বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরেই মাঠে যায় তারা। এক ঘণ্টা নিজের প্লটে কাজ করে রুমে ফিরে রেডি হয়ে যায় ক্লাসে। শুধু ছাত্র নয় ছাত্রীদেরও একই রুটিন। দুপুরে ক্লাস সেরে রুমে ফিরে বিকেলে আবারো নিজের জমিতে চাষ করে ঝিনাইদহ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী।
তারা উৎপাদন করছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মুলা, গাজর, লালশাক, পালংশাক, ব্রকলি, ড্রাগন ফল, পুদিনা, ধনেপাতা, শালগম, ওলকপি, মটরশুটি, গম, সয়াবিন, ভুট্টা, রসুনসহ ৬০ প্রকার সবজি। এছাড়াও পালন করা হচ্ছে হাস, টার্কি মুরগি, মাছ, গরু ও কবুতর। এতে সফলও হয়েছে তারা। নিজেদের উৎপাদিত সবজি খাওয়াসহ বিক্রি করছে তারা।
জানা যায়, ২০০৬ সালে শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ২১ দশমিক ৩৮ একর জমির উপর এ কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। এ কেন্দ্রে তিনটি ভবনে ১০টি শ্রেণিকক্ষ, পাঁচটি ল্যাবরেটরি, একটি লাইব্রেরি, একটি সভাকক্ষ, শিক্ষার্থীদের হোস্টেল, অধ্যক্ষের বাসভবন, গুদামঘরসহ আরও কিছু ভবন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চারদিকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। রয়েছে বড় একটি মাঠ।
২০১৩ সালে শিক্ষক নাজিম উদ্দিন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের পরিত্যক্ত জমিতে ফসল উৎপাদনের উদ্যোগ নেন। শিক্ষার্থীরা যাতে কৃষিকাজের বাস্তব জ্ঞানসহ উৎপাদিত ফসল ভোগ করতে পারেন এমন ভাবনা থেকে শিখি-করি-খাই (শিকখা) কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। এ কাজে সফলতাও ধরা দিয়েছে। তাদের এ কর্মসূচি এখন কৃষি বিভাগ মডেল হিসেবে গ্রহণ করেছে। দেশের সব কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ২০১৩ সালে ৩৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রথম এ কার্যক্রম শুরু করেন। ক্যাম্পাসের মধ্যে পরিত্যক্ত ৬০ শতক জমি পরিষ্কার করে আবাদযোগ্য করেন। কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে জৈব পদ্ধতিতে করা হচ্ছে সবজি চাষ। তারা সারা বছর উৎপাদিত সবজি খাচ্ছেন। বর্তমানে আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ একরে। চাষ করা হচ্ছে ৬০ প্রকার ফসল। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে ছেলেমেয়েরা কাজ করছে ফসলের ক্ষেতে। পড়ালেখার পাশাপাশি শিখছে হাতে কলমে কৃষিকাজ। আর তাদের উৎপাদিত সবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করছে তারা।
১ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আরিফ বিল্যাহ বলেন, ‘আমার প্লটে সকালে ১ ঘণ্টা ও বিকেলে ১ ঘণ্টা করে কাজ করি। আমি চেষ্টা করছি আমার ফুল বাগানে অন্যদের থেকে ভালো ফুলের চাষ করতে।’
একই সেমিস্টারের শিক্ষার্থী উম্মে জারিন তাসনিম বলেন, ‘আমি আগে কখনো কোদাল বা নিড়ানি হাতে নেইনি। এখানে ভর্তি হওয়ার পর আমার জমি আমি নিজেই তৈরি করি। এতে আমার ভালোই লাগে।’
শারমিন আক্তার নামের অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে কাজ করে আমরা ফসল, মাটি, পোকামাকড়ের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। যা আমাদের ভবিষ্যতের কর্মজীবনে কাজে লাগবে।’
এ কর্মসূচির উদ্যোক্তা প্রশিক্ষক নাজিম উদ্দিন জানান, সাধারণত দেশের কৃষি প্রতিষ্ঠানগুলোয় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কৃষিকাজ দেখানোর জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। পোকা দমন ও চাষপদ্ধতি দেখানো হয়। শিক্ষার্থীরা যাতে পড়ালেখার পাশাপাশি সারা বছরই উৎপাদনে অংশ নিতে পারেন, এমন ভাবনা থেকেই এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের পুকুরে মাছ চাষ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নতা, উন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণ করেছেন।
প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের জানান, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ এখানে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারসহ নেই কোনো আধুনিক প্রযুক্তি। সরকার যদি এ চাহিদা মেটাতো তাহলে শিক্ষার্থীরা আরও ভালোভাবে প্রযুক্তিগত জ্ঞান আহরণ করতে পারত।
তিনি আরও জানান, শিখি-করি-খাই এ কর্মসূচি এখন কৃষি বিভাগের কাছে একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।