ঢাকা , শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্মার্টকার্ড প্রকল্প: টাকা কম নিয়ে সমঝোতা ফ্রান্সের কোম্পানির

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ চুক্তি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ৯ কোটি স্মার্টকার্ড তৈরি করে দিতে ব্যর্থ হয় ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ওবার্থু’স টেকনোলজিস। সময় বাড়ালেও প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ করতে না পারায় চুক্তি বাতিল করে নিজেরাই বাকি কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। চুক্তি বাতিল করার পর ইসির কাছে তাদের পাওনা দাবি করে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি।

অবশেষে চুক্তির নির্ধারিত টাকার চেয়ে কম টাকা নিয়ে ইসির সঙ্গে সমঝোতা করে প্রতিষ্ঠানটি। জানা যায়, ১০ অক্টোবর ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি-এডিক বোর্ডিনের মধ্যস্থতায় রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে ওবার্থু’স টেকনোলজিসের বৈঠক হয়। বৈঠকে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি ৩৫১ কোটি ৪৩ লাখ ১৪ হাজার ৩১৭ টাকা দাবি করলেও সমঝোতার ভিত্তিতে ২১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকায় তা মিমাংসা হয়।

সমঝোতার বিষয়ে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সাংবাদিককে জানান, ‘ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ওবার্থু’স টেকনোলজিসের সঙ্গে আমাদের চুক্তি ছিল ৯০ মিলিয়ন (৯ কোটি) স্মার্টকার্ড তারা তৈরি করে দেবে। ফ্রান্স বা চায়না থেকে মানসম্পন্ন কার্ড তারা সরবরাহ করবে। সেই কার্ড এখানে আসবে এবং আমাদের কেন্দ্রে পারসোনালাইজেশন হবে। কার্ডগুলো আমাদের উপজেলা/থানা নির্বাচন কার্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করব। এই উপজেলা/থানা নির্বাচন কার্যালয় পর্যন্ত হস্তান্তরের দায়িত্ব ছিল ওবার্থু’স টেকনোলজিসের।

তিনি বলেন, চুক্তির অংশ হিসেবে পুরো দায়িত্ব বুঝে নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এই কার্যক্রমের জন্য তাদের সঙ্গে ১০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (৮৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকা) চুক্তি ছিল। ১৮ মাসের চুক্তির সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয় তারা। এই চুক্তিবদ্ধ সময়ের মধ্যে তারা ১১ দশমিক ৩ মিলিয়ন স্মার্টকার্ড দিতে পেরেছিল। পারসোনালাইজেশন ও ডেলিভারি সবই ১০ মিলিয়নের (১ কোটির) নিচে ছিল। সামগ্রিকভাবে তাদের ব্যর্থতা ছিল ৯০ ভাগ।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু বিদেশি কোম্পানি, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন তাদেরকে আরেকবার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এক বছরের চুক্তি বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এই মেয়াদ শেষে স্মার্টকার্ড আনার ক্ষেত্রে তাদের সফলতা ভালো ছিল। ৭৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন কার্ড আমাদের সরবরাহ করে তারা। কিন্তু তারা স্মার্টকার্ড পারসোনালাইজেশন করতে পেরেছে মাত্র ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রেও তারা কাজটি শেষ করতে সক্ষম হয়নি। এখানেও তাদের ব্যর্থতা প্রায় ৮৭ শতাংশ। আর উপজেলা পর্যন্ত তারা ১০ দশমিক ২ শতাংশ স্মার্টকার্ড সরবরাহ করে।

এনআইডির মহাপরিচালক বলেন, এই পুরো কার্যক্রম পর্যালোচনা করে নির্বাচন কমিশন এদের সঙ্গে আর চুক্তি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০১৭ সালের ২৩ জুলাইয়ের দিকে সিদ্ধান্ত হয়, তাদের সঙ্গে আমরা আর কোনো কাজ করব না। প্রকল্প বন্ধ না করে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করি, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের যে টেকনিক্যাল টিম, এক্সপার্ট, আইটি এক্সপার্ট এবং প্রকল্পের যে জনবল আছে, এগুলোকে সম্পৃক্ত করে এই প্রকল্প এগিয়ে নেই।

তিনি বলেন, ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি ৩০ মাসে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ কার্ড পারসোনালাইজেশন করতে পেরেছিল। অর্থাৎ প্রতি মাসে তারা কার্ড পারসোনালাইজেশন করত গড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ। কিন্তু আমাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে করাতে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ কার্ড পারসোনালাইজেশন করতে সক্ষম হই। আউটসোর্সিং কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, নির্বাচন কমিশন নিজেরা করতে সক্ষম হয়েছে এই কাজ।

চুক্তি অনুযায়ী ওবার্থু’স টেকনোলজি ৭৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন কার্ড আমাদের সরবরাহ করেছে। এই প্রকল্পের প্রায় ৫৯ শতাংশই কার্ডের মূল্য। কার্ডের মূল্যটাই বেশি।

চুক্তি ভঙ্গের জন্য তিনটি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথম পদক্ষেপ ছিল সমঝোতা। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো অ্যাডজুডিকেশন এবং তার পরের ধাপ আরবিট্রেশন। এই আরবিট্রেশন হবে আন্তর্জাতিক আদালতে। আরবিট্রেশন করলে আমাদের জন্য ব্যয়সাপেক্ষ। আমরা চেষ্টা করেছি অ্যাডজুডিকেশন ও সমঝোতার মাধ্যমে যদি সমাধান করা সম্ভব হয়, তাহলে আমরা সেটার মাধ্যমে চেষ্টা করব। যদি ব্যর্থ হই, সর্বশেষ আমরা আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশনের জন্য যেতাম। এরই অংশ হিসেবে আমরা তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে বিভিন্ন সময় সভা করি। আমাদের সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ ছিল গ্যারান্টির সব টাকা আমরা কৌশলে, বৈধভাবে নিজেদের আওতায় নিয়ে এসেছি। ৮ দশমিক ১৬ ইউএস ডলার আমরা ফ্রান্সের ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করে আমরা আমাদের অ্যাকাউন্টে নিয়ে এসেছি।

সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে স্মার্টকার্ডের যে টাকাগুলো ছিল, সেগুলো আমি দিইনি। তাদেরকে বলেছি, কার্ড দেন, টাকা দেবো। যখন দেখতে পাচ্ছি, তাদের সঙ্গে আমরা আরবিট্রেশনে যেতে পারি, তারপরও তাদের কার্ডের টাকাটা ধরে রেখেছি।

৯০ মিলিয়নের মধ্যে বাকি থাকা কার্ডগুলোও আমাদেরকে দিতে হবে প্রতিষ্ঠানটির। সেই স্মার্টকার্ড ইতোমধ্যে প্রস্তুত। কিন্তু সেগুলো যদি আমরা না আনি, তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আমরা তাদেরকে বলেছি, আমরা এই টাকা পরিশোধ করব। কিন্তু তাদের কাছে বাকি থাকা কার্ডগুলোও ফেরত দিতে হবে, যাতে করে কোনো কার্ড যেন বাইরে না যায়। কার্ডের মান নিশ্চিত করে আমাদের হাতে দিতে হবে। তারপর আমরা চিন্তা করব, তাদের দাবি থেকে আমরা কত টাকা দেবো। তা না হলে আমরা আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশনে যাব।

তাদের দাবির ৫৬ মিলিয়ন থেকে কমিয়ে ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে গ্রহণ করতে বাধ্য করি। এই ২৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার দিয়ে আমাদের সব দেনা-পাওনা মেটাতে সক্ষম হয়েছি। কার্ড ও অন্যান্য যেসব জিনিস আমরা প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাব, সেগুলো বুঝে পেলে আমরা আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে টাকাগুলো তাদেরকে ফেরত দিব।

ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি সময় নষ্ট করেছে, যথাসময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে বিষয়টি নজরে আনলে সাইদুল ইসলাম জানান, সে জন্যই প্রতিষ্ঠানটিকে দাবি অনুযায়ী টাকা দেওয়া হয়নি। ৯ কোটি স্মার্টকার্ড তৈরির চুক্তি হয় ফ্রান্সের ওবার্থু’স টেকনোলজিসের সঙ্গে। চুক্তির মূল্য ছিল ৮৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকা (১০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। চুক্তির শুরুতে ওবার্থু’স টেকনোলজিসকে ২৯৫ কোটি ৭৫ লাখ (৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) টাকা দেওয়া হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি ৩৫১ কোটি ৪৩ লাখ ১৪ হাজার ৩১৭ টাকা (৪১৫৮৯৫১৮.৫৫ ডলার ) দাবি করলে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ২১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা (২৬ মিলিয়ন ডলার) দিতে রাজি হয়। তাদের মোট পাওনা থেকে সাশ্রয়, পারফরমেন্স গ্যারান্টি ও অ্যাডভান্স পেমেন্ট গ্যারান্টি থেকে সব মিলিয়ে আমাদের সাশ্রয় হয়  (৩০১৩৪৫১৮.৫৫ ডলার) বা ২৫৪ কোটি ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮১৭ টাকা যোগ করেন এনআইডির মহাপরিচালক।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

স্মার্টকার্ড প্রকল্প: টাকা কম নিয়ে সমঝোতা ফ্রান্সের কোম্পানির

আপডেট টাইম : ০৪:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ চুক্তি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ৯ কোটি স্মার্টকার্ড তৈরি করে দিতে ব্যর্থ হয় ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ওবার্থু’স টেকনোলজিস। সময় বাড়ালেও প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ করতে না পারায় চুক্তি বাতিল করে নিজেরাই বাকি কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। চুক্তি বাতিল করার পর ইসির কাছে তাদের পাওনা দাবি করে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি।

অবশেষে চুক্তির নির্ধারিত টাকার চেয়ে কম টাকা নিয়ে ইসির সঙ্গে সমঝোতা করে প্রতিষ্ঠানটি। জানা যায়, ১০ অক্টোবর ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি-এডিক বোর্ডিনের মধ্যস্থতায় রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে ওবার্থু’স টেকনোলজিসের বৈঠক হয়। বৈঠকে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি ৩৫১ কোটি ৪৩ লাখ ১৪ হাজার ৩১৭ টাকা দাবি করলেও সমঝোতার ভিত্তিতে ২১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকায় তা মিমাংসা হয়।

সমঝোতার বিষয়ে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সাংবাদিককে জানান, ‘ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ওবার্থু’স টেকনোলজিসের সঙ্গে আমাদের চুক্তি ছিল ৯০ মিলিয়ন (৯ কোটি) স্মার্টকার্ড তারা তৈরি করে দেবে। ফ্রান্স বা চায়না থেকে মানসম্পন্ন কার্ড তারা সরবরাহ করবে। সেই কার্ড এখানে আসবে এবং আমাদের কেন্দ্রে পারসোনালাইজেশন হবে। কার্ডগুলো আমাদের উপজেলা/থানা নির্বাচন কার্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করব। এই উপজেলা/থানা নির্বাচন কার্যালয় পর্যন্ত হস্তান্তরের দায়িত্ব ছিল ওবার্থু’স টেকনোলজিসের।

তিনি বলেন, চুক্তির অংশ হিসেবে পুরো দায়িত্ব বুঝে নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। এই কার্যক্রমের জন্য তাদের সঙ্গে ১০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (৮৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকা) চুক্তি ছিল। ১৮ মাসের চুক্তির সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয় তারা। এই চুক্তিবদ্ধ সময়ের মধ্যে তারা ১১ দশমিক ৩ মিলিয়ন স্মার্টকার্ড দিতে পেরেছিল। পারসোনালাইজেশন ও ডেলিভারি সবই ১০ মিলিয়নের (১ কোটির) নিচে ছিল। সামগ্রিকভাবে তাদের ব্যর্থতা ছিল ৯০ ভাগ।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু বিদেশি কোম্পানি, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন তাদেরকে আরেকবার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এক বছরের চুক্তি বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এই মেয়াদ শেষে স্মার্টকার্ড আনার ক্ষেত্রে তাদের সফলতা ভালো ছিল। ৭৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন কার্ড আমাদের সরবরাহ করে তারা। কিন্তু তারা স্মার্টকার্ড পারসোনালাইজেশন করতে পেরেছে মাত্র ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রেও তারা কাজটি শেষ করতে সক্ষম হয়নি। এখানেও তাদের ব্যর্থতা প্রায় ৮৭ শতাংশ। আর উপজেলা পর্যন্ত তারা ১০ দশমিক ২ শতাংশ স্মার্টকার্ড সরবরাহ করে।

এনআইডির মহাপরিচালক বলেন, এই পুরো কার্যক্রম পর্যালোচনা করে নির্বাচন কমিশন এদের সঙ্গে আর চুক্তি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২০১৭ সালের ২৩ জুলাইয়ের দিকে সিদ্ধান্ত হয়, তাদের সঙ্গে আমরা আর কোনো কাজ করব না। প্রকল্প বন্ধ না করে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করি, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের যে টেকনিক্যাল টিম, এক্সপার্ট, আইটি এক্সপার্ট এবং প্রকল্পের যে জনবল আছে, এগুলোকে সম্পৃক্ত করে এই প্রকল্প এগিয়ে নেই।

তিনি বলেন, ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি ৩০ মাসে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ কার্ড পারসোনালাইজেশন করতে পেরেছিল। অর্থাৎ প্রতি মাসে তারা কার্ড পারসোনালাইজেশন করত গড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ। কিন্তু আমাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে করাতে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ কার্ড পারসোনালাইজেশন করতে সক্ষম হই। আউটসোর্সিং কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, নির্বাচন কমিশন নিজেরা করতে সক্ষম হয়েছে এই কাজ।

চুক্তি অনুযায়ী ওবার্থু’স টেকনোলজি ৭৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন কার্ড আমাদের সরবরাহ করেছে। এই প্রকল্পের প্রায় ৫৯ শতাংশই কার্ডের মূল্য। কার্ডের মূল্যটাই বেশি।

চুক্তি ভঙ্গের জন্য তিনটি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথম পদক্ষেপ ছিল সমঝোতা। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হলো অ্যাডজুডিকেশন এবং তার পরের ধাপ আরবিট্রেশন। এই আরবিট্রেশন হবে আন্তর্জাতিক আদালতে। আরবিট্রেশন করলে আমাদের জন্য ব্যয়সাপেক্ষ। আমরা চেষ্টা করেছি অ্যাডজুডিকেশন ও সমঝোতার মাধ্যমে যদি সমাধান করা সম্ভব হয়, তাহলে আমরা সেটার মাধ্যমে চেষ্টা করব। যদি ব্যর্থ হই, সর্বশেষ আমরা আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশনের জন্য যেতাম। এরই অংশ হিসেবে আমরা তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে বিভিন্ন সময় সভা করি। আমাদের সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ ছিল গ্যারান্টির সব টাকা আমরা কৌশলে, বৈধভাবে নিজেদের আওতায় নিয়ে এসেছি। ৮ দশমিক ১৬ ইউএস ডলার আমরা ফ্রান্সের ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করে আমরা আমাদের অ্যাকাউন্টে নিয়ে এসেছি।

সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে স্মার্টকার্ডের যে টাকাগুলো ছিল, সেগুলো আমি দিইনি। তাদেরকে বলেছি, কার্ড দেন, টাকা দেবো। যখন দেখতে পাচ্ছি, তাদের সঙ্গে আমরা আরবিট্রেশনে যেতে পারি, তারপরও তাদের কার্ডের টাকাটা ধরে রেখেছি।

৯০ মিলিয়নের মধ্যে বাকি থাকা কার্ডগুলোও আমাদেরকে দিতে হবে প্রতিষ্ঠানটির। সেই স্মার্টকার্ড ইতোমধ্যে প্রস্তুত। কিন্তু সেগুলো যদি আমরা না আনি, তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আমরা তাদেরকে বলেছি, আমরা এই টাকা পরিশোধ করব। কিন্তু তাদের কাছে বাকি থাকা কার্ডগুলোও ফেরত দিতে হবে, যাতে করে কোনো কার্ড যেন বাইরে না যায়। কার্ডের মান নিশ্চিত করে আমাদের হাতে দিতে হবে। তারপর আমরা চিন্তা করব, তাদের দাবি থেকে আমরা কত টাকা দেবো। তা না হলে আমরা আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশনে যাব।

তাদের দাবির ৫৬ মিলিয়ন থেকে কমিয়ে ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে গ্রহণ করতে বাধ্য করি। এই ২৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার দিয়ে আমাদের সব দেনা-পাওনা মেটাতে সক্ষম হয়েছি। কার্ড ও অন্যান্য যেসব জিনিস আমরা প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাব, সেগুলো বুঝে পেলে আমরা আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে টাকাগুলো তাদেরকে ফেরত দিব।

ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটি সময় নষ্ট করেছে, যথাসময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে বিষয়টি নজরে আনলে সাইদুল ইসলাম জানান, সে জন্যই প্রতিষ্ঠানটিকে দাবি অনুযায়ী টাকা দেওয়া হয়নি। ৯ কোটি স্মার্টকার্ড তৈরির চুক্তি হয় ফ্রান্সের ওবার্থু’স টেকনোলজিসের সঙ্গে। চুক্তির মূল্য ছিল ৮৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকা (১০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। চুক্তির শুরুতে ওবার্থু’স টেকনোলজিসকে ২৯৫ কোটি ৭৫ লাখ (৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) টাকা দেওয়া হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি ৩৫১ কোটি ৪৩ লাখ ১৪ হাজার ৩১৭ টাকা (৪১৫৮৯৫১৮.৫৫ ডলার ) দাবি করলে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ২১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা (২৬ মিলিয়ন ডলার) দিতে রাজি হয়। তাদের মোট পাওনা থেকে সাশ্রয়, পারফরমেন্স গ্যারান্টি ও অ্যাডভান্স পেমেন্ট গ্যারান্টি থেকে সব মিলিয়ে আমাদের সাশ্রয় হয়  (৩০১৩৪৫১৮.৫৫ ডলার) বা ২৫৪ কোটি ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮১৭ টাকা যোগ করেন এনআইডির মহাপরিচালক।