আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ কি দলের সভাপতিম-লীতে ফিরছেন? ২২-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে এ প্রশ্ন এখন মুখেমুখে। সম্মেলনে তিন বছরের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হবে।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছে, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী আলোচনা হচ্ছে। তাদের মতো জ্যেষ্ঠ নেতাদের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় করতে সভাপতিম-লীতে নিয়ে আসার চিন্তা চলছে। তবে বিষয়টি দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছাধীন হওয়ায় এ ব্যাপারে আগে থেকে কথা বলতে চাননি কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ।
তবে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর ঘনিষ্ঠরা মনে করেন, অতীতে কে কী করেছে, তা এখনও ধরে না রেখে দল অন্তপ্রাণ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে জায়গা করে দিলে ভাল হবে। এতে সময়োপযোগী দিক-নির্দেশনার মাধ্যমে তৃণমূলে দলকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এনিয়ে তার ঘনিষ্ঠদের কাছে কোনো মন্তব্য না করলেও দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি খুশি নন, এমনটাই বলে তার অনুগামী-অনুসারীরা। এমনকি তিনি নিজেও এখন পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সভায় যাননি। মনের মধ্যে এনিয়ে অসন্তোষ তার রয়েই গেছে।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য, সম্পাদকম-লী ও সভাপতিম-লী নিয়ে গঠিত কমিটি হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি। এই নির্বাহী কমিটিই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত নেয়। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা কেউ নির্বাহী কমিটির সদস্য নন। দলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে তাদের ভূমিকা ওই অর্থে নেই।
আমির হোসেন আমুর রাজনীতি শুরু বরিশাল বিএম কলেজে পড়াশোনার সময় ছাত্রলীগের মাধ্যমে। কলেজ সংসদের নির্বাচিত নেতা ছিলেন। আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন। সবশেষ ছিলেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য। বর্তমানে সরকারের শিল্পমন্ত্রী এবং দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদেরও রয়েছে এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। ডাকসুর ভিপি ছিলেন, ১১ দফা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, জাতির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু উপাধি তারই দেওয়া। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক স¤পাদক ছিলেন। গত কাউন্সিলে বাদ পড়েন সভাপতিম-লী থেকে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়ে বিরোধের জেরে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কারাবন্দি হন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। এ সময় রাজনীতি থেকে দুই নেত্রীকে নির্বাসনে দেওয়ার গুজব ওঠে। ওই সময় সংস্কার পন্থী হিসেবে আরও যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের মধ্যে আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ অন্যতম।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমু, তোফায়েলকে মন্ত্রী করা হয়। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর এদের কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি। এরপর দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। দলের ওই কাউন্সিলে তাদের সংগঠনের সভাপতিম-লী থেকে বাদ দেয়া হয়। তাদের রাখা হয় উপদেষ্টা পরিষদে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর নতুন সরকার ক্ষমতা নিলে মন্ত্রিসভায় জায়গা হয় তাদের।