মেঘনা নদীর ওপর আরও একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ১০ বছর আগে। কিন্তু এ পর্যন্ত এই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। এটিরও পরে নেওয়া অনেক অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু বিকল্প এই মেঘনা সেতুর নির্মাণকাজ সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব তথা পিপিপি-জিটুজি পদ্ধতিতে সেতুটি নির্মাণের কথা। এখন দেখা যাচ্ছে, এটি নির্মাণে বিনিয়োগকারীর কোনো আগ্রহ নেই। বাধ্য হয়ে পিপিপির পরিবর্তে বিকল্প অর্থায়নে নির্মাণের চিন্তা চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুর কাজ পিপিপিতে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ঠেলে দেওয়ায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। অথচ ঢাকার পাশর্^বর্তী এ রকম একটি সেতু নির্মাণ করা যেত সহজেই। বছরের পর বছর ধরে ঝুলতে থাকা সেতুটির নির্মাণ কবে হবে, তা বলতে পারছেন না কেউই। গত বছর সেতু কর্তৃপক্ষ রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) আহ্বান করেছিল। এর মেয়াদ ছিল গত ১০ মে পর্যন্ত। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠানও সাড়া দেয়নি। ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। তাই পিপিপির পরিবর্তে দাতাসংস্থার মাধ্যমে
অর্থায়নের চিন্তা করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। তবে এর আগে বিষয়টি পিপিপি কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন জানান, সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। পিপিপির মাধ্যমে না হলে ভিন্ন উৎসের সন্ধান করা হবে।
একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিকল্প মেঘনা সেতুটি নির্মাণে প্রথমে ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ওই এলাকায় সেতু নির্মাণে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম পাওয়াই স্বাভাবিক। তারা চেয়েছিল ‘ম্যাক্সিমাম রেভিনিউ গ্যারান্টি’। এতে রাজি হয়নি সেতু কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটি ট্রাফিক গ্যারান্টি দিতে সম্মত হয়েছিল, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা তাতে একমত হতে পারেনি। রেভিনিউ গ্যারান্টিতে সেতু কর্তৃপক্ষ রাজি হলে নির্ধারিত পরিমাণ টোল আদায় না হলে টাকা ফেরত পেত বিনিয়োগকারীরা। আর ট্রাফিক গ্যারান্টি দিলে প্রয়োজনে সময় বাড়ানোর সুযোগ পেত সেতু কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মধ্যে সংযুক্ত হবে প্রস্তাবিত সেতুটি। ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কে ফেরিঘাটের ১০০ মিটার উজানে নির্মাণ করা হবে বিকল্প এ মেঘনা সেতুটি। বর্তমানে ফেরির মাধ্যমে নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কের বিশনন্দী-কড়াইকান্দি ফেরির মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগরের সঙ্গে ঢাকা ও অন্যান্য জেলার যোগাযোগ দুর্যোগকালে ঝুঁকিপূর্ণও বটে। এ ছাড়া এটি দীর্ঘ সময়সাপেক্ষও বটে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিকল্প অ্যালাইনমেন্ট হিসেবে কাজ করবে সেতুটি। নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ১৮ দশমিক ৩০ মিটার ধরা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২০ সালের মার্চে সেতুটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের ১৯ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয়। কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান দাইয়ু ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, হুন্দাই ইঞ্জিনিয়ারিং ও কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনসের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ৩ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতুতে ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার থাকবে উভয় প্রান্তের সংযোগসড়ক। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীনে এ সেতুর দুপাশে সংযোগ করা হবে। এর নাম ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর-শিবপুর-রাধিকা আঞ্চলিক মহাসড়ক। কিন্তু সেতুটির বিনিয়োগ থেকে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান হুন্দাই ইঞ্জিনিয়ারিং সরে গেলে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও মুখ ফিরিয়ে নেয়।