বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটারের তথ্য সম্বলিত ডেটাবেজ বা তথ্যভাণ্ডার। ওরাকল এক্সাডেটা মেশিনের আটটি ডেটাবেজের সার্ভারের মধ্যে তিনটিতে বিপদ সংকেত দেখাচ্ছে। এছাড়া ১৪টি স্টোরেজ সার্ভারের মধ্যে নয়টির ড্রাইভ বিকল হয়ে গেছে। এতে ডাটাবেজের কর্মক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ফলে যেকোনো সময় ভোটারদের তথ্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যভাণ্ডার (ডেটা সেন্টার) স্থানান্তর বিষয়ে পরিকল্পনা ও কৌশল গ্রহণ সংক্রান্ত জাতীয় পর্যায়ের গঠিত কমিটির প্রথম সভায় এমন চিত্র উঠে আসে।
সভায় বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অবস্থিত ইসির তথ্যভাণ্ডার যাতে ধ্বংস না হয়ে যায়, সে জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের। এদিকে ইসি সচিবালয় বলছে, প্রায় এক মাস আগে পরামর্শ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে পরিকল্পনা শুরু হয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ে গঠিত এই কমিটির সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনে থাকা তথ্যভাণ্ডারের বেশ কিছু সমস্যা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো পরিকল্পিতভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনে তথ্যভাণ্ডার তৈরি না হওয়ায় সেখানে এখন পর্যাপ্ত জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। তথ্যভাণ্ডার স্থাপন করা স্থানে (ফ্লোরে) প্রকল্পের অন্যান্য মালামাল রাখা হয়েছে। তথ্যভাণ্ডারের কাছাকাছি বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ আছে, যেগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এমন বাস্তবতায় পুরো তথ্য ভাণ্ডার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে বর্তমানে জেনারেটরের ব্যাকআপও পর্যাপ্ত নয় বলে সভায় চিহ্নিত করা হয়।
সভায় উঠে আসে, ওরাকল এক্সাডেটা মেশিনের আটটি ডাটাবেজেরে সার্ভারের মধ্যে তিনটিতে ক্রিটিক্যাল ওয়ার্নিং (বিপদ সংকেত) দেখাচ্ছে। এ ছাড়া ১৪টি স্টোরেজ সার্ভারের (তথ্য সংরক্ষণের স্থান) মধ্যে নয়টির ড্রাইভ বিকল হয়ে গেছে। এতে ডাটাবেজের কর্মক্ষমতা (পারফরম্যান্স) উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ফলে জাতীয় পরিচয় সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ভোটারদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য ডিসি ও ডিআরএস তথ্যভাণ্ডার পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে (বিসিসি) থাকা তথ্যভাণ্ডারটি ডিআরএস হিসেবে এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনে অবস্থিত তথ্য ভাণ্ডারটি ডিসি হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু বিসিসিতে থাকা ডিআরএস তথ্যভাণ্ডারের (ডেটা সেন্টার) জায়গা পূর্ণ (স্টোরেজ ফুল) হওয়ায় এখন ডিসি ও ডিআরএসের মধ্যে কোনো রিয়েল টাইম সিনক্রোনাইজেশন বা সঠিক সময়ে স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ হচ্ছে না।
ডেটা সেন্টারে ব্যবহার করা সব হার্ডওয়্যার, সার্ভার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির (এসি ও ইউপিএস) মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলেও সভায় জানানো হয়।
এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সিস্টেম অ্যানালিস্ট (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফারজানা আখতার বলেন, ‘ডিআরএস ডেটা সেন্টার আপগ্রেডের কাজ এখনো শুরু হয়নি, তবে পরিকল্পনা শুরু হয়েছে।’
জানা গেছে, ইসির তথ্যভাণ্ডার স্থানান্তর বিষয়ে পরিকল্পনা ও কৌশল সংক্রান্ত জাতীয় পর্যায়ের গঠিত কমিটির প্রথম সভায় সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে-একাদশ জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের পর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনে স্থাপিত ডেটা সেন্টারটি স্থানান্তর করে পাশের নির্বাচন ভবনে নিয়ে যাওয়া, জাতীয় নির্বাচনের পরই যেন জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচন ভবনে ডেটা সেন্টার স্থাপনে সার্বিক প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা যায়, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ডিআরএসের সঙ্গে ডিসির ডেটা সঠিক সময়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে না হওয়ায় ডিসির ডেটা দ্রুত ব্যাকআপ নেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। সেই সঙ্গে যথাশীঘ্র বিসিসিতে স্থাপিত ডিআরএসকে আপগ্রেড করে মূল ডেটা সেন্টারের সঙ্গে সঠিক সময়ে স্বয়ংক্রিয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিশেষায়িত টিম/কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে ডাটা সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বিশ্লেষণ ও ডকুমেন্টেশন (যেমন: ডিসি মাইগ্রেশন পরিকল্পনা, ঝুঁকি বিশ্লেষণ ইত্যাদি) দ্রুত প্রস্তুত করতে হবে। টেকনিক্যাল সাব কমিটি গঠন করতে হবে এবং কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রস্তুত করা ডকুমেন্টশন যাচাই করতে হবে।
সভায় তথ্যভাণ্ডার নির্বাচন ভবনে প্রতিস্থাপন না করা পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের তথ্যভাণ্ডারে ব্যবহৃত এসি, ইউপিএস, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির সংস্থান উপযুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়। এ ছাড়া এসব সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক বরাদ্দ পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়।
সেই সঙ্গে অগ্নি-নির্বাপনের জন্য ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করারও সিদ্ধান্ত হয় সভায়।
সভায় ইসি সচিবালয়ের সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হক বলেন, ডিআরএসকে আপগ্রেড করা এবং ডিসির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আদর্শ নির্দেশনা অনুসরণ করে বর্তমানে ব্যবহৃত সব সফটওয়্যার, ডাটাবেজ, হার্ডওয়্যার এবং ডেটা সেন্টারের জন্য ডকুমেন্টেশন তৈরি ও সংরক্ষণ করা জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।
সম্প্রতি বিসিসিতে যেসব হ্যাকিং অ্যাটাক হয়েছে, তা শুধু ওয়েব সার্ভার পর্যন্ত ছিল বলে জানান টাইগার আইটি লিমিটেডের আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। তার পরামর্শ, বিসিসির ডেটাবেজ পর্যন্ত কখনোই হ্যাকিং সম্ভব নয়। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে নিজেদের ওয়েব সার্ভার করে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।