বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বসংস্থার ব্যর্থতা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ রাখাইনে গণহত্যা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব, পোপ, এমনকি নিরাপত্তা পরিষদও রাখাইনে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু সর্বোচ্চ সংস্থা হিসাবে নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ বা প্রস্তাব গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদের পরিধি সম্প্রসারন করা প্রয়োজন। বর্তমানে এটি সারা বিশ্বকে প্রতিনিধিত্ব করছে না।
আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটিজিক স্টাডিস (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গওহর রিজভী একথা বলেন। বিআইআইএসএস এবং রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট – ৩২৮১ যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন রোটারি রমনা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এয়ার কমোডর (অব:) ইসফাক ইলাহী চৌধুরী।
জাতিসঙ্ঘের সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদকে নিরাপত্তা পরিষদের যেকোনো প্রস্তাব গ্রহণ বা বর্জনের ক্ষমতা দিতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদ কোনো ইস্যুতে আলোচনার পর প্রস্তাব গ্রহণে ব্যর্থ হলে তা সাধারণ পরিষদে পাঠাবে। সাধারণ পরিষদকে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হবে। এভাবেই জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদকে ক্ষমতাধর করা যায়। এর মধ্য দিয়ে সাধারণ পরিষদ এবং নিরাপত্তা পরিষদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আসবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে সাধারণ পরিষদে কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করা হলেও তার আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে নেই। এর বড়জোর নৈতিক প্রভাব রয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী ও ১০ অস্থায়ী সদস্য রয়েছে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে কোনো প্রস্তাব পাস হয়। কিন্তু স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে যেকোনো একটি দেশ ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রস্তাব আটকে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। আর অস্থায়ী সদস্যরা ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হয়।
গওহর রিজভী বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরা তাদের নিজেদের স্বার্থ এবং ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের বাইরে গিয়ে কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করে না। এটি অত্যন্ত দু:খজনক। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন এবং রাশিয়ার অবস্থান বিশ্ববাসী দেখেছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যা চলছে। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে জাতিগতভাবে নির্মূলের চেষ্টা চলছে। তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিল এটিকে জাতিগত নিধনের পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত হিসাবে অভিহিত করেছে। এরপরও নিরাপত্তা পরিষদ কোন ধরণের প্রস্তাব গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব হচ্ছে না। স্থায়ী সদস্যদের ভেটো নাকচ করার ক্ষমতা জাতিসঙ্ঘ সাধারন পরিষদকে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ‘শরণার্থী সমস্য ও শান্তির প্রতি হুমকি’ বিষয়ক ধারণাপত্র উত্থাপন করেন।