ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকারকে চাপে ফেলতে যে কৌশলে এগুচ্ছে বিএনপি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের চিন্তা করছে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। এ লক্ষ্যে গত দুবছর ধরে লবিং করছে দলটি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন গতিতে ক‚টনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে দলটি। এ লক্ষ্যে দলের যোগ্য ও অভিজ্ঞ কয়েকজন নেতা, সাবেক কূটনীতিক ও বুদ্ধিজীবীর সমন্বয়ে গঠন করেছে শক্তিশালী একটি আন্তর্জাতিক সেল। বিদেশি কূটনীতিকদের আস্থায় এনে তাদের সহায়তায় সরকারকে চাপে রাখার লক্ষ্যে বিদেশি মিশনগুলোতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে করেছেন এই সেলের সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। কিন্তু বিএনপির এ দাবিকে অসাংবিধানিক হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ পরিস্থিতিতে দেশের সমমনা দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার চিন্তা করছে বিএনপি। আর আন্দোলনে সাফল্য অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা নেয়ার কর্মকৌশল চূড়ান্ত করেছে দলটি।

২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিনের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়েন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এরপর ওই বছর ১৬ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে যান। লন্ডনে অবস্থানকালে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দলের ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এ সময় তারা দলের জন্য সুবিধা আদায় করতে আন্দোলনের পরিবর্তে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল তা থেকে উত্তরণের জন্য কূটনৈতিক সমর্থনই শেষ ভরসা। নির্বাচন কমিশন মোটামুটি নিরপেক্ষ থাকলে এবং কূটনৈতিক মহলের সমর্থন আদায় করতে পারলে সহায়ক সরকারের পক্ষে সরকারের প্রতি চাপ প্রয়োগ করা সহজ হবে। এমনকি একপর্যায়ে সরকার তা মানতেও বাধ্য হবে। যার ফলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের রায় বিএনপির পক্ষেই আসবে।

দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি সম্পর্কে কূটনৈতিক মহলে থাকা ‘ভুল’ ধারণা ভাঙতে বেশকিছু কর্মসূচি নিয়ে লন্ডনে গেছেন দলীয়প্রধান খালেদা জিয়া। এ কারণেই তার এবারের সফর বিএনপির রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেতারা জানান, প্র্রতিবেশী দেশ ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রভাবশালী বেশকিছু নেতার সঙ্গে লন্ডনে বৈঠক করবেন। এ ছাড়াও ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা, সরকার ও বিরোধী দলের শীর্ষ রাজনীতিবিদসহ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এক এমপির সঙ্গে বৈঠকসহ আরো কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক কর্মসূচির ‘সিডিউল’ অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়েছে। যেখানে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারকে চাপে রাখার বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। আর এ কারণেই খালেদা জিয়ার ‘ব্যক্তিগত’ সফরে দলের কূটনৈতিক বিষয়গুলো দেখভাল করেন এমন ৩ জন নেতা সেখানে গেছেন।

সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ড ধারণা করছে দলের প্রতি দেশি-বিদেশি শক্তিগুলোর আগ্রহ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গঠনে কূটনৈতিক মিশনের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আলাদা চাপ আসবে। এ কারণেই তারা সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে আগের চেয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছে। এ ধারাবাহিকতায় বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া লন্ডনে যাওয়ার আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও বুদ্ধিজীবীকে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে কিছু দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তারা ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিএনপির কমিটিতে যারা আছেন তারাও প্রভাবশালী বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে লবিং করে বিএনপির জন্য সুবিধা আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ কাজে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আগেই তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কূটনীতিকদের কাছে দলের অবস্থান কীভাবে তুলে ধরবেন সে বিষয়ে পরামর্শ নেন।

সূত্র জানায়, আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ জোরদারে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নেয় বিএনপি। এর অংশ হিসেবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের অনেক আগে থেকেই নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে থাকে। এ কৌশলে কিছুটা হলেও সফল হয়েছে দলটি। বিএনপির তৎপরতায়ই কূটনীতিকরা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে চায়। কিন্তু সরকারি দলের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করলেও কূটনীতিকরা ভেতরে ভেতরে এ নিয়ে সক্রিয় রয়েছে। এমনকি নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ রাখা থেকে শুরু করে সহায়ক সরকারের বিষয়ে সরকারকে চাপে রাখা হবে বলে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বিএনপিকে আশ্বস্ত করেছে।

জানা যায়, বিএনপির প্রতি আস্থা রেখেই আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির দিকে বিশেষ চোখ রাখছেন কূটনীতিকরা। বিশেষ করে পশ্চিমা কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগের প্রতিটি পদক্ষেপের দিকে নজর রাখছেন। তাদের রাজনৈতিক কৌশল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে আওয়াজ তুলবেন তারা। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতি, স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছেন কূটনীতিকরা। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের ক‚টনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ দিকে সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে দেখা করে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চায় যুক্তরাজ্য।

কূটনৈতিক তৎপরতার বিষয়ে দলের অবস্থান জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে সব সময়ই বিএনপি সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে, ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরো জোরদার করা হবে। তিনি বলেন, তারা রাজনীতির বাইরে নয়। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তাদের ‘কন্ট্রিবিউট’ অত্যন্ত জরুরি।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বহির্বিশ্বে ভুল তথ্য দিয়ে সরকার নিজেদের পক্ষে কিছুটা সমর্থন আদায় করলেও বর্তমান অবস্থান অনেকটা পাল্টে গেছে। বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্র মনে করে শক্তিশালী গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া উচিত। অতি শিগগিরই সরকারের প্রতি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে চাপ আসবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

সরকারকে চাপে ফেলতে যে কৌশলে এগুচ্ছে বিএনপি

আপডেট টাইম : ০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের চিন্তা করছে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। এ লক্ষ্যে গত দুবছর ধরে লবিং করছে দলটি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন গতিতে ক‚টনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে দলটি। এ লক্ষ্যে দলের যোগ্য ও অভিজ্ঞ কয়েকজন নেতা, সাবেক কূটনীতিক ও বুদ্ধিজীবীর সমন্বয়ে গঠন করেছে শক্তিশালী একটি আন্তর্জাতিক সেল। বিদেশি কূটনীতিকদের আস্থায় এনে তাদের সহায়তায় সরকারকে চাপে রাখার লক্ষ্যে বিদেশি মিশনগুলোতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে করেছেন এই সেলের সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। কিন্তু বিএনপির এ দাবিকে অসাংবিধানিক হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ পরিস্থিতিতে দেশের সমমনা দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার চিন্তা করছে বিএনপি। আর আন্দোলনে সাফল্য অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা নেয়ার কর্মকৌশল চূড়ান্ত করেছে দলটি।

২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিনের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়েন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এরপর ওই বছর ১৬ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে যান। লন্ডনে অবস্থানকালে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দলের ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এ সময় তারা দলের জন্য সুবিধা আদায় করতে আন্দোলনের পরিবর্তে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল তা থেকে উত্তরণের জন্য কূটনৈতিক সমর্থনই শেষ ভরসা। নির্বাচন কমিশন মোটামুটি নিরপেক্ষ থাকলে এবং কূটনৈতিক মহলের সমর্থন আদায় করতে পারলে সহায়ক সরকারের পক্ষে সরকারের প্রতি চাপ প্রয়োগ করা সহজ হবে। এমনকি একপর্যায়ে সরকার তা মানতেও বাধ্য হবে। যার ফলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের রায় বিএনপির পক্ষেই আসবে।

দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি সম্পর্কে কূটনৈতিক মহলে থাকা ‘ভুল’ ধারণা ভাঙতে বেশকিছু কর্মসূচি নিয়ে লন্ডনে গেছেন দলীয়প্রধান খালেদা জিয়া। এ কারণেই তার এবারের সফর বিএনপির রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেতারা জানান, প্র্রতিবেশী দেশ ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রভাবশালী বেশকিছু নেতার সঙ্গে লন্ডনে বৈঠক করবেন। এ ছাড়াও ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা, সরকার ও বিরোধী দলের শীর্ষ রাজনীতিবিদসহ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এক এমপির সঙ্গে বৈঠকসহ আরো কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক কর্মসূচির ‘সিডিউল’ অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়েছে। যেখানে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারকে চাপে রাখার বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। আর এ কারণেই খালেদা জিয়ার ‘ব্যক্তিগত’ সফরে দলের কূটনৈতিক বিষয়গুলো দেখভাল করেন এমন ৩ জন নেতা সেখানে গেছেন।

সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ড ধারণা করছে দলের প্রতি দেশি-বিদেশি শক্তিগুলোর আগ্রহ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গঠনে কূটনৈতিক মিশনের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আলাদা চাপ আসবে। এ কারণেই তারা সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে আগের চেয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছে। এ ধারাবাহিকতায় বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া লন্ডনে যাওয়ার আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও বুদ্ধিজীবীকে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে কিছু দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। তারা ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিএনপির কমিটিতে যারা আছেন তারাও প্রভাবশালী বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে লবিং করে বিএনপির জন্য সুবিধা আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ কাজে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আগেই তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কূটনীতিকদের কাছে দলের অবস্থান কীভাবে তুলে ধরবেন সে বিষয়ে পরামর্শ নেন।

সূত্র জানায়, আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ জোরদারে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নেয় বিএনপি। এর অংশ হিসেবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের অনেক আগে থেকেই নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে থাকে। এ কৌশলে কিছুটা হলেও সফল হয়েছে দলটি। বিএনপির তৎপরতায়ই কূটনীতিকরা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে চায়। কিন্তু সরকারি দলের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করলেও কূটনীতিকরা ভেতরে ভেতরে এ নিয়ে সক্রিয় রয়েছে। এমনকি নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ রাখা থেকে শুরু করে সহায়ক সরকারের বিষয়ে সরকারকে চাপে রাখা হবে বলে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বিএনপিকে আশ্বস্ত করেছে।

জানা যায়, বিএনপির প্রতি আস্থা রেখেই আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির দিকে বিশেষ চোখ রাখছেন কূটনীতিকরা। বিশেষ করে পশ্চিমা কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগের প্রতিটি পদক্ষেপের দিকে নজর রাখছেন। তাদের রাজনৈতিক কৌশল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে আওয়াজ তুলবেন তারা। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতি, স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছেন কূটনীতিকরা। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের ক‚টনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ দিকে সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে দেখা করে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চায় যুক্তরাজ্য।

কূটনৈতিক তৎপরতার বিষয়ে দলের অবস্থান জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে সব সময়ই বিএনপি সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে, ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরো জোরদার করা হবে। তিনি বলেন, তারা রাজনীতির বাইরে নয়। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তাদের ‘কন্ট্রিবিউট’ অত্যন্ত জরুরি।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বহির্বিশ্বে ভুল তথ্য দিয়ে সরকার নিজেদের পক্ষে কিছুটা সমর্থন আদায় করলেও বর্তমান অবস্থান অনেকটা পাল্টে গেছে। বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্র মনে করে শক্তিশালী গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া উচিত। অতি শিগগিরই সরকারের প্রতি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে চাপ আসবে।