ঢাকা , রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরিকল্পনা ব্যর্থ আসছে নতুন ড্যাপ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানীকে ঢেলে সাজাতে সাত বছর আগে নেয়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)-২০১০ বাস্তবায়নে ব্যর্থতার পর আবার নতুন একটি ড্যাপের পরিকল্পনা করেছে রাজধানী উন্নয়ক কর্তৃপক্ষ-রাজউক। এ নিয়ে স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ, নাগরিক সমাজের সদস্যসহ বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মত বিনিময় করেছে সংস্থাটি।

রবিবার রাজউক কার্যালয়ে সংশোধিত ড্যাপ নিয়ে এই মতবিনিময় হয়। সভায় নগরপরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবু সাঈয়ীদ, রাজউকের প্রধান নগর পকিল্পনা সিরাজুল ইসলাম, ড্যাপ-২০১৭ এর প্রকল্প পরিচলাক আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেয়।

ঢাকাকে একটি আধুনিক ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে এর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) হাতে নেয়া হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু এটি নানা কারণে ব্যর্থ হয়। ব্যার্থতার কারণগুলো চিহ্নিত করে এবার নেয়া হয়েছে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)-২০১৭। এটি বাস্তবায়ন হবে ২০৩৫ সালের মধ্যে।

ইকবাল হাবিব বলেন, ‘ড্যাপ আমাদের স্বপ্ন ছিল, কিন্তু সেখানে ডেনসিটি কন্ট্রোলের ম্যাপিং ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘রাজধানীকে বসবাসের যোগ্য করতে খাল পুকুর দখল হলে, সেগুলো নতুন করে চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করতে হবে।’

ইকবাল হাবিব বলেন, ‘রাজধানীতে রান অব ওয়াটারের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। নতুন খাল, সংযোগ খাল তৈরি করে ঢাকাকে বাঁচাতে হবে। এ বছরের বর্ষায় তা আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে আমাদের। জলের ধারার নেট ওয়ার্ক তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। রান অব ওয়াটার কিভাবে নদী পর্যন্ত যাবে তার পরিকল্পনা আমাদের করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম নাজিম বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা অনেক বেশি, সেটা মাথায় রেখে ড্যাপ-২০১৭ করলে ভালো হবে। এই পরিকল্পনায় পদ্মা সেতু হওয়ার পরে দক্ষিণ ঢাকার কী পরিবর্তন হবে তা উঠে আসেনি। গাবতলী এখনও সমস্যার জায়গা, সেখানেও এ্যাড্রেস করার দরকার।’

এই পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘উন্মুক্ত জায়গা, খাল, বাগান কতটুকু হবে, সেগুলো সেরকম আসে নাই। এগুলো পরিকল্পনায় রাখতে হবে, তাহলে বাস্তবায়ন হবে।’

মতবিনিময় সভায় রাজউকের ড্যাপ-২০১০ প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ড্যাপ যে বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তা নয়। কিছু কিছু বাস্তবায়ন হচ্ছে, তবে সেটা নীতিভাবে হচ্ছে। ড্যাপ-২০১৭ নতুন করে করা হচ্ছে না, এটা সংশোধন করা হচ্ছে।’

ড্যাপ-২০১৭ প্রকল্প পরিচালক উপ-নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এই পরিকল্পনায় ঢাকা শহরের ঐতিহ্য, খাল, উন্মুক্তস্থান রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া হবে। খালের চলমান প্রবাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে নিশ্চিত করা হবে।’

আশরাফুল ইসলাম বলেন, কেরানিগঞ্জে প্রায় ১০০ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক করার চিন্তা করা হচ্ছে, তা রাজউক বাস্তবায়ন করবে। গত ড্যাপে কী কী সমস্যা ছিল, তা চিহ্নিত করে এই ড্যাপে থাকবে।

অধ্যাপক আবু সাঈয়ীদ বলেন, ‘আমাদের শহরটা একটা উইয়ের ঢিবির মতো, গ্রামগুলোও তাই। আমাদের রাস্তার কনসেপ্ট নাই, চোখের সামনে তৈরি হলো ঢাকা শহর। কিন্তু রাস্তার কোন কনসেপ্ট নেই, বাড়ি তৈরি করে কিন্তু রাস্তা নাই। এখানে রাস্তা কেটে ক্রমাগত ছোট করা হয়েছে। রাজধানীতে কমপক্ষে ২৫ ফিট রাস্তা করা উচিত ছিল।’

ফ্লাইওভার করে শহরটাকে মেরে ফেলা হয়েছে মন্তব্য করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘ফ্লাইওভার করে আমাদের কোন লাভ হয়নিই। যাত্রাবাড়ীতে আট লেনের রাস্তা ছিল। ফ্লাইওভার করে উপরে চার লেন হলো, আর নিচে চার লেন হলো। কী লাভ হলো? রাস্তাটাকে করব দিয়ে দেওয়া হলো।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

পরিকল্পনা ব্যর্থ আসছে নতুন ড্যাপ

আপডেট টাইম : ১২:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানীকে ঢেলে সাজাতে সাত বছর আগে নেয়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)-২০১০ বাস্তবায়নে ব্যর্থতার পর আবার নতুন একটি ড্যাপের পরিকল্পনা করেছে রাজধানী উন্নয়ক কর্তৃপক্ষ-রাজউক। এ নিয়ে স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ, নাগরিক সমাজের সদস্যসহ বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মত বিনিময় করেছে সংস্থাটি।

রবিবার রাজউক কার্যালয়ে সংশোধিত ড্যাপ নিয়ে এই মতবিনিময় হয়। সভায় নগরপরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবু সাঈয়ীদ, রাজউকের প্রধান নগর পকিল্পনা সিরাজুল ইসলাম, ড্যাপ-২০১৭ এর প্রকল্প পরিচলাক আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেয়।

ঢাকাকে একটি আধুনিক ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে এর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) হাতে নেয়া হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু এটি নানা কারণে ব্যর্থ হয়। ব্যার্থতার কারণগুলো চিহ্নিত করে এবার নেয়া হয়েছে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)-২০১৭। এটি বাস্তবায়ন হবে ২০৩৫ সালের মধ্যে।

ইকবাল হাবিব বলেন, ‘ড্যাপ আমাদের স্বপ্ন ছিল, কিন্তু সেখানে ডেনসিটি কন্ট্রোলের ম্যাপিং ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘রাজধানীকে বসবাসের যোগ্য করতে খাল পুকুর দখল হলে, সেগুলো নতুন করে চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করতে হবে।’

ইকবাল হাবিব বলেন, ‘রাজধানীতে রান অব ওয়াটারের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। নতুন খাল, সংযোগ খাল তৈরি করে ঢাকাকে বাঁচাতে হবে। এ বছরের বর্ষায় তা আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে আমাদের। জলের ধারার নেট ওয়ার্ক তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। রান অব ওয়াটার কিভাবে নদী পর্যন্ত যাবে তার পরিকল্পনা আমাদের করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম নাজিম বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা অনেক বেশি, সেটা মাথায় রেখে ড্যাপ-২০১৭ করলে ভালো হবে। এই পরিকল্পনায় পদ্মা সেতু হওয়ার পরে দক্ষিণ ঢাকার কী পরিবর্তন হবে তা উঠে আসেনি। গাবতলী এখনও সমস্যার জায়গা, সেখানেও এ্যাড্রেস করার দরকার।’

এই পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘উন্মুক্ত জায়গা, খাল, বাগান কতটুকু হবে, সেগুলো সেরকম আসে নাই। এগুলো পরিকল্পনায় রাখতে হবে, তাহলে বাস্তবায়ন হবে।’

মতবিনিময় সভায় রাজউকের ড্যাপ-২০১০ প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ড্যাপ যে বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তা নয়। কিছু কিছু বাস্তবায়ন হচ্ছে, তবে সেটা নীতিভাবে হচ্ছে। ড্যাপ-২০১৭ নতুন করে করা হচ্ছে না, এটা সংশোধন করা হচ্ছে।’

ড্যাপ-২০১৭ প্রকল্প পরিচালক উপ-নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এই পরিকল্পনায় ঢাকা শহরের ঐতিহ্য, খাল, উন্মুক্তস্থান রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া হবে। খালের চলমান প্রবাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে নিশ্চিত করা হবে।’

আশরাফুল ইসলাম বলেন, কেরানিগঞ্জে প্রায় ১০০ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক করার চিন্তা করা হচ্ছে, তা রাজউক বাস্তবায়ন করবে। গত ড্যাপে কী কী সমস্যা ছিল, তা চিহ্নিত করে এই ড্যাপে থাকবে।

অধ্যাপক আবু সাঈয়ীদ বলেন, ‘আমাদের শহরটা একটা উইয়ের ঢিবির মতো, গ্রামগুলোও তাই। আমাদের রাস্তার কনসেপ্ট নাই, চোখের সামনে তৈরি হলো ঢাকা শহর। কিন্তু রাস্তার কোন কনসেপ্ট নেই, বাড়ি তৈরি করে কিন্তু রাস্তা নাই। এখানে রাস্তা কেটে ক্রমাগত ছোট করা হয়েছে। রাজধানীতে কমপক্ষে ২৫ ফিট রাস্তা করা উচিত ছিল।’

ফ্লাইওভার করে শহরটাকে মেরে ফেলা হয়েছে মন্তব্য করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘ফ্লাইওভার করে আমাদের কোন লাভ হয়নিই। যাত্রাবাড়ীতে আট লেনের রাস্তা ছিল। ফ্লাইওভার করে উপরে চার লেন হলো, আর নিচে চার লেন হলো। কী লাভ হলো? রাস্তাটাকে করব দিয়ে দেওয়া হলো।