২১ অাগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মৃত্যুর ভয় পাই না। ওপরে আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে আমি মাথানত করি না।
শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ওই গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, যাতে প্রাণ হারান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী ও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভী রহমানসহ ২৪ জন।
হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও শ্রবণ শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
হামলার ১২ বছরপূর্তিতে রোববার ভয়াবহ ওই ঘটনা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি কখনো মৃত্যুকে ভয় করি না। কারো কাছে আমি মাথানত করি না। একমাত্র আল্লাহর কাছেই সেজদা দেই, আল্লাহর কাছেই মাথানত করি। আর কারো কাছে না। মরার আগে আমি মরতে চাই না। আমি জাতির পিতার কন্যা।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলের প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত স্পষ্ট, আমরা কোনো সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চাই না। দেশে কোনো সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থাকবে না।
জঙ্গি হামলার পেছনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, যেখানে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে ষড়যন্ত্রের গভীরতা উপলব্ধি করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, সবদিক থেকে বাংলাদেশ যখন সুস্থভাবে চলছে, তখনও দেখা যাচ্ছে- দেশের ভেতরে কিছু আর কিছু বিদেশি শক্তি, যারা মুক্তিযুদ্ধের
সময় বিরোধিতা করেছে, নানা ধরনের চক্রান্ত করেছে, যারা আমাদের সম্পদ অন্যের কাছে বেচতে চেয়েছে, নানা ধরনের চক্রান্ত এখনো চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সম্প্রতি প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে মসজিদের ইমামসহ দুজনকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো দেশেই আর কেউ নিরাপদ নয়। সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদ বাংলাদেশের একার না, সারা বিশ্বে এ ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছেই শেখ হাসিনা প্রথমে ২১ অগাস্টে নিহতদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা।
এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, উপদেষ্ট পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমদসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারের নেতত্বে ১৪ দল এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মেয়র সাঈদ খোকন অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২১ অাগস্ট হামলার জন্য তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দায়ী। এ ঘটনার পর সংসদে আমাদের একটি কথা বলতে দেয়া হয়নি। এ ঘটনার নিন্দা করে নিন্দা প্রস্তাব দিতে দেয়া হয়নি। কারণ কী? এতেই স্পষ্ট- কারা এর সাথে জড়িত ছিল। কাউকে আর চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে হয় না।
২১ অাগস্টে ওই হামলার আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান নিজেদের বাসা ছেড়ে ধানমণ্ডিতে শ্বশুরবাড়িতে ৮ থেকে ১০ মাস অবস্থানের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কেন ছিল? ষড়যন্ত্রগুলো ওখানে বসে করতে সুবিধা, তাই?
তিনি বলেন, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার কিছুদিন আগে এক বক্তৃতায় খালেদা জিয়া বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়া তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনোদিন হতে পারবেন না শেখ হাসিনা।
তার বক্তব্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার ওই বক্তব্যের সূত্র ধরেই যদি ২১ অগাস্টের ঘটনা দেখি, তাহলে কী দাঁড়ায় ? যে মুহূর্তে আমি আমার বক্তব্য শেষ করে ‘জয় বাংলা’ বলে হাতের মাইকটা টেবিলে রেখেছি, তখনই সেই গ্রেনেড হামলা শুরু হলো। একটার পর একটা গ্রেনেড মারা হচ্ছে। প্রথম তিনটা গ্রেনেড মারার পর কয়েক সেকেন্ড সময়, এরপর আবার একটার পর একটা গ্রেনেড।
তিনি বলেন, জানি না আমার কী ভাগ্য! গ্রেনেড ট্রাকের ভেতরেই পড়ার কথা। কিন্তু সেখানে না পড়ে ডালায় লেগে পাশে পড়ে যায়।
সে সময় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফসহ শেখ হাসিনার নিরাপত্তাকর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে তাকে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার থেকে রক্ষা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, একটার পর একটা গ্রেনেড মেরেছে। ১৩টা গ্রেনেড তারা ছুড়েছিল। মনে হচ্ছিল ‘কেয়ামত’ এসে গেছে। আমার চোখের চশমা ছিটকে পড়ে যায়। দূরে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। ওই অবস্থায় আমার সাথে নিরাপত্তায় যারা ছিল, তারা যখন পাল্টা গুলি ছুড়ল, তখনই ওটা থামল।