ঢাকা , রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

রাজনীতি এখন গরিবের ভাবি, যে কেউ চাইলেই আসতে পারছে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, আমাদের গ্রামে একটা প্রবাদ আছে৷ গরীবের বউ সবার ভাবি। রাজনীতি গরীবের বউয়ের মতো। যে কেউ যে কোনো সময় ঢুকে পড়তে পারে, কোনো বাধা নেই। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫১তম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এ কথা বলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা শুনলে কেন জানি ঠাণ্ডা লেগে গলাটা আগেই বসে যায় মন্তব্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, আমি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্স পড়াইতে চাই, ভিসি আমাকে দিবে না৷ আমি যদি এত বছর রাজনীতি করার পর হাসপাতালে ডাক্তারি করতে চাই তাহলে বুঝেন হাসপাতালে কি অবস্থা হবে৷ আমি যদি এখন ফিজিক্স ক্যামেস্ট্রি পড়াইতে যাই তাহলে হাসির পাত্র হবো।

তিনি বলেন, কিন্তু রাজনীতি গরীবের বউয়ের মতো। ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার সবাই ঢুকতে পারে। এই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র ভিসি উনিও ৬২ বছর অবসরের পর হয়তো বলবেন আমিও রাজনীতি করবো।

রাষ্ট্রপতি বলেন, যারা সরকারি চাকরি করেন জজ সাহেব, ৬৭ বছর রিটায়ার করে বলবেন আমিও রাজনীতি করি। আর্মির জেনারেল হয়, সেনাপ্রধান হয়৷ অনেক আগে রিটায়ারমেন্টে গিয়ে বলবে আমিও রাজনীতি করি৷ সরকারি সচিবরাও বলবে আমিও রাজনীতি করি। মনে হচ্ছে যখন যার ইচ্ছা, রাজনীতিতে ঢুকে পড়বে।

তিনি বলেন, আমার মনে হয় এই ব্যাপারে সকল রাজনৈতিক দলের চিন্তা করা উচিত৷ হ্যাঁ অনেকে পেশাভিত্তিক পার্লামেন্টের কথা বলেন। হ্যাঁ পেশাভিত্তিক করেন। এমবিবিএস পাস করে সরাসরি রাজনীতিতে ঢুকে পড়েন ৷ কোনো অসুবিধা নেই। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে সরাসারি রাজনীতিতে আসেন। বিসিএস পাস করে রাজনীতিতে ঢুকে পড়েন। এভাবে রাজনীতিতে আসেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, কিন্তু ৫৯ বছর ৬২ বছর ৬৭ বছর চাকরি করার পর রাজনীতিতে আসবেন কেন? অনেক পুলিশের ডিআইজি/আইজি রাজনীতি করতে আসে৷ আমি মনে মনে কই রাজনীতি করার সময় বাহিনী দিয়া পাছার মধ্যে বাড়ি দিছো৷ এখন আসছো আবার আমার সাথে রাজনীতি করতে। কই যাবো বলেন৷ আসলে রাজনীতি হয়ে গিয়েছে গরীবের বউ৷ রাজনৈতিক দলগুলোকে এসব ব্যাপারে ভাবতে হবে৷ এই যে রাজনীতির বিভিন্ন সমস্যা কারণ এগুলো৷ আর ব্যবসায়ীরা, শিল্পপতি তো আছেই৷ এগুলো থামানো দরকার৷

আবদুল হামিদ বলেন, রাজনীতি যারা করবে স্কুল বাদ দিলাম অন্তত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির সাথে পরিচয় হতে হবে৷ রাজনীতির লোকজনের সাথে উঠা-বসা করতে হবে৷ যারা এলাকায় রাজনীতি করলো জনগণের সাথে চলাফেরা করলো তারাই থাকুক। আমি রাজনীতির দলগুলোকে বলবো এগুলো নিয়ে চিন্তা করতে৷ কিন্তু ডাইরেক্ট রাজনীতিতে এসে এমপি হয়ে যাবে এটা যেন কেমন কেমন লাগে৷। এই জন্য দেশের রাজনীতি গুণগত পরিবর্তন হচ্ছে না।

মজা করে তিনি বলেন, ‘নিজের বিয়ের হিসাবটা আজ অন্যভাবে বলছি, ১৭০ কোটি ২ লাখ ৯২ হাজার ৪০০ সেকেন্ড হয়েছে। ৫৪ বছর ২ দিন। এর কারণ হলো অল্প বয়সে বিয়ে করেছি। ৫৪ বছরে একটা নারী আমার সবকিছু চিনে ফেলেছে, ভাল-খারাপ কী করতে পারি, এটা কিন্তু তার নিয়ন্ত্রণে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সাত-আট বছর আগে নারী নির্যাতন আইনের বিলে সই করি। তখন প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, আপনি নারী নির্যাতন আইন করছেন, ভালো কথা। একটা পুরুষ নির্যাতন আইন পাস করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন প্রয়োজন নেই। পরে প্রয়োজন হলে করা যাবে। ৬ বছর পার হয়েছে, এখনো করেননি। আসলে শুধু আমার ঘরে না, সারা বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতন হচ্ছে না, এটা কিন্তু সঠিক নয়৷ মারাত্মকভাবে হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা টের পাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে চিনেন। আমি যদি বুড়ো বয়সে চিনি, তাহলে আপনাদের আরো ভালো করে চেনার কথা। এই প্রিয়াঙ্কা চোপড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকায় এসেছিলেন। বাংলাদেশে যারা আসেন, সর্বশেষ বঙ্গভবনে আসেন। আমি স্ত্রীকে বললাম, কালকে তো এখানে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আসবেন। পরে শুনেছি, সে (রাষ্ট্রপতির স্ত্রী) নাকি টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বঙ্গভবনে আসার কী দরকার? এরপর তার বঙ্গভবনে আসা বাতিল হয়। প্রিয়াঙ্কার যাওয়ার কয়েক মাস পর শুনলাম, তার চেয়ে নাকি ১২/১৪ বছরের কম বয়সী আমেরিকান নিক নামের ছেলেকে বিয়ে করেছে। আমি তো তার ৩০/৩৫ বছরের বড়। ১২/১৪ বছর নিচে যে নামতে পারে, ৩০/৩৫ বছর উপরেও উঠতে পারতো। বউ হয়ে আমার এমন সুযোগ নষ্ট করা তার ঠিক হয়নি। এই উপমহাদেশেই যদি এমন ঘটনা ঘটতো, তাকে কষ্ট করে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় যেত হতো না, সবই কপাল।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার জীবনের অন্যতম মাইলফলক অর্জন করতে যাচ্ছেন ২১ হাজার ১১১ জন গ্র্যাজুয়েট। যা ঢাবির ইতিহাসে সর্বাধিক গ্র্যাজুয়েট। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ৯৬টি স্বর্ণপদক, ৮১ জনকে পিএইচডি এবং ২৭ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেয়া হবে।

সকাল ৭টা থেকেই ঢাবি ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। পুরো ক্যাম্পাস ছেয়ে গেছে সমাবর্তনের ব্যানার-ফেস্টুনে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

রাজধানীর ১৫টি খাল খননে দূর হবে ৮০ শতাংশ জলাবদ্ধতা

রাজনীতি এখন গরিবের ভাবি, যে কেউ চাইলেই আসতে পারছে

আপডেট টাইম : ০১:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ অক্টোবর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, আমাদের গ্রামে একটা প্রবাদ আছে৷ গরীবের বউ সবার ভাবি। রাজনীতি গরীবের বউয়ের মতো। যে কেউ যে কোনো সময় ঢুকে পড়তে পারে, কোনো বাধা নেই। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫১তম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এ কথা বলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা শুনলে কেন জানি ঠাণ্ডা লেগে গলাটা আগেই বসে যায় মন্তব্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, আমি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্স পড়াইতে চাই, ভিসি আমাকে দিবে না৷ আমি যদি এত বছর রাজনীতি করার পর হাসপাতালে ডাক্তারি করতে চাই তাহলে বুঝেন হাসপাতালে কি অবস্থা হবে৷ আমি যদি এখন ফিজিক্স ক্যামেস্ট্রি পড়াইতে যাই তাহলে হাসির পাত্র হবো।

তিনি বলেন, কিন্তু রাজনীতি গরীবের বউয়ের মতো। ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার সবাই ঢুকতে পারে। এই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র ভিসি উনিও ৬২ বছর অবসরের পর হয়তো বলবেন আমিও রাজনীতি করবো।

রাষ্ট্রপতি বলেন, যারা সরকারি চাকরি করেন জজ সাহেব, ৬৭ বছর রিটায়ার করে বলবেন আমিও রাজনীতি করি। আর্মির জেনারেল হয়, সেনাপ্রধান হয়৷ অনেক আগে রিটায়ারমেন্টে গিয়ে বলবে আমিও রাজনীতি করি৷ সরকারি সচিবরাও বলবে আমিও রাজনীতি করি। মনে হচ্ছে যখন যার ইচ্ছা, রাজনীতিতে ঢুকে পড়বে।

তিনি বলেন, আমার মনে হয় এই ব্যাপারে সকল রাজনৈতিক দলের চিন্তা করা উচিত৷ হ্যাঁ অনেকে পেশাভিত্তিক পার্লামেন্টের কথা বলেন। হ্যাঁ পেশাভিত্তিক করেন। এমবিবিএস পাস করে সরাসরি রাজনীতিতে ঢুকে পড়েন ৷ কোনো অসুবিধা নেই। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে সরাসারি রাজনীতিতে আসেন। বিসিএস পাস করে রাজনীতিতে ঢুকে পড়েন। এভাবে রাজনীতিতে আসেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, কিন্তু ৫৯ বছর ৬২ বছর ৬৭ বছর চাকরি করার পর রাজনীতিতে আসবেন কেন? অনেক পুলিশের ডিআইজি/আইজি রাজনীতি করতে আসে৷ আমি মনে মনে কই রাজনীতি করার সময় বাহিনী দিয়া পাছার মধ্যে বাড়ি দিছো৷ এখন আসছো আবার আমার সাথে রাজনীতি করতে। কই যাবো বলেন৷ আসলে রাজনীতি হয়ে গিয়েছে গরীবের বউ৷ রাজনৈতিক দলগুলোকে এসব ব্যাপারে ভাবতে হবে৷ এই যে রাজনীতির বিভিন্ন সমস্যা কারণ এগুলো৷ আর ব্যবসায়ীরা, শিল্পপতি তো আছেই৷ এগুলো থামানো দরকার৷

আবদুল হামিদ বলেন, রাজনীতি যারা করবে স্কুল বাদ দিলাম অন্তত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির সাথে পরিচয় হতে হবে৷ রাজনীতির লোকজনের সাথে উঠা-বসা করতে হবে৷ যারা এলাকায় রাজনীতি করলো জনগণের সাথে চলাফেরা করলো তারাই থাকুক। আমি রাজনীতির দলগুলোকে বলবো এগুলো নিয়ে চিন্তা করতে৷ কিন্তু ডাইরেক্ট রাজনীতিতে এসে এমপি হয়ে যাবে এটা যেন কেমন কেমন লাগে৷। এই জন্য দেশের রাজনীতি গুণগত পরিবর্তন হচ্ছে না।

মজা করে তিনি বলেন, ‘নিজের বিয়ের হিসাবটা আজ অন্যভাবে বলছি, ১৭০ কোটি ২ লাখ ৯২ হাজার ৪০০ সেকেন্ড হয়েছে। ৫৪ বছর ২ দিন। এর কারণ হলো অল্প বয়সে বিয়ে করেছি। ৫৪ বছরে একটা নারী আমার সবকিছু চিনে ফেলেছে, ভাল-খারাপ কী করতে পারি, এটা কিন্তু তার নিয়ন্ত্রণে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সাত-আট বছর আগে নারী নির্যাতন আইনের বিলে সই করি। তখন প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, আপনি নারী নির্যাতন আইন করছেন, ভালো কথা। একটা পুরুষ নির্যাতন আইন পাস করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন প্রয়োজন নেই। পরে প্রয়োজন হলে করা যাবে। ৬ বছর পার হয়েছে, এখনো করেননি। আসলে শুধু আমার ঘরে না, সারা বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতন হচ্ছে না, এটা কিন্তু সঠিক নয়৷ মারাত্মকভাবে হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা টের পাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা সবাই প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে চিনেন। আমি যদি বুড়ো বয়সে চিনি, তাহলে আপনাদের আরো ভালো করে চেনার কথা। এই প্রিয়াঙ্কা চোপড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকায় এসেছিলেন। বাংলাদেশে যারা আসেন, সর্বশেষ বঙ্গভবনে আসেন। আমি স্ত্রীকে বললাম, কালকে তো এখানে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আসবেন। পরে শুনেছি, সে (রাষ্ট্রপতির স্ত্রী) নাকি টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বঙ্গভবনে আসার কী দরকার? এরপর তার বঙ্গভবনে আসা বাতিল হয়। প্রিয়াঙ্কার যাওয়ার কয়েক মাস পর শুনলাম, তার চেয়ে নাকি ১২/১৪ বছরের কম বয়সী আমেরিকান নিক নামের ছেলেকে বিয়ে করেছে। আমি তো তার ৩০/৩৫ বছরের বড়। ১২/১৪ বছর নিচে যে নামতে পারে, ৩০/৩৫ বছর উপরেও উঠতে পারতো। বউ হয়ে আমার এমন সুযোগ নষ্ট করা তার ঠিক হয়নি। এই উপমহাদেশেই যদি এমন ঘটনা ঘটতো, তাকে কষ্ট করে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় যেত হতো না, সবই কপাল।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার জীবনের অন্যতম মাইলফলক অর্জন করতে যাচ্ছেন ২১ হাজার ১১১ জন গ্র্যাজুয়েট। যা ঢাবির ইতিহাসে সর্বাধিক গ্র্যাজুয়েট। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ৯৬টি স্বর্ণপদক, ৮১ জনকে পিএইচডি এবং ২৭ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেয়া হবে।

সকাল ৭টা থেকেই ঢাবি ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। পুরো ক্যাম্পাস ছেয়ে গেছে সমাবর্তনের ব্যানার-ফেস্টুনে।