ঢাকা , রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাকরিতে কোটা থাকবে কি না, সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এটা হাইকোর্টে কেন

চাকরিতে কোটা থাকবে কী থাকবে না, বা কতটুকু থাকবে তা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তা বাস্তবায়ন হবে প্রশাসনের মাধ্যমে। এটা হাইকোর্টে যায় কেন? এটা কি হাইকোর্টের এখতিয়ারে পড়ে?

কোটা প্রসঙ্গ বল‌তে গি‌য়ে এমন প্রশ্নই তু‌লে‌ছেন বি‌রোধী দ‌লের নেতা ও জাতীয় পা‌র্টির গোলাম মোহাম্মদ কা‌দের। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার (১৪ জুলাই) বিকে‌লে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এমন প্রশ্ন করেন।

জিএম কা‌দের ব‌লেন, এটা (কোটা) হাইকোর্টে যায় কেন? এটা কি হাইকোর্টের এখতিয়ারে পড়ে? গেলো ২১ সালে, আবার ২৪ সালে রায় হলো কেন? সেই রায়ে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল হলো। সরকার যেটা বাতিল করলো, এখন কথাবার্তায় মনে হচ্ছে ওই রায়ে সরকার খুব খুশি। এ কারণেই জনগণের ধারণা, সরকার তখন কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে চায়নি।

তি‌নি দা‌বি ক‌রেন, সরকার জনগণের চাপে কোটা পদ্ধ‌তি বাতিল করেছিল। তাদের লোক দিয়েই মামলা করেছিল যাতে পুনরায় কোটা পদ্ধতি চালু করা যায়। যারা মামলা করেছিল সরকার তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছিল। এটা সাধারণ মানুষের সন্দেহ। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে সরকার কোটা পদ্ধতির বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে পারে। এ কারণেই সাধারণ পরিবারের ছেলেরা আন্দোলন থেকে পিছু হটছে না।

জিএম কা‌দের ব‌লেন, বিচারাধীন কোনও বিষয়ে কথা বলা যায় না। সংবিধানের কয়েকটি ধারার কারণে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের প্রধানের অধীনস্থ হয়ে গেছে। সংবিধানে কিছু অসামঞ্জস্য ও অসম্পূর্ণতা আছে। সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সব সময় নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করে রাখা। আবার ১০৯-এ বলা আছে, অধস্তন বিচার বিভাগকে দেখাশুনা করবে ঊর্ধ্বতন হাইকোর্ট। ১১৬-তে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি তাদের প্রমোশন ও ট্রান্সফার করবে। একই কাজ দুজনকে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রেসিডেন্টকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, হাইকোর্টে কথা শোনা হয় না। ৪৮-এ বলা আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর মতামত ছাড়া দুটি কাজ করতে পারবেন। বর্তমান অবস্থায় রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর মতামত ছাড়া কিছু করতে পারে? আবার রাষ্ট্রপতি যা করে, তা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে করতে হয়। এটা হচ্ছে সংবিধানের দোষ। ৯৫-এর ২ এর ক, খ এবং গ বলা আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগ দিয়ে পারবেন। তাকে ১০ বছর এপিলেড বিভাগে কাজ করতে হবে অথবা ১০ বছর বিচারিক কাজের সাথে যুক্ত থাকলেই হবে। একটা আইন করার কথা ছিল, সরকার তা করেনি। এটাই হচ্ছে অসম্পূর্ণতা। তাই, প্রেসিডেন্ট যা করবে তা প্রধানমন্ত্রী করবে। তাই প্রধানমন্ত্রী হাইকোর্টের সব নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ফলে হাইকোর্ট প্রধানমন্ত্রীর আওতার বাইরে যেতে পারছে না।

‘বর্তমান সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিছুদিন আগে বলেছিলেন, আগের একজন প্রধান বিচারপতিকে হেনস্তা করে বের করে দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে কোর্টে একটি কথাও উঠেছিল, কিছুই হয়নি। আমরা শতভাগ আস্থা রাখতে চাই বিচার বিভাগের ওপর’- যোগ ক‌রেন জিএম কা‌দের।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, চাকরিতে স্বল্প সংখ্যক কোটা থাকতে পারে অনগ্রসর ও প্রতিবন্ধীদের জন্য। অনগ্রসর বা আমাদের সঙ্গে যারা সমানতালে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না, তাদের জন্য স্বল্প সংখ্যক কোটা থাকতে পারে। সেটা প্রথম ও দ্বিতীয় নয়, সব শ্রেণির জন্য কার্যকর করা উচিত। বিচার বিভাগের প্রতি আমাদের আস্থা আছে, আমরা আস্থা রাখবো। আজকে যারা ক্ষমতায় আছেন, চিরদিন তারা থাকবে না। রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা আগামী প্রজন্মের জন্য সমতার ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় পা‌র্টি‌কে বিকল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে হবে মন্তব‌্য ক‌রে দল‌টির চেয়ারম‌্যান ব‌লেন, বাংলাদেশের মানুষ বর্তমান সরকারকে চাচ্ছে না। বাংলাদেশের নির্যাতিত হচ্ছে, বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। দেশের মানুষ মুক্তি চায়, আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। কঠিন কিছু অর্জন করতে হলে ঝুঁকি নিতে হয় এবং ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আমরা যদি প্রমাণ করতে পারি, আমরা আওয়ামী লীগের পোষ্য নয়, তবেই জনগণ আমাদের সঙ্গে থাকবে।

‘আজকের এই দিনে আমাদের প্রিয় নেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ইন্তেকাল করেছেন। আজ তার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী। আমার তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাকে ক্ষমা করে বেহেস্তের সর্বোচ্চ স্থান দান করেন। পল্লীবন্ধুর সারাজীবনই নিয়োজিত ছিলেন জনগণের কল্যাণে। ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত দুরন্ত ও মেধাবী ছিলেন। ছাত্রজীবনে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়ন হতেন, একইসাথে সাহিত্য চর্চাও তিনি আগ্রহী ছিলেন। ছাত্রজীবনে সাহিত্য ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতেন তিনি। তিনি যেখানেই ছিলেন সবাই তাকে এক নামে চিনতেন। সেনাবাহিনীতেও একদিকে কৃতি খেলোয়াড় ছিলেন। একইসাথে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে- উল্লেখ ক‌রেন তি‌নি।

‌জিএম কা‌দের ব‌লেন, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা হস্তান্তর করলে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তখন শুধু বিএনপির কিছু সংখ্যক নেতা ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ও আপামর জনগণ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। জনগণ আনন্দ উল্লাস করেছিল। তখন আওয়ামী লীগের মুখপাত্র দৈনিক বাংলার বাণী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে স্বাগত জানিয়ে শিরোনাম করেছিল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এটা ছাড়া আর কোনও গত্যন্তর ছিল না। তখনকার আইন অনুযায়ী, এটা হয়তো বৈধ ছিল না। একটা দেশের মালিক যদি জনগণ হয় সে দেশের মালিকের প্রত্যাশা পূরণ যদি কোনও আইনে অবৈধ হয়, তাহলে সেই আইনটি ভুল। সেই আইনটি সঠিক আইন নয়। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে যে আইনে সেটি হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের আইন। চার বছর দেশ পরিচালনার পরে নির্বাচন দিয়েছিলেন। এই সময় তিনি দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়েছিলেন। তার সময় আইনের প্রতি হস্তক্ষেপ করা হতো না। আইনের চোখে সবাই সমান ছিল। ১৯৮৬ সালে তিনি নির্বাচিত হলেন, তখন বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেশ পরিচালনার সময়কে দেশের মানুষ স্বর্ণযুগ মনে করে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ছিল, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। জনগণের কল্যাণে যা যা দরকার ছিল, তিনি তা করেছিলেন। জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তিনি সব কাজ করতেন। তিনি ছিলেন গণতন্ত্রমনা, জনগণের প্রয়োজনে সকল দাবি পূরণে তিনি কখনো কার্পণ্য করেনি। উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে কোথাও যেন দুর্নীতি না হয়, সে ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

‘আমরা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করবো। তার মধ্যে প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন, আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন, আইনসিদ্ধভাবে হাইকোর্টকে বিকেন্দ্রীকরণ, স্বাস্থ্যনীতি ও শিক্ষানীতি করতে চেয়েছিলেন- এগুলো আমরা করবো। আগামী নির্বাচনের ইশতেহারে এগুলো আমরা সংযোজিত করবো। আমরা কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করবো’ ব‌লেও কথা দেন সা‌বেক রাষ্ট্রপ‌তির এই স‌হোদর।

এ সময় বক্তব্য রাখেন- দ‌লের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পার্টির মহাসচিব অ্যাড. মুজিবুল হক চুন্নু, কো চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সাল চিশতী, শেরীফা কাদের, অ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আক্তার, রানা মোহাম্মদ সোহেল মেজর (অ.), মো. জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, আলমগীর সিকদার লোটন, মো. আতিকুর রহমান আতিক, জহিরুল আলম রুবেল, উপদেষ্টা খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, শামসুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইফতেকার আহসান হাসান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মহসীন সরদার, যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, মহিলা পাটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমা আক্তার, কৃষক পাটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী জামাল, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক আলমগীর সিকদার লোটন, সাংস্কৃতিক পাটির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদ, প্রাক্তন সৈনিক পাটির আহ্বায়ক মেজর অ. আনিসুর রহমান, শ্রমিক পাটির সভাপতি একেএম আশরাফুজ্জামান খান, তরুণ পার্টি আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন মৃধা, মৎস্যজীবী আহ্বায়ক আজাহারুল ইসলাম সরকার, মটর শ্রমিক পাটির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শিপন, ছাত্রসমাজের সভাপতি আল মামুন। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় ওলামা পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা ড. ইরফান বিন তোরাব আলী।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

চাকরিতে কোটা থাকবে কি না, সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এটা হাইকোর্টে কেন

আপডেট টাইম : ০৫:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

চাকরিতে কোটা থাকবে কী থাকবে না, বা কতটুকু থাকবে তা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তা বাস্তবায়ন হবে প্রশাসনের মাধ্যমে। এটা হাইকোর্টে যায় কেন? এটা কি হাইকোর্টের এখতিয়ারে পড়ে?

কোটা প্রসঙ্গ বল‌তে গি‌য়ে এমন প্রশ্নই তু‌লে‌ছেন বি‌রোধী দ‌লের নেতা ও জাতীয় পা‌র্টির গোলাম মোহাম্মদ কা‌দের। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার (১৪ জুলাই) বিকে‌লে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এমন প্রশ্ন করেন।

জিএম কা‌দের ব‌লেন, এটা (কোটা) হাইকোর্টে যায় কেন? এটা কি হাইকোর্টের এখতিয়ারে পড়ে? গেলো ২১ সালে, আবার ২৪ সালে রায় হলো কেন? সেই রায়ে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল হলো। সরকার যেটা বাতিল করলো, এখন কথাবার্তায় মনে হচ্ছে ওই রায়ে সরকার খুব খুশি। এ কারণেই জনগণের ধারণা, সরকার তখন কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে চায়নি।

তি‌নি দা‌বি ক‌রেন, সরকার জনগণের চাপে কোটা পদ্ধ‌তি বাতিল করেছিল। তাদের লোক দিয়েই মামলা করেছিল যাতে পুনরায় কোটা পদ্ধতি চালু করা যায়। যারা মামলা করেছিল সরকার তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছিল। এটা সাধারণ মানুষের সন্দেহ। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে সরকার কোটা পদ্ধতির বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে পারে। এ কারণেই সাধারণ পরিবারের ছেলেরা আন্দোলন থেকে পিছু হটছে না।

জিএম কা‌দের ব‌লেন, বিচারাধীন কোনও বিষয়ে কথা বলা যায় না। সংবিধানের কয়েকটি ধারার কারণে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের প্রধানের অধীনস্থ হয়ে গেছে। সংবিধানে কিছু অসামঞ্জস্য ও অসম্পূর্ণতা আছে। সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সব সময় নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করে রাখা। আবার ১০৯-এ বলা আছে, অধস্তন বিচার বিভাগকে দেখাশুনা করবে ঊর্ধ্বতন হাইকোর্ট। ১১৬-তে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি তাদের প্রমোশন ও ট্রান্সফার করবে। একই কাজ দুজনকে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রেসিডেন্টকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, হাইকোর্টে কথা শোনা হয় না। ৪৮-এ বলা আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর মতামত ছাড়া দুটি কাজ করতে পারবেন। বর্তমান অবস্থায় রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর মতামত ছাড়া কিছু করতে পারে? আবার রাষ্ট্রপতি যা করে, তা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে করতে হয়। এটা হচ্ছে সংবিধানের দোষ। ৯৫-এর ২ এর ক, খ এবং গ বলা আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগ দিয়ে পারবেন। তাকে ১০ বছর এপিলেড বিভাগে কাজ করতে হবে অথবা ১০ বছর বিচারিক কাজের সাথে যুক্ত থাকলেই হবে। একটা আইন করার কথা ছিল, সরকার তা করেনি। এটাই হচ্ছে অসম্পূর্ণতা। তাই, প্রেসিডেন্ট যা করবে তা প্রধানমন্ত্রী করবে। তাই প্রধানমন্ত্রী হাইকোর্টের সব নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ফলে হাইকোর্ট প্রধানমন্ত্রীর আওতার বাইরে যেতে পারছে না।

‘বর্তমান সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিছুদিন আগে বলেছিলেন, আগের একজন প্রধান বিচারপতিকে হেনস্তা করে বের করে দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে কোর্টে একটি কথাও উঠেছিল, কিছুই হয়নি। আমরা শতভাগ আস্থা রাখতে চাই বিচার বিভাগের ওপর’- যোগ ক‌রেন জিএম কা‌দের।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, চাকরিতে স্বল্প সংখ্যক কোটা থাকতে পারে অনগ্রসর ও প্রতিবন্ধীদের জন্য। অনগ্রসর বা আমাদের সঙ্গে যারা সমানতালে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না, তাদের জন্য স্বল্প সংখ্যক কোটা থাকতে পারে। সেটা প্রথম ও দ্বিতীয় নয়, সব শ্রেণির জন্য কার্যকর করা উচিত। বিচার বিভাগের প্রতি আমাদের আস্থা আছে, আমরা আস্থা রাখবো। আজকে যারা ক্ষমতায় আছেন, চিরদিন তারা থাকবে না। রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা আগামী প্রজন্মের জন্য সমতার ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় পা‌র্টি‌কে বিকল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে হবে মন্তব‌্য ক‌রে দল‌টির চেয়ারম‌্যান ব‌লেন, বাংলাদেশের মানুষ বর্তমান সরকারকে চাচ্ছে না। বাংলাদেশের নির্যাতিত হচ্ছে, বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। দেশের মানুষ মুক্তি চায়, আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। কঠিন কিছু অর্জন করতে হলে ঝুঁকি নিতে হয় এবং ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আমরা যদি প্রমাণ করতে পারি, আমরা আওয়ামী লীগের পোষ্য নয়, তবেই জনগণ আমাদের সঙ্গে থাকবে।

‘আজকের এই দিনে আমাদের প্রিয় নেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ইন্তেকাল করেছেন। আজ তার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী। আমার তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাকে ক্ষমা করে বেহেস্তের সর্বোচ্চ স্থান দান করেন। পল্লীবন্ধুর সারাজীবনই নিয়োজিত ছিলেন জনগণের কল্যাণে। ছোটবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত দুরন্ত ও মেধাবী ছিলেন। ছাত্রজীবনে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়ন হতেন, একইসাথে সাহিত্য চর্চাও তিনি আগ্রহী ছিলেন। ছাত্রজীবনে সাহিত্য ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতেন তিনি। তিনি যেখানেই ছিলেন সবাই তাকে এক নামে চিনতেন। সেনাবাহিনীতেও একদিকে কৃতি খেলোয়াড় ছিলেন। একইসাথে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে- উল্লেখ ক‌রেন তি‌নি।

‌জিএম কা‌দের ব‌লেন, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ক্ষমতা হস্তান্তর করলে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তখন শুধু বিএনপির কিছু সংখ্যক নেতা ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ও আপামর জনগণ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। জনগণ আনন্দ উল্লাস করেছিল। তখন আওয়ামী লীগের মুখপাত্র দৈনিক বাংলার বাণী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে স্বাগত জানিয়ে শিরোনাম করেছিল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এটা ছাড়া আর কোনও গত্যন্তর ছিল না। তখনকার আইন অনুযায়ী, এটা হয়তো বৈধ ছিল না। একটা দেশের মালিক যদি জনগণ হয় সে দেশের মালিকের প্রত্যাশা পূরণ যদি কোনও আইনে অবৈধ হয়, তাহলে সেই আইনটি ভুল। সেই আইনটি সঠিক আইন নয়। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে যে আইনে সেটি হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের আইন। চার বছর দেশ পরিচালনার পরে নির্বাচন দিয়েছিলেন। এই সময় তিনি দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়েছিলেন। তার সময় আইনের প্রতি হস্তক্ষেপ করা হতো না। আইনের চোখে সবাই সমান ছিল। ১৯৮৬ সালে তিনি নির্বাচিত হলেন, তখন বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেশ পরিচালনার সময়কে দেশের মানুষ স্বর্ণযুগ মনে করে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ছিল, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। জনগণের কল্যাণে যা যা দরকার ছিল, তিনি তা করেছিলেন। জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তিনি সব কাজ করতেন। তিনি ছিলেন গণতন্ত্রমনা, জনগণের প্রয়োজনে সকল দাবি পূরণে তিনি কখনো কার্পণ্য করেনি। উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে কোথাও যেন দুর্নীতি না হয়, সে ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

‘আমরা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করবো। তার মধ্যে প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন, আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন, আইনসিদ্ধভাবে হাইকোর্টকে বিকেন্দ্রীকরণ, স্বাস্থ্যনীতি ও শিক্ষানীতি করতে চেয়েছিলেন- এগুলো আমরা করবো। আগামী নির্বাচনের ইশতেহারে এগুলো আমরা সংযোজিত করবো। আমরা কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করবো’ ব‌লেও কথা দেন সা‌বেক রাষ্ট্রপ‌তির এই স‌হোদর।

এ সময় বক্তব্য রাখেন- দ‌লের সিনিয়র কো চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পার্টির মহাসচিব অ্যাড. মুজিবুল হক চুন্নু, কো চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সাল চিশতী, শেরীফা কাদের, অ্যাড. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আক্তার, রানা মোহাম্মদ সোহেল মেজর (অ.), মো. জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, আলমগীর সিকদার লোটন, মো. আতিকুর রহমান আতিক, জহিরুল আলম রুবেল, উপদেষ্টা খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, শামসুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইফতেকার আহসান হাসান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মহসীন সরদার, যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, মহিলা পাটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমা আক্তার, কৃষক পাটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী জামাল, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক আলমগীর সিকদার লোটন, সাংস্কৃতিক পাটির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদ, প্রাক্তন সৈনিক পাটির আহ্বায়ক মেজর অ. আনিসুর রহমান, শ্রমিক পাটির সভাপতি একেএম আশরাফুজ্জামান খান, তরুণ পার্টি আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন মৃধা, মৎস্যজীবী আহ্বায়ক আজাহারুল ইসলাম সরকার, মটর শ্রমিক পাটির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শিপন, ছাত্রসমাজের সভাপতি আল মামুন। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় ওলামা পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা ড. ইরফান বিন তোরাব আলী।