আগামী বৃহস্পতিবার ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা-২০২৪। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিন বিকেল ৩ টায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন। বরাবরের মতো মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ বলছে, মেট্রোরেলের কারণে লোকসমাগম যেমন বাড়বে, তেমনই মেট্রোরেলের নিরাপত্তাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এসব কিছু বিবেচনায় রেখে বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কয়েকস্তরে ঢেলে সাজানো হয়েছে।
অধিবর্ষ হওয়ায় এই বছর বইমেলা চলবে ২৯ দিন। অমর একুশে বইমেলায় ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বইমেলায় এবার ৬৩৫ প্রতিষ্ঠান
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গা জুড়ে এবার আয়োজন করা হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। এ থাকছে ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠান এবং ৩৭টি প্যাভিলিয়ন। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি ইউনিটসহ মোট ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অমর একুশে বইমেলা। যেখানে থাকছে ৬৩৫টি স্টল এবং ৩৭টি প্যাভিলিয়ন। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৫১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬৪টি ইউনিটসহ মোট ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
থাকছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মেলা কেন্দ্রিক নিরাপত্তার পাশাপাশি শহীদ মিনার ও শাহবাগ-নীলক্ষেত কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশে-পাশে তল্লাশী দল থাকবে, সন্দেহভাজন কিছু দেখলে তারা তল্লাশী করবেন। মূল মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের আগে প্রতিটি প্রবেশপথে আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর থাকবে।
এছাড়া, কাউকে সন্দেহ হলে তাকে পৃথক কক্ষে নিয়ে তল্লাশী করা হবে। মেলা প্রাঙ্গনসহ আশে-পাশের এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক পোশাকধারী সদস্য মোতায়েন থাকবে। মেলার আশে-পাশে মোটরসাইকেল ও গাড়ি টহল থাকবে। এছাড়া, সিটিটিসি, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন ভ্যান, সিটি এসবি ও ডগ স্কোয়াড সদস্যরা দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।
প্রবেশ ও বের হওয়ার ৮টি পথ থাকবে
অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, এবার বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। তবে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বের হওয়ার পথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির-গেটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন অংশে মোট ৮টি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ থাকবে।
তিনি বলেন, খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশনের সীমানা ঘেঁষে বিন্যস্ত করা হয়েছে। সেগুলোকে এবার এমনভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে যেন এলোমেলোভাবে খাবারের স্টল বইমেলায় আগত পাঠকের মনোযোগ বিঘ্নিত না করে। নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা অব্যাহত থাকবে।
১৭০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ
ডা. কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন: শিশুরা যেন অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে সেজন্য গতবছরের ন্যায় শিশুচত্বর মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তর হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে ১৭০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন: বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন এবং শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য ১টি স্টল থাকবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর থাকবে।অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।
চ্যালেঞ্জের ওপর ভিত্তি করেই নিরাপত্তা বলয়
মেলার নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘যখন যে ধরনের নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়, সে ধরনের নিরাপত্তা আমরা প্রয়োগ করি।একেক বারের চ্যালেঞ্জ একেক রকম। এসব চ্যালেঞ্জের ওপর ভিত্তি করেই নিরাপত্তা বলয় সাজানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘এবার মেট্রোরেল একটি চ্যালেঞ্জ। মেট্রোরেলের কারণে বইমেলায় লোকজনের যাতায়াত বেড়ে যাবে। সব কিছু বিবেচনা করেই এবার নিরাপত্তার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বইমেলাকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখার জন্য যখন যা কিছু করার প্রয়োজন, আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা এরইমধ্যে গ্রহণ করেছি।’