বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে হাওড়পারে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বর্তমান ও সাবেক সাংসদ এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণ এখন নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিদিনই মতবিনিময়, গণসংযোগ, মিটিং, প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তারা। আর তাতে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে যেন প্রাণের সঞ্চার হচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে দ্বীপসদৃশ জনপদগুলোর ভোটারদের মাঝে।
বিএনপি ও আ.লীগের একাধিক মনোনয়ন-প্রত্যাশী থাকায় দুই দলেই আছে অন্তঃকোন্দল। অনেকে নিজের পক্ষে দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে ইতিবাচক সংকেত পেয়েছেন বলে দাবি করছেন নেতাকর্মী ও ভোটারদের কাছে। কার ভাগ্যে ছিঁড়বে দলীয় মনোনয়নের শিকে, এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-গুঞ্জন আছে নির্বাচনী এলাকায়।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নিজ নিজ সমর্থক নেতাকর্মীদের নিয়ে সশরীরে হাজির হচ্ছেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) বিভিন্ন ইউনিয়নের হাওরপাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে। আবার নিজের ও নেতাকর্মীদের ফেসবুক আইডির মাধ্যমেও চলছে প্রচারণা।
দুই দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসনে আগাম প্রচারণা শুরু গত রোজার আগে থেকে। ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ও ঈদ পুনর্মিলনী পরবর্তী সময়টুকু তারা হাতছাড়া করেননি। সবার আগমনে যেন হাওরপাড় প্রাণ ফিরে পায়।
আগাম প্রচারণায় পুরনো প্রার্থীদের পাশাপাশি নতুন মুখও দেখা যাচ্ছে দুই দলে। উদীয়মান এসব তরুণ নেতাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন উপজেলার নেতাকর্মীদের অনেকে। আবার দলের দুর্দিনে অর্থ, শ্রম ও সময় দিয়ে দলকে শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন, এমন পরীক্ষিত নেতার প্রতি সমর্থন চাইছেন অনেকে।
ভোটাররাও চান, যাদের সব সময় কাছে পাবেন, শুধু নিজের আখের গোছানোর জন্য কাজ না করে এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন এ তাদের মধ্য থেকে যেন দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলেই একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- সুনামগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সাবেক এমপি সৈয়দ রফিকুল হক সুহেল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কৃষক লীগের মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামীমা শাহরিয়ার, সিলেট আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রিয়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা বিনয় ভূষণ তালুকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম সামীম, সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান আহমেদ সেলিম ও রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ।
অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক এমপি নজির হোসেন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক, তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাংগঠানিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল, ডাক্তার রফিক চৌধুরী, যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন ও মোতালেব খান প্রমুখ।
বিএনপির সাবেক এমপি নজির হোসেন বলেন, ‘আমার কথা ও কাজের মূল্যায়ন আগেও আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জনগণ করেছেন। এবারও নেত্রীর নির্দেশে দলের স্বার্থে এলাকায় গণসংযোগ করছি।’ এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক বলেন, সুনামগঞ্জ-১ আসনের দুর্দিনে কেউ ছিল না; সবাই নিজেকে রক্ষায় ব্যস্ত ছিল। আমি তখন দলকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছিলাম; এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। দলের জন্য আমার কর্মের মূল্যায়ন নেত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আগেও দিয়েছেন আর সামনেও দিবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
দলের স্বার্থে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিটি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে দলকে সুসংগঠিত করতে গণসংযোগ করছেন বলে জানান তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল। তিনি বলেন, আমরা ব্যক্তি নয় দলীয় মার্কাকেই প্রাধান্য দিব। আমি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আর্দশ নিয়েই দল যাকে মনোনীত করবে তাকে আমরা সমর্থন করব।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘জনপ্রিয়তা যার বেশি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকেই মনোনয়ন দিবেন; আর তার পক্ষেই কাজ করব আমরা।
এলাকার সন্তান হিসেবে নিজের জনপ্রিয়তার কথা উল্লেখ করে সিলেট আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রিয়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার বলেন, ‘সবার সাথেই যোগাযোগ হচ্ছে। সবাই আমাকে গ্রহণ করেছে। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার আমাকে নিরাশ করবে না।