মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। থেমে থেমে সীমান্তের ওপার থেকে তীব্র গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে আসা মর্টার শেল এসে পড়ছে বাংলাদেশ সীমান্তে। মর্টার শেলের আঘাতে দুই বাংলাদেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে। সবমিলিয়ে রাখাইনে দুই পক্ষের সংঘাত বাংলাদেশ সীমান্তে উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলা এই সংঘাতের কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত এলাকা সাধারণ জনগণের জন্য নিরাপদ নয় বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। এই এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার তুমব্রু সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমাদের সাধারণ জনগণের জন্য জায়গাটা নিরাপদ নয়। বিশেষ করে যখন গোলাগুলি শুরু হয়, সেই সময়টুকু তো একেবারেই নয়!এটা স্বাভাবিক যে, নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকাটা আদৌ সুখকর কোনো কিছু না। তবে জীবন রক্ষার জন্য, যখন এ ধরনের পরিস্থিতি হয়- তখন তো কিছুটা করতেই হবে।
ডিজি বলেন, তুমব্রু ও ঘুমধুমের পাশের বিওপিগুলোর সীমান্ত এলাকায় সংঘাতের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু গোলাগুলি হয়েছে, কিছু কিছু হচ্ছেও। এখনই সব সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের সরে যাওয়ার কথা বলছি না।
তিনি বলেন, গত দুই দিনের তুলনায় ফায়ারিংয়ের পরিমাণ একটু কম। এর আগে গোলা-মর্টার শেল আমাদের অভ্যন্তরেও এসে পড়েছে। আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রতিবাদ জানিয়েছে।
মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী আরও বলেন, মিয়ানমার জানিয়েছে- এখানে যারা আশ্রয় (মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য) নিয়েছে, তারা তাদের নিয়ে যেতে প্রস্তুত। আমরা পরামর্শ করেছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা নিয়ে যেতে বলেছি। আমরা আশাবাদী শিগগিরই এর সমাধান হবে।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ধৈর্য ধারণ করে, মানবিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, অবৈধভাবে আর একজনকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছে।
এর আগে সীমান্ত পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালক দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সদা তৎপর থাকার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য দায়িত্বরত সব বিজিবি সদস্যের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
বিজিবি মহাপরিচালক মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘর্ষের জেরে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি), মিয়ানমার সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সব সদস্যের খোঁজখবর নেন এবং আহত অবস্থায় আসা ও হাসপাতালে চিকিৎসারত বিজিপি সদস্যদের দেখতে যান।
এ সময় বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার, রামু সেক্টর কমান্ডার ও কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়কসহ বিজিবির অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন