ঢাকা , শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কফি পানের উপকারিতা ও অপকারিতা, জেনে নিন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ শরীরের পক্ষে কফি ভালো। ক্যাফেইনের অনেক উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু খালি পেটে কফি শরীরের পক্ষে মারাত্মক। আর তা যদি হয় ব্ল্যাক কফি, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক গুন বেড়ে যায়।

ঘুম থেকে উঠে সরাসরি কফি পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। শুধু তাই নয়, রাতভর শরীরে নানা রকম প্রক্রিয়া চলার কারণে পাকস্থলিতে অতিরিক্ত অ্যাসিড ক্ষরণ হয়। এই অবস্থায় খালিপেটে কফি পড়লে গা গুলোনো ও বমির মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাই দিনের যে সব সময় দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে, তখন কফি পান করাই বুদ্ধিমানের কাজ। অর্থাত্‍ সকাল ৯ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত কফি খাওয়ার আদর্শ সময়। তবে লাঞ্চ বা ডিনারের পর কফি এড়িয়ে চলাই ভালো। এতে রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

কফি পানের ভাল-মন্দগুলো এক নজরে দেখে নেয়া যাক।

কফির অপকারিতা

হৃদয়ের জন্য ভালো নয়: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ক্যাফেইন হৃদপিণ্ডের রক্তসরবরাহকরী ধমনীতে রক্ত চলাচল ধীর করে দেয়। বিশেষ করে যখন বেশি দরকার, যেমন: ব্যায়ামের সময়। তাছাড়া বুকধড়ফড়ানি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা উচ্চ রক্তচাপের জন্যেও শরীরের অতিরিক্ত ক্যাফেইন দায়ী।

ঘুমের ব্যঘাত: এক কথা অনেকেই জানেন, চা বা কফি খেলে ঘুম কম হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা দিনে তিন কাপের বেশি কফি পান করেন তাদের শান্তির ঘুম খুব কমই হয়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কফি খান না তাদের থেকে কফি পানকারীদের ৭৯ মিনিট কম ঘুম হয়। তাই ঘুমের সমস্যা থাকলে কফিকে না বলুন।

চিনির সঙ্গে আত্মিয়: যদিও অনেকে চিনি ছাড়া কফি পান করেন। তবে কফির সঙ্গে কেক, বিস্কুট বা সকালের নাস্তার অনেক পদেই থাকে চিনি। সবমিলিয়ে দেখা যায়, সারা দিনে হয়তো ১১ টেবিল-চামচ চিনি খাওয়া হয়ে যাচ্ছে। তাই যারা ওজন কমানোর চেষ্টায় আছেন, তাদের চেষ্টা তখন বিফলে যাবে।

মেজাজের জন্য খারাপ: ক্যাফেইন শরীরের অ্যাড্রেনালিন নামক একধরনের হরমোনের মাত্রা বাড়ায়। যে কারণে শরীরের টানটান উত্তেজনা বা ঘাবড়িয়ে যাওয়ার অনুভুতির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

সন্তান ধারণে অক্ষমতা: দৈনিক পাঁচ কাপের বেশি কফি খেলে গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। যদি মা হতে চান, তবে অবশ্যই কফি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। আর গর্ভধারেণের পর কফি বাদ দিন। কারণ দৈনিক ২০০ মি.গ্রাম ক্যাফেইন শরীরে গেলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি জন্মক্রটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কফি পানের উপকারিতা

খেলাধুলায় উন্নতি: ক্যাফেইন যুক্ত কফি খেলে খেলাধুলায় প্রাণ পাওয়া যায়। যদিও হৃদপিণ্ডের গতি বাড়ায়, তারপরও কফি শরীরে উদ্যম ও উৎসাহ তৈরি করে। তাই যে কোনো খেলার আগে কফি পান শরীরে আনে আলাদা শক্তি।

মানসিক শক্তি বৃদ্ধি: গবেষণায় দেখা গেছে মানসিক চাপের সময়, ২০০ মি.গ্রাম ক্যাফেইন শরীরে গেলে মনযোগ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে প্রমাণ মিলেছে আলঝেইমার (স্মৃতিভ্রংশ) রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী পদার্থ ক্যাফেইন।
রোগের ঝুঁকি কমায়: ক্যাফেইন যুক্ত বা বিহীন, যে কোনো ধরনের কফি টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমায়। সেই সঙ্গে দেখা গেছে কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায় কফি।

কলিজার রক্ষাকবজ: অ্যালকোহল সেবন ও স্থুলতা, যকৃতে মেদ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ব্যথার পাশাপাশি যকৃতের অতিরিক্ত মেদ থেকে হতে পারে লিভার সিরোসিস। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো কোনো সময় লিভার বা যকৃতের মেদ কমাতে ক্যাফেইন কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

আনন্দ অনুভুতি: সত্যি বলতে কফির গন্ধই আপনাকে অনেকখানি চাঙা করে দেয়। আর পেটে কফি পড়লে মনের বিষাদভাব কাটতে বেশি সময় লাগে না।

অস্ট্রেলিয়ার স্নায়ুবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা হরমোনের সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের কফি এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। তাঁদের মতে, কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইন কিছু হরমোন ক্ষরণে ব্যাঘাত ঘটায়। এর ফলে শরীরে বিভিন্ন জটিল সমস্যা সৃষ্টি হয়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

কফি পানের উপকারিতা ও অপকারিতা, জেনে নিন

আপডেট টাইম : ০১:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ শরীরের পক্ষে কফি ভালো। ক্যাফেইনের অনেক উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু খালি পেটে কফি শরীরের পক্ষে মারাত্মক। আর তা যদি হয় ব্ল্যাক কফি, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কয়েক গুন বেড়ে যায়।

ঘুম থেকে উঠে সরাসরি কফি পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে। শুধু তাই নয়, রাতভর শরীরে নানা রকম প্রক্রিয়া চলার কারণে পাকস্থলিতে অতিরিক্ত অ্যাসিড ক্ষরণ হয়। এই অবস্থায় খালিপেটে কফি পড়লে গা গুলোনো ও বমির মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাই দিনের যে সব সময় দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে, তখন কফি পান করাই বুদ্ধিমানের কাজ। অর্থাত্‍ সকাল ৯ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত কফি খাওয়ার আদর্শ সময়। তবে লাঞ্চ বা ডিনারের পর কফি এড়িয়ে চলাই ভালো। এতে রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

কফি পানের ভাল-মন্দগুলো এক নজরে দেখে নেয়া যাক।

কফির অপকারিতা

হৃদয়ের জন্য ভালো নয়: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ক্যাফেইন হৃদপিণ্ডের রক্তসরবরাহকরী ধমনীতে রক্ত চলাচল ধীর করে দেয়। বিশেষ করে যখন বেশি দরকার, যেমন: ব্যায়ামের সময়। তাছাড়া বুকধড়ফড়ানি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা উচ্চ রক্তচাপের জন্যেও শরীরের অতিরিক্ত ক্যাফেইন দায়ী।

ঘুমের ব্যঘাত: এক কথা অনেকেই জানেন, চা বা কফি খেলে ঘুম কম হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা দিনে তিন কাপের বেশি কফি পান করেন তাদের শান্তির ঘুম খুব কমই হয়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কফি খান না তাদের থেকে কফি পানকারীদের ৭৯ মিনিট কম ঘুম হয়। তাই ঘুমের সমস্যা থাকলে কফিকে না বলুন।

চিনির সঙ্গে আত্মিয়: যদিও অনেকে চিনি ছাড়া কফি পান করেন। তবে কফির সঙ্গে কেক, বিস্কুট বা সকালের নাস্তার অনেক পদেই থাকে চিনি। সবমিলিয়ে দেখা যায়, সারা দিনে হয়তো ১১ টেবিল-চামচ চিনি খাওয়া হয়ে যাচ্ছে। তাই যারা ওজন কমানোর চেষ্টায় আছেন, তাদের চেষ্টা তখন বিফলে যাবে।

মেজাজের জন্য খারাপ: ক্যাফেইন শরীরের অ্যাড্রেনালিন নামক একধরনের হরমোনের মাত্রা বাড়ায়। যে কারণে শরীরের টানটান উত্তেজনা বা ঘাবড়িয়ে যাওয়ার অনুভুতির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

সন্তান ধারণে অক্ষমতা: দৈনিক পাঁচ কাপের বেশি কফি খেলে গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। যদি মা হতে চান, তবে অবশ্যই কফি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। আর গর্ভধারেণের পর কফি বাদ দিন। কারণ দৈনিক ২০০ মি.গ্রাম ক্যাফেইন শরীরে গেলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি জন্মক্রটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কফি পানের উপকারিতা

খেলাধুলায় উন্নতি: ক্যাফেইন যুক্ত কফি খেলে খেলাধুলায় প্রাণ পাওয়া যায়। যদিও হৃদপিণ্ডের গতি বাড়ায়, তারপরও কফি শরীরে উদ্যম ও উৎসাহ তৈরি করে। তাই যে কোনো খেলার আগে কফি পান শরীরে আনে আলাদা শক্তি।

মানসিক শক্তি বৃদ্ধি: গবেষণায় দেখা গেছে মানসিক চাপের সময়, ২০০ মি.গ্রাম ক্যাফেইন শরীরে গেলে মনযোগ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে প্রমাণ মিলেছে আলঝেইমার (স্মৃতিভ্রংশ) রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী পদার্থ ক্যাফেইন।
রোগের ঝুঁকি কমায়: ক্যাফেইন যুক্ত বা বিহীন, যে কোনো ধরনের কফি টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমায়। সেই সঙ্গে দেখা গেছে কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায় কফি।

কলিজার রক্ষাকবজ: অ্যালকোহল সেবন ও স্থুলতা, যকৃতে মেদ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ব্যথার পাশাপাশি যকৃতের অতিরিক্ত মেদ থেকে হতে পারে লিভার সিরোসিস। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো কোনো সময় লিভার বা যকৃতের মেদ কমাতে ক্যাফেইন কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

আনন্দ অনুভুতি: সত্যি বলতে কফির গন্ধই আপনাকে অনেকখানি চাঙা করে দেয়। আর পেটে কফি পড়লে মনের বিষাদভাব কাটতে বেশি সময় লাগে না।

অস্ট্রেলিয়ার স্নায়ুবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা হরমোনের সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের কফি এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। তাঁদের মতে, কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইন কিছু হরমোন ক্ষরণে ব্যাঘাত ঘটায়। এর ফলে শরীরে বিভিন্ন জটিল সমস্যা সৃষ্টি হয়।