ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদের মালিক হাবিব উন নবী খান সোহেল কোথায়

বয়সে তরুণ হলেও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদের মালিক হাবিব উন নবী খান সোহেল। বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর তাকে করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। আগে থেকেই আছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি পদে। সোহেলের ঘনিষ্ঠজনরা মনে করছেন, বিএনপির হাইকমান্ডের ‘গুডবুকে’ থাকায় তাকে এসব পদ দেয়া হয়েছে।

তবে এক বছরের বেশি সময় ধরে  দেখা নেই ছাত্রদলের একসময়ের এই দাপুটে নেতার। যোগাযোগ নেই বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে। পরিবারের কারও সঙ্গেও দেখা-সাক্ষাৎ নেই সোহেলের।

দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়া এই তরুণ নেতার দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতূলের সৃষ্টি করেছে। সোহেল কোথায়?

এ ব্যাপারে সোহেলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশ কজন  সঙ্গে কথা বললে তারাও নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি।  তাদের দুজনের ভাষ্য এমন, “আমাদের চেয়ে তো আপনারা (সাংবাদিক) তার খবর ভালো জানেন। আমরা তো তার সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন কম করে হলেও এক বছর।”

স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তরে দায়িত্ব পালন করেন এমন একজন নেতা এই প্রতিবেদকের কাছে সোহেলের বর্তমান অবস্থানের বিষয়ে ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘‘ তিনি দেশেই আছেন। রংপুরে জাপানি নাগরিক হত্যার ঘটনায় তার পরিবারকে জড়ানোর পর তিনি আর প্রকাশ্যে নেই।’’

সোহেলের সমর্থকদের দাবি, দেশের যেখানেই কোনো ধরনের নাশকতা হোক না কেন, সেখানেই সোহেলের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এখন পর‌্যন্ত তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন আদালত। গ্রেপ্তার এড়াতে হয়তো তিনি প্রকাশ্যে আসছেন না।

সর্বশেষ গত বছরের ৩০ মে ঢাকায় দেখা গেছে সোহেলকে। সেদিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার শেরেবাংলা নগরের সমাধিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শ্রদ্ধা জানান তিনি। দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের সময়ও তাকে চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা গেছে। এরপর থেকে তার আর দেখা নেই। নেতাকর্মীদের কাছ থেকে পুরোপুরি যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার  অভিযোগে ভেঙে দেয়া হয় ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি। সাদেক হোসেন খোকাকে সরিয়ে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক এবং আবদুস সালামকে সরিয়ে হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সদস্যসচিব করে কমিটি দেন খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে ছয় সিনিয়র নেতাকে দিয়ে করা হয় একটি উপদেষ্টাও।

মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের পর মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিশ্বাস ছিল রাজধানীতে আন্দোলন চাঙা হবে। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী শুরু হওয়া টানা অবরোধ শুরুর পরপরই আত্মগোপনে চলে যান মির্জা আব্বাস। গত এপ্রিলে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে আসেন তিনি। আদালত থেকে জামিন নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হলেও গ্রেপ্তারের ভয়ে নামেননি গণসংযোগে। নির্বাচনের পরও জনসম্মুখে আসেননি তিনি। পরে অবশ্য আদালতে জামিন চেয়ে না পেয়ে কারাগারে যেতে হয় মির্জা আব্বাসকে।

আর শতাধিক মামলা মাথায় নিয়ে সদস্যসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল ওই সময় থেকেই অনেকটা আত্মগোপনে ছিলেন। তবে  ফাঁকে ফাঁকে তার দেখা মিলত। কিন্তু গত বছর ৩ অক্টোবর রংপুরে জাপানি নাগরিক হোসি কোনিও হত্যার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ ওঠায় একেবারে আত্মগোপনে চলে যান সোহেল!

তবে এই সময়ের মধ্যে একাধিক মামলা আছে বিএনপির এমন অনেক নেতা প্রকাশ্যে এসে আদালতে হাজিরা দিয়ে কারাগারে গেলেও ব্যতিক্রম শুধু সোহেল। কারণ তিনি আদালতে জামিনও চাননি, কারাগারেও যেতে হয়নি তাকে।

তবে এতে সোহেলের প্রতি আস্থা কমেনি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদ জিয়ার। গত ১জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া দলের জন্য অবদান রেখেছেন বলে  যেসব নেতার নাম উল্লেখ করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হাবিব উন নবী খান সোহেল।

খালেদা বলেন, “সোহেলও খুব ভালো। ছাত্রদলের সভাপতি ছিল। আমি তার কাজ দেখেছি। তাকে মূল্যায়ন করে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি করা হয়েছে। এখন তাকে মূল দলে আনা হবে। সিটি বিএনপিতে তাকে মূল্যায়ন করা হবে।”

শুধু তাই নয়, গত মার্চে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের পর নতুন কমিটিতে স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদকের পদ থেকে সরাসরি যুগ্ম মহাসচিব পদে আনা হয় সোহেলকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা (যিনি সোহেলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত) ঢাকাটাইমসকে বলেন, “যে যাই বলুক, তিনি (সোহেল) দেশেই আছেন। জাপানি নাগরিক হত্যার ঘটনায় পুলিশ জেএমবি জড়িত বলে বক্তব্য দেয়ার পরও তার ছোটভাই কারাগারে আছে। পত্রপত্রিকায় তার নামও আসছে। এ অবস্থায় প্রকাশ্য আসা কি নিরাপদ?”

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা জানান, তার (সোহেল) দুই মেয়ে ও স্ত্রী শান্তিনগরের বাসায় আছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ না হওয়ায় তারও উদ্বিগ্ন। তবে তিনি নিরাপদে আছেন।”

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদের মালিক হাবিব উন নবী খান সোহেল কোথায়

আপডেট টাইম : ০২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জুন ২০১৬

বয়সে তরুণ হলেও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদের মালিক হাবিব উন নবী খান সোহেল। বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর তাকে করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। আগে থেকেই আছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি পদে। সোহেলের ঘনিষ্ঠজনরা মনে করছেন, বিএনপির হাইকমান্ডের ‘গুডবুকে’ থাকায় তাকে এসব পদ দেয়া হয়েছে।

তবে এক বছরের বেশি সময় ধরে  দেখা নেই ছাত্রদলের একসময়ের এই দাপুটে নেতার। যোগাযোগ নেই বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে। পরিবারের কারও সঙ্গেও দেখা-সাক্ষাৎ নেই সোহেলের।

দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়া এই তরুণ নেতার দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতূলের সৃষ্টি করেছে। সোহেল কোথায়?

এ ব্যাপারে সোহেলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশ কজন  সঙ্গে কথা বললে তারাও নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি।  তাদের দুজনের ভাষ্য এমন, “আমাদের চেয়ে তো আপনারা (সাংবাদিক) তার খবর ভালো জানেন। আমরা তো তার সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন কম করে হলেও এক বছর।”

স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তরে দায়িত্ব পালন করেন এমন একজন নেতা এই প্রতিবেদকের কাছে সোহেলের বর্তমান অবস্থানের বিষয়ে ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘‘ তিনি দেশেই আছেন। রংপুরে জাপানি নাগরিক হত্যার ঘটনায় তার পরিবারকে জড়ানোর পর তিনি আর প্রকাশ্যে নেই।’’

সোহেলের সমর্থকদের দাবি, দেশের যেখানেই কোনো ধরনের নাশকতা হোক না কেন, সেখানেই সোহেলের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এখন পর‌্যন্ত তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন আদালত। গ্রেপ্তার এড়াতে হয়তো তিনি প্রকাশ্যে আসছেন না।

সর্বশেষ গত বছরের ৩০ মে ঢাকায় দেখা গেছে সোহেলকে। সেদিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার শেরেবাংলা নগরের সমাধিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শ্রদ্ধা জানান তিনি। দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের সময়ও তাকে চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা গেছে। এরপর থেকে তার আর দেখা নেই। নেতাকর্মীদের কাছ থেকে পুরোপুরি যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার  অভিযোগে ভেঙে দেয়া হয় ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি। সাদেক হোসেন খোকাকে সরিয়ে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক এবং আবদুস সালামকে সরিয়ে হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সদস্যসচিব করে কমিটি দেন খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে ছয় সিনিয়র নেতাকে দিয়ে করা হয় একটি উপদেষ্টাও।

মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের পর মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিশ্বাস ছিল রাজধানীতে আন্দোলন চাঙা হবে। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী শুরু হওয়া টানা অবরোধ শুরুর পরপরই আত্মগোপনে চলে যান মির্জা আব্বাস। গত এপ্রিলে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে আসেন তিনি। আদালত থেকে জামিন নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হলেও গ্রেপ্তারের ভয়ে নামেননি গণসংযোগে। নির্বাচনের পরও জনসম্মুখে আসেননি তিনি। পরে অবশ্য আদালতে জামিন চেয়ে না পেয়ে কারাগারে যেতে হয় মির্জা আব্বাসকে।

আর শতাধিক মামলা মাথায় নিয়ে সদস্যসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল ওই সময় থেকেই অনেকটা আত্মগোপনে ছিলেন। তবে  ফাঁকে ফাঁকে তার দেখা মিলত। কিন্তু গত বছর ৩ অক্টোবর রংপুরে জাপানি নাগরিক হোসি কোনিও হত্যার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ ওঠায় একেবারে আত্মগোপনে চলে যান সোহেল!

তবে এই সময়ের মধ্যে একাধিক মামলা আছে বিএনপির এমন অনেক নেতা প্রকাশ্যে এসে আদালতে হাজিরা দিয়ে কারাগারে গেলেও ব্যতিক্রম শুধু সোহেল। কারণ তিনি আদালতে জামিনও চাননি, কারাগারেও যেতে হয়নি তাকে।

তবে এতে সোহেলের প্রতি আস্থা কমেনি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদ জিয়ার। গত ১জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া দলের জন্য অবদান রেখেছেন বলে  যেসব নেতার নাম উল্লেখ করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হাবিব উন নবী খান সোহেল।

খালেদা বলেন, “সোহেলও খুব ভালো। ছাত্রদলের সভাপতি ছিল। আমি তার কাজ দেখেছি। তাকে মূল্যায়ন করে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি করা হয়েছে। এখন তাকে মূল দলে আনা হবে। সিটি বিএনপিতে তাকে মূল্যায়ন করা হবে।”

শুধু তাই নয়, গত মার্চে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের পর নতুন কমিটিতে স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদকের পদ থেকে সরাসরি যুগ্ম মহাসচিব পদে আনা হয় সোহেলকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা (যিনি সোহেলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত) ঢাকাটাইমসকে বলেন, “যে যাই বলুক, তিনি (সোহেল) দেশেই আছেন। জাপানি নাগরিক হত্যার ঘটনায় পুলিশ জেএমবি জড়িত বলে বক্তব্য দেয়ার পরও তার ছোটভাই কারাগারে আছে। পত্রপত্রিকায় তার নামও আসছে। এ অবস্থায় প্রকাশ্য আসা কি নিরাপদ?”

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা জানান, তার (সোহেল) দুই মেয়ে ও স্ত্রী শান্তিনগরের বাসায় আছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ না হওয়ায় তারও উদ্বিগ্ন। তবে তিনি নিরাপদে আছেন।”