বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শীতের আগেই ফিরিয়ে নিতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আর দেশটিকে এ জন্য চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্পদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সোমবার কক্সবাজারের উখিয়ায় ময়নার ঘোনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন বিএনপি নেত্রী। এই সফরে তিনি মোট ৪৫ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
এই ত্রাণের মধ্যে আছে ১১০ টন চাল এবং পাঁচ হাজার শিশু ও পাঁচ হাজার সন্তানসম্ভবা নারীর জন্য বিশেষ খাবার। ৪৫ ট্রাক ত্রাণের মধ্যে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল বিতরণ করছে নয় ট্রাক ত্রাণ। বাকি ত্রাণ হস্তান্তর করা হয়েছে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর কাছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর সেখানে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের দমনে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। তারা নির্বিচারে বাড়িঘর জ্বালিয়ে হত্যা, ধর্ষণসহ নানা নির্যাতন করছে বলে অভিযোগ আছে। আর এই অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের দিকে দলে দলে ছুটে এসেছে এই জনগোষ্ঠী।
প্রথম দিকে অনুপ্রবেশে বাঁধা দিলেও রাখাইন রাজ্যে করুণ অবস্থা সম্পর্কে জানার পর সীমান্ত খুলে দেয় সরকার। আর গত দুই মাসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের আশ্রয় হয়েছে প্রধানত কক্সবাজারের উখিয়ায়।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে সরকার এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা, রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি এই জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত তৈরির উদ্যোগও নিয়েছে ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্যুটি জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনেও তুলেছেন।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সময় বিএনপি নেত্রী অবস্থান করছিলেন যুক্তরাজ্যে। দেশে ফেরার ১০ দিন পর গত শনিবার তিনি কক্সবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হন। দুদিন পর সোমবার সকালে কক্সবাজার থেকে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দিকে রওয়ানা হন।
ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি নেত্রী। পরে সেখানে তিনি বক্তব্য রাখেন প্রায় ১৫ মিনিটর। এই বক্তব্যে তিনি রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে দিতে এবং তাদের নাগরিকত্ব নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘সামনে শীত আসছে, শরণার্থীদের বিশেষ করে শিশু ও নারীরা আছেন। তাদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে এদেরকে ফিরিয়ে নিন’।
‘বাংলাদেশও গরিব দেশ। কিন্তু জনগণের মন অনেক বড়। নিজের পকেট থেকে মানুষকে টাকা দিতে তারা দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু দীর্ঘদিন এদের বহন করা সম্বভ না। ’
ময়নার ঘোনা এলাকায় বক্তব্য ও ত্রাণ বিতরণ শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন যান বালুখালী মেডিকেল ক্যাম্পে। সেখান থেকে তার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং পরে জামতলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার কর্মসূচি নির্ধারিত ছিল আগে থেকেই।
উখিয়া সফর শেষে খালেদা জিয়ার আবার কক্সবাজার ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখান থেকে তিনি আজই চট্টগ্রামের পথে রওয়ানা হবেন। বন্দরনগরীতে রাত যাপন শেষে মঙ্গলবার ঢাকায় ফেরার সফরসূচি আগেই নির্ধারণ করা আছে।