আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
শনিবার (১৩ মে) দুপুরে সিলেটের একটি হোটেলের কনফারেন্স রুমে রোটার্যাক্ট ক্লাব অব সিলেট সিটি আয়োজিত ‘রূপকার’ শীর্ষক কনফারেন্স অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ অভিযোগ করেন। এর আগে রোটার্যাক্ট ক্লাব অব সিলেট সিটির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আরিফুল হক।
সিসিক নির্বাচনের আগে প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, ‘প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা অতি উৎসাহী হয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। ব্যাপক ধড়পাকড় করা হচ্ছে। অনেক কর্মকর্তাকে বদলিও করা হচ্ছে। এগুলো নির্বাচনকে প্রভাবিত করার ইঙ্গিত।’
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে ভোটের প্রতি আস্থা ফেরানোর আহ্বান জানিয়ে আরিফুল হক বলেন, ‘যদি আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই তাহলে বুঝতে হবে প্রশাসনের কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডের প্রতি সন্দেহ গভীর রূপ নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে প্রশাসন গণহারে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করছে। এটা কীসের লক্ষণ?’
এবারের সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে শুরু থেকেই গুঞ্জন রয়েছে। এমন গুঞ্জনের মধ্যেই ১ মে নগরে শ্রমিক দলের এক অনুষ্ঠানে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে কোনো সিটি নির্বাচনে আমার দল বিএনপি অংশ নেবে না। তবে সিলেটের প্রেক্ষাপটে আমরা নির্বাচনে যাবো।
আরিফের এ বক্তব্যের পর দলের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। আরিফকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে বিএনপির বিভিন্ন মহল থেকে নানামুখী তৎপরতা শুরু হয়।
২০ মে নগরের রেজিস্টারি মাঠে সমাবেশ করে প্রার্থিতার বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার ঘোষণা দিয়েছেন আরিফুল হক। এর আগে আজ শনিবার প্রশাসনের ভূমিকার অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রার্থী না হতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দিলেন তিনি।
ইভিএম নিয়ে সমালোচনা করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ইভিএমের সঙ্গে নগরের মানুষজন একেবারেই অপরিচিত। নির্বাচনের ছয়মাস আগে ইমিএম বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। অথচ ভোটাররা এখনো পর্যন্ত ইভিএমের বিষয়ে কিছুই জানেন না। ইভিএমে ভোট স্বচ্ছ হবে না। কারসাজি করা হবে।’
তার জন্য বিএনপি বা আওয়ামী লীগের কোন চাপ নেই মন্তব্য করে আরিফুল হক বলেন, ‘সব দল তাদের অবস্থানে অনড়। এখানে ব্যক্তি আরিফ কোনো বিষয় না।’
অহেতুক ব্যক্তি আরিফকে নিয়ে ঢালাওভাবে মন্তব্য না করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এসময় নিজে সিলেট মহানগরের সব মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত বলেও মন্তব্য করেন আরিফুল হক চৌধুরী।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন ১৯০টি ভোট কেন্দ্রের সবগুলোতেই ইভিএমে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
শনিবার পর্যন্ত মেয়র পদে পাঁচজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান এবং তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আবদুল হানিফ ওরফে কুটু, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান ও সামছুন নুর তালুকদার।
সিলেটে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মহানগর শাখার আহ্বায়ক শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুল শনিবার বিকেল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। তবে তিনি নগরের বিভিন্ন এলাকায় মেয়র পদে তাকে লাঙল প্রতীকে ভোট দিতে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তবে নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে।