ঢাকা , শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবার যদি পাকিস্তান দমে…

নিরাপত্তা সীমানায় পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা যে তৎপরতা চালিয়ে আসছিল শেষ পর্যন্ত তার সমুচিত জবাবই দিল ভারত। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণ ও সন্ত্রাসবাদীদের হত্যা অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। গতকাল দিনভর ঢাকায় বিভিন্ন মহলে এটাই ছিল আলোচনার বিষয়।

দীর্ঘদিন থেকেই সন্ত্রাসবাদীদের অভয়ারণ্য পাকিস্তান ঘিরে এই অঞ্চলেই নয়, আন্তজার্তিক ফোরামেও কথা উঠেছে- পাকিস্তানের মাটি সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি। এই সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তান রাষ্ট্রটিকে শুধু ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবেই চিহ্নিত করেনি; সন্ত্রাসবাদীরা গোটা অঞ্চলকে ভারত, আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত চরম অস্থির ও নিরাপত্তাহীন করে রেখেছিল।

ভারত দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছিলো, পাকিস্তান যাতে তাদের মাটি সন্ত্রাসবাদীদের ব্যবহার করতে না দেয়। জাতিসংঘের সর্বশেষ অধিবেশনে ভারত পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদীদের প্রশ্রয়দাতা ও জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে অভিযুক্ত করেছে।

একাধিক সাবেক কূটনৈতিক ও আন্তজার্তিক বিশ্লেষক বলছেন, ভারতীয় বাহিনী কাশ্মিরের সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নামে যে অপরেশন চালিয়েছে তাতে সন্ত্রাসবাদীদের তৎপরতা কিছুটা হলেও স্তিমিত হবে। এমনকি পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও বিচলিত করবে। সন্ত্রাসবাদীরা হাড়ে হাড়ে বুঝবে যেখানে তারা আশ্রয় পেয়েছে তা তাদের জন্য, তাদের রাষ্ট্রের জন্য কতটা অকল্যাণ বয়ে এনেছে।

এদিকে, ভারত সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অব কন্ট্রোল) পেরিয়ে পাকিস্তানি ভূখণ্ডে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (সুনির্দিষ্ট টার্গেটে হামলা) অপারেশন চালিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। এতে দুই পাকিস্তানি সৈন্য ও ৩৮ ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতভর এ হামলা চালানো হয়। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। মিলিটারি অপারশনের মহাপরিচালক (ডিজিএমও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রনবীর সিং সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন।

সন্ত্রাসীরা ভারতের মধ্যে ঢুকে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমন সুনির্দিষ্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক অপারেশন চালানো হয়। এতে ‘গুরুত্বপূর্ণ হতাহতের’ ঘটনা ঘটেছে। অভিযান রাতেই শেষ হয়।

ভারতীয় এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের মাটি যেন সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য অনেক আহ্বান জানিয়ে আসছিলাম আমরা, কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমরা সন্ত্রাসীদের দমনে অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছি। অভিযানে কোনো ভারতীয় হতাহত হননি।

অভিযানের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি, ভাইস প্রেসিডেন্ট হামিদ আনসারি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, জম্মু- কাশ্মীরের গভর্নর ও মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক নিতিন গোখালে তার এক টুইটে বলেন, হামলায় শত্রুদের ৫টি ক্যাম্প ধ্বংস হয়ে গেছে। বেশ কিছু হতাহতও হয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম জানায়, বুধবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে অভিযান চালায় সামরিক বাহিনী। এতে স্পেশাল ফোর্সের প্যারাট্রুপার্স ও কমান্ডোরা অংশ নেন। তাদের অভিযানস্থলে নামানো হয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে। অভিযান চলে পাকিস্তানি ভূখণ্ডের ভিম্বার, হটস্প্রিং, কেল ও লিপা সেক্টরে। অভিযানে সন্ত্রাসীদের লঞ্চ প্যাড ধ্বংস হয়ে যায়। এ অভিযান শেষ হয় ভোর সাড়ে ৪টায়।

এর আগে বুধবার রাতে সংবাদমাধ্যম জানায়, ওইদিন সন্ধ্যায় কাশ্মীরের পুঞ্চ এলাকার সাউজিয়ান সেক্টরে প্রায় ৮ মিনিট ধরে দুই বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলে। দু’পক্ষই মর্টারের গোলা ও গুলিবিনিময় করে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর কাশ্মীরের উরি সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলা ১৮ ভারতীয় সৈন্য নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ সম্পর্কে উত্তেজনা এখন চরমে। দু’পক্ষই সীমান্তে সেনা মোতায়েন ও তৎপরতা বাড়িয়েছে। দফায় দফায় যুদ্ধবিমানের মহড়া চালাচ্ছে পাকিস্তান। আর ভারতও প্রস্তুত করছে তাদের যুদ্ধবিমানকে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

এবার যদি পাকিস্তান দমে…

আপডেট টাইম : ০৬:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নিরাপত্তা সীমানায় পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা যে তৎপরতা চালিয়ে আসছিল শেষ পর্যন্ত তার সমুচিত জবাবই দিল ভারত। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আক্রমণ ও সন্ত্রাসবাদীদের হত্যা অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। গতকাল দিনভর ঢাকায় বিভিন্ন মহলে এটাই ছিল আলোচনার বিষয়।

দীর্ঘদিন থেকেই সন্ত্রাসবাদীদের অভয়ারণ্য পাকিস্তান ঘিরে এই অঞ্চলেই নয়, আন্তজার্তিক ফোরামেও কথা উঠেছে- পাকিস্তানের মাটি সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি। এই সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তান রাষ্ট্রটিকে শুধু ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবেই চিহ্নিত করেনি; সন্ত্রাসবাদীরা গোটা অঞ্চলকে ভারত, আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত চরম অস্থির ও নিরাপত্তাহীন করে রেখেছিল।

ভারত দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছিলো, পাকিস্তান যাতে তাদের মাটি সন্ত্রাসবাদীদের ব্যবহার করতে না দেয়। জাতিসংঘের সর্বশেষ অধিবেশনে ভারত পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদীদের প্রশ্রয়দাতা ও জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে অভিযুক্ত করেছে।

একাধিক সাবেক কূটনৈতিক ও আন্তজার্তিক বিশ্লেষক বলছেন, ভারতীয় বাহিনী কাশ্মিরের সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নামে যে অপরেশন চালিয়েছে তাতে সন্ত্রাসবাদীদের তৎপরতা কিছুটা হলেও স্তিমিত হবে। এমনকি পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও বিচলিত করবে। সন্ত্রাসবাদীরা হাড়ে হাড়ে বুঝবে যেখানে তারা আশ্রয় পেয়েছে তা তাদের জন্য, তাদের রাষ্ট্রের জন্য কতটা অকল্যাণ বয়ে এনেছে।

এদিকে, ভারত সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অব কন্ট্রোল) পেরিয়ে পাকিস্তানি ভূখণ্ডে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (সুনির্দিষ্ট টার্গেটে হামলা) অপারেশন চালিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। এতে দুই পাকিস্তানি সৈন্য ও ৩৮ ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতভর এ হামলা চালানো হয়। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। মিলিটারি অপারশনের মহাপরিচালক (ডিজিএমও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রনবীর সিং সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন।

সন্ত্রাসীরা ভারতের মধ্যে ঢুকে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমন সুনির্দিষ্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক অপারেশন চালানো হয়। এতে ‘গুরুত্বপূর্ণ হতাহতের’ ঘটনা ঘটেছে। অভিযান রাতেই শেষ হয়।

ভারতীয় এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের মাটি যেন সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য অনেক আহ্বান জানিয়ে আসছিলাম আমরা, কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমরা সন্ত্রাসীদের দমনে অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছি। অভিযানে কোনো ভারতীয় হতাহত হননি।

অভিযানের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি, ভাইস প্রেসিডেন্ট হামিদ আনসারি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, জম্মু- কাশ্মীরের গভর্নর ও মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক নিতিন গোখালে তার এক টুইটে বলেন, হামলায় শত্রুদের ৫টি ক্যাম্প ধ্বংস হয়ে গেছে। বেশ কিছু হতাহতও হয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম জানায়, বুধবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে অভিযান চালায় সামরিক বাহিনী। এতে স্পেশাল ফোর্সের প্যারাট্রুপার্স ও কমান্ডোরা অংশ নেন। তাদের অভিযানস্থলে নামানো হয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে। অভিযান চলে পাকিস্তানি ভূখণ্ডের ভিম্বার, হটস্প্রিং, কেল ও লিপা সেক্টরে। অভিযানে সন্ত্রাসীদের লঞ্চ প্যাড ধ্বংস হয়ে যায়। এ অভিযান শেষ হয় ভোর সাড়ে ৪টায়।

এর আগে বুধবার রাতে সংবাদমাধ্যম জানায়, ওইদিন সন্ধ্যায় কাশ্মীরের পুঞ্চ এলাকার সাউজিয়ান সেক্টরে প্রায় ৮ মিনিট ধরে দুই বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলে। দু’পক্ষই মর্টারের গোলা ও গুলিবিনিময় করে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর কাশ্মীরের উরি সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলা ১৮ ভারতীয় সৈন্য নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ সম্পর্কে উত্তেজনা এখন চরমে। দু’পক্ষই সীমান্তে সেনা মোতায়েন ও তৎপরতা বাড়িয়েছে। দফায় দফায় যুদ্ধবিমানের মহড়া চালাচ্ছে পাকিস্তান। আর ভারতও প্রস্তুত করছে তাদের যুদ্ধবিমানকে।