষ। ফলে সরকারের ক্ষমতায় থাকা নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এটার সঙ্গে বাজারের সম্পৃক্ততা আছে। এমনিতেই বাজার যে জায়গায় আছে, সেখান থেকে নিচে নামার সুযোগ নেই। কিন্তু সরকারদলীয় যাঁরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা কীভাবে চিন্তা করছেন, সেটার ওপর নির্ভর করবে সামনে বাজারে কী প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে।’

‘আজকে (শনিবার) মানুষের যে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি কোথায় যায়, তা বলা যাচ্ছে না। আমি বলব, এর ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করছে’, যোগ করেন তিনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য বলছে, বিদায়ী সপ্তাহে ২১টি খাতের মধ্যে কেবল টেলিযোগাযোগ খাতে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। সেটিও ১ শতাংশের কম, যা মাত্র শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ, সপ্তাহজুড়ে সমন্বিতভাবে এ খাতের কোম্পানিগুলোর ওই পরিমাণ ­শেয়ারদর বা বাজার মূলধন বেড়েছে। বাকি ২০টি খাতেই দরপতন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে কাগজ ও মুদ্রণ খাতে, ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনবিএফআই, সিরামিক, ভ্রমণ ও অবকাশ, প্রকৌশল ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতের কোম্পানিগুলোর নেতিবাচক রিটার্ন ছিল ৪ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া ৫টি খাতে ৩ শতাংশ, ৩টিতে ২ শতাংশ এবং ৫টিতে ১ শতাংশের বেশি নেতিবাচক রিটার্ন দেখা গেছে।

সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানির মধ্যে দরপতন হয়েছে ৮২ শতাংশের। আর কেবল মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় দরপতন হয়েছে ৭ গুণের কাছাকাছি। মোট ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৪৯টির, কমেছে ৩২৭টির এবং আগের দামে লেনদেন হয়েছে ২১টির। এতে করে সপ্তাহ শেষে প্রধান সূচক কমেছে ৮০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ফলে ডিএসইএক্সের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৮৯ পয়েন্টে, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ছিল ৫ হাজার ৫৫১। যদিও সপ্তাহের শেষ দুই কর্মদিবসে সূচকে যোগ হয় ৬৪ পয়েন্ট। তবে তার আগের তিন দিনে দরপতনে সূচক হারায় ১৪৪ পয়েন্ট। সপ্তাহ শেষে পতন কিছুটা কমে এলেও এখনো ৮০ পয়েন্ট পুনরুদ্ধার হয়নি।

বেশির ভাগ শেয়ারের দাম কমায় সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকায়, যা আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ছিল ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে মূলধন কমেছে ৪ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা বা দশমিক ৬৭ শতাংশ।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক   বলেন, এ ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ভালো যাবে না এবং এতে পুঁজিবাজারও যে ধুঁকবে—এটাই খুব স্বাভাবিক বিষয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, এটা অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। ফলে পুঁজিবাজারে এই মুহূর্তে নতুন বিনিয়োগ আশা করা দুরূহ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

পুঁজিবাজারে অনিশ্চয়তার ঝড়

আপডেট টাইম : ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪

কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের গতি এখন ভিন্নমাত্রায় গড়িয়েছে। কী হবে, কী হতে যাচ্ছে—এমন অনিশ্চয়তার দোলাচলে রয়েছে দেশের সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি। যার প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে পুঁজিবাজারে। বিদায়ী সপ্তাহে পুঁজিবাজারের লেনদেনে বড় দরপতনের ঘটনা ঘটেছে। একটি ছাড়া সব খাতেই ঋণাত্মক রিটার্ন দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার কোটি টাকা।  এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা বেশ সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত অর্থাৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই এখন নতুন বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত থেকে বিরতই থাকছেন।

এই বাস্তবতায় দেশের বর্তমান পুঁজিবাজার নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না কেউ। তবে বিনিয়োগকারী, পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অংশীজনেরা মনে করছেন, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত কোনো স্থির সমাধানে আসা গেলে হয়তো পুঁজিবাজার তথা সার্বিক অর্থনীতি ফের আগের মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

দেশের এই পরিস্থিতির মধ্যে কীভাবে বিনিয়োগ করা যায়—জানতে চাইলে এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী সানী মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোনো ধরনের অনিশ্চয়তার আভাস পেলে সেখানে বিনিয়োগ স্থবির থাকে। অর্থনীতি বিরূপ আচরণ করে। অস্বাভাবিক গতিবিধি থাকে শেয়ারবাজারে। এখন সেটাই হচ্ছে। তাই নতুন করে বিনিয়োগের কথা এ মুহূর্তে ভাবছি না। কারণ, এই পুঁজিবাজার থেকে এখন আর বেশি কিছু পাওয়ার আশা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আল-আমিন বলেন, ‘এখন এক দফা, এক দাবিতে মানুষ। ফলে সরকারের ক্ষমতায় থাকা নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এটার সঙ্গে বাজারের সম্পৃক্ততা আছে। এমনিতেই বাজার যে জায়গায় আছে, সেখান থেকে নিচে নামার সুযোগ নেই। কিন্তু সরকারদলীয় যাঁরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা কীভাবে চিন্তা করছেন, সেটার ওপর নির্ভর করবে সামনে বাজারে কী প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে।’

‘আজকে (শনিবার) মানুষের যে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি কোথায় যায়, তা বলা যাচ্ছে না। আমি বলব, এর ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করছে’, যোগ করেন তিনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য বলছে, বিদায়ী সপ্তাহে ২১টি খাতের মধ্যে কেবল টেলিযোগাযোগ খাতে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। সেটিও ১ শতাংশের কম, যা মাত্র শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ, সপ্তাহজুড়ে সমন্বিতভাবে এ খাতের কোম্পানিগুলোর ওই পরিমাণ ­শেয়ারদর বা বাজার মূলধন বেড়েছে। বাকি ২০টি খাতেই দরপতন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে কাগজ ও মুদ্রণ খাতে, ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনবিএফআই, সিরামিক, ভ্রমণ ও অবকাশ, প্রকৌশল ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতের কোম্পানিগুলোর নেতিবাচক রিটার্ন ছিল ৪ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া ৫টি খাতে ৩ শতাংশ, ৩টিতে ২ শতাংশ এবং ৫টিতে ১ শতাংশের বেশি নেতিবাচক রিটার্ন দেখা গেছে।

সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানির মধ্যে দরপতন হয়েছে ৮২ শতাংশের। আর কেবল মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় দরপতন হয়েছে ৭ গুণের কাছাকাছি। মোট ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৪৯টির, কমেছে ৩২৭টির এবং আগের দামে লেনদেন হয়েছে ২১টির। এতে করে সপ্তাহ শেষে প্রধান সূচক কমেছে ৮০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ফলে ডিএসইএক্সের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৮৯ পয়েন্টে, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ছিল ৫ হাজার ৫৫১। যদিও সপ্তাহের শেষ দুই কর্মদিবসে সূচকে যোগ হয় ৬৪ পয়েন্ট। তবে তার আগের তিন দিনে দরপতনে সূচক হারায় ১৪৪ পয়েন্ট। সপ্তাহ শেষে পতন কিছুটা কমে এলেও এখনো ৮০ পয়েন্ট পুনরুদ্ধার হয়নি।

বেশির ভাগ শেয়ারের দাম কমায় সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকায়, যা আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ছিল ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে মূলধন কমেছে ৪ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা বা দশমিক ৬৭ শতাংশ।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক   বলেন, এ ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ভালো যাবে না এবং এতে পুঁজিবাজারও যে ধুঁকবে—এটাই খুব স্বাভাবিক বিষয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, এটা অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। ফলে পুঁজিবাজারে এই মুহূর্তে নতুন বিনিয়োগ আশা করা দুরূহ।