বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলাসহ বেশকিছু অভিযোগে সার্কিট হাউস ছেড়ে আবাসিক হোটেলে উঠলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার ভোরে তিনি সার্কিট হাউসে উঠেন এবং বুধবার রাতে সার্কিট হাউস থেকেই তার লঞ্চে ঢাকা আসার কথা ছিল।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত কর্মসূচি বাদ দিয়ে ৫-৬ ঘণ্টা আগেই তিনি বরিশাল ছাড়েন সড়ক পথে।
অভিযোগ হচ্ছে- মহাসচিবের থাকার জন্য সার্কিট হাউসের পুরাতন ভবনের যে দুটি কক্ষ দেয়া হয়েছে, তা ছিল অত্যন্ত জরাজীর্ণ। দুটি এসি-ই বিকল। গ্রিজারও নষ্ট। টেলিভিশন থাকলেও ছবি আসছিল না। কিচেন ব্যবহারেও ছিল বিধিনিষেধ। দায়িত্বরত কর্মচারীদের কয়েক দফা বলা হলেও কেউ-ই আন্তরিক ছিলেন না। স্টাফদের এ অবহেলায় বিএনপি মহাসচিব অপমানিত বোধ করে হোটেলে উঠেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে বরিশালের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) নাহিদুল করিম বলেন, সার্কিট হাউসে থাকার সময় অবহেলা বা কোনোরকম সমস্যার কথা জানানো হয়নি। আর গ্রিজারের সমস্যা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে দেয়া হয়েছে। আমাদের দিক থেকে কোনো ত্রুটি ছিল না।
এ নিয়ে কথা হয় বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সার্কিট হাউসের কক্ষ বরাদ্দ চেয়ে গত ১৭ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়। মহাসচিবের জন্য নতুন ভবনের একটি ভিআইপি কক্ষ চাওয়া হয়েছিল। আমরা কোনো জবাব পাচ্ছিলাম না। এক দিন আগে ২৪ জুলাই পুরাতন ভবনের একটি কথিত ভিআইপি কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়। সেটিতে কোনো কিছুই ঠিক নেই। সর্বশেষ জটিলতা বাধে খাওয়া নিয়ে। সার্কিট হাউসের কিচেনে রান্না করা নিয়ে আসে আপত্তি।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমাদের এনডিসি থেকে বলে দেয়া হয়েছে- এত লোকের খাওয়ার জন্য কিচেন ব্যবহার করা যাবে না। পরে বুধবার ভোরে তাকে নিয়ে উঠানো হয় নগরীর একটি আবাসিক হোটেলে। বিএনপির সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি উদ্বোধনের পর দুপুরেই তিনি সড়ক পথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। বিকালে স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে রাতে লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল তার।’ খাবারের সময় বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে প্রতিবেলায় ৪০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত থাকতেন বলে জানা গেছে।
খাবার নিয়ে জটিলতা হওয়ায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে রান্না করে খাবার সরবরাহ করা হতো সার্কিট হাউসে। সার্কিট হাউসের কর্মচারী মনির হোসেন জানান, ‘ডিশ লাইনে বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে টেলিভিশনে ছবি আসেনি। তবে গ্রিজারের সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবেই সমাধান করে দেয়া হয়েছে।’
খাবারের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে শত শত মানুষের খাওয়ার ব্যবস্থা করা এখানে সম্ভব না। তাই কিছুটা ঝামেলা হয়েছে। তবে তার খাবার সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে- এমন অভিযোগ সত্য নয়।’
বরিশালের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিতরণ ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, ‘যদি কেউ বলে থাকে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল না তাই টিভি চলেনি- এটা ঠিক নয়। বুধবার সারা রাত সার্কিট হাউস কিংবা মেডিকেল এক্সপ্রেস ফিডারে কোনোরকম লোডশেডিং দেয়া হয়নি। এ দুটি ফিডার দিয়েই মূলত সার্কিট হাউসে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে একবার সার্কিট হাউস ফিডার ট্রিপ করে গেলে একটি ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই আবার চালু হয়।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশালের এনডিসি নাহিদুল করিম বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রীর (মির্জা ফখরুল) অবস্থানকালে প্রতিবেলায় বিপুলসংখ্যক মানুষ সার্কিট হাউসে খেয়েছেন। এমনকি বুধবার ভোরেও ৪০ জনের বেশি মানুষের নাস্তার ব্যবস্থা করা হয় সেখানে।
গ্রিজারের সমস্যা জানার সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া উনি চলে যাওয়ার পর এসব কথা উঠছে কেন? উনার কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের জানাতে পারতেন। উনি বা উনার পক্ষ থেকে কেউ তো আমাদের কিছু জানায়নি। যেসব কথা বলা হচ্ছে সেগুলো সঠিক নয়।