ঢাকা , সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপিতে কোন্দল, ইনুতে নির্ভর আওয়ামী লীগ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এক সময়ে বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত কুষ্টিয়া-২ আসনটিতে বর্তমানে নীরব কোন্দলে জর্জরিত দলটি। অন্যদিকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জোটের অন্যতম শরিক জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ওপর নির্ভর আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি জামায়াতেরও বেশ শক্ত অবস্থান রয়েছে এ আসনে। তবে ১৪ দলীয় মহাজোট না থাকলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এ আসনে নির্বাচন করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে মিরপুর উপজেলায় ভোটার সংখ্যা বেশি। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ থেকে ভেড়ামারার বাসিন্দারা মনোনয়ন পাচ্ছেন ও  সংসদ সদস্য হচ্ছেন। মিরপুরের বেশির ভাগ সাধারণ ভোটারদের মনে খুব কষ্ট। মন্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ ও ব্যাপক গণসংযোগের কল্যাণে হাসানুল হক ইনু বর্তমানে বেশ এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি ও তার মিত্রদের এ আসন ফিরে পেতে প্রার্থী বাছাইয়ে সতর্ক হতে হবে বলে অভিজ্ঞজনদের অভিমত।
কুষ্টিয়া-২ সংসদীয় আসনটি মিরপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভা ও ভেড়ামারা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। মিরপুর উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১ হাজার ৮৩৮ জন ভোটার এবং ভোড়ামারা উপজেলায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৯ জন ভোটার।
এ আসনে ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান শাসনামলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবদুর রউফ চৌধুরী বিজয়ী হন। ১৯৭৩ সালেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুর রউফ  চৌধুরী জয়লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে ব্যারিস্টার আবদুল হক ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। ১৯৮৬ সালে জামায়াতের আবদুল ওয়াহেদ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে বিজয়ী হন। ১৯৮৮ সালে আহসান হাবীব লিংকন লাঙল প্রতীকে বিজয়ী হন। ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে বিজয়ী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রউফ চৌধুরী বিএনপিতে যোগদান করে ১৯৯১ সালে আবারো বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পরপর ৩ বার বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বিজয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জোটের প্রার্থী হিসেবে হাসানুল হক ইনু জয়ী হন।
জেলার দুই হেভিওয়েট নেতার বাড়ি ভেড়ামারা উপজেলায়। এরা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোছাঃ ফরিদা ইয়াসমিন ও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব লিংকনের বাড়িও ভেড়ামারায়। অপরদিকে মিরপুর থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আব্দুল গফুর।
২০০৮ সালের নির্বাচনে হাসানুল হক ইনুকে মনোনয়ন দেয়ার পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। ইনুর মনোনয়ন বাতিল করে এই আসনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি উঠেছিল। সে সময় জোট প্রধানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ফলে ২০০৮ সালে নির্বাচন ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে হাসানুল হক ইনু পর পর এমপি নির্বাচিত ও পরবর্তীতে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর আসনে) থেকে এমপি নির্বাচিত হন হানিফ। ১৪দলীয় জোট ঠিক থাকলে কুষ্টিয়া-২ আসনে হাসানুল হক ইনুর মনোনয়ন আগামী নির্বাচনেও পাকাপোক্ত। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে গণসংযোগে তথ্যমন্ত্রীর তৎপরতাই বেশি। পাশাপাশি রেডিও স্টেশন নির্মাণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, গ্রামে গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনসহ তিনি এলাকায় বেশ উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এই এলাকার ৯০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন হাটবাজার, ইউনিয়ন পরিষদসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানে সোলার প্যানেল বসিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে এই আসনে বিএনপির ভাগ্যবান নেতা সাবেক এমপি অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগে মাঠে নেমেছেন। মিরপুর-ভেড়ামারায় গত ৮ বছরে সরকারবিরোধী তেমন কোনো আন্দোলন হয়নি। এখানে ৫টি মামলা হয়েছে, যার একটিতেও অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম আসামি হননি। তবে নিজ অনুসারীদের দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটিগুলো করেছেন তিনি। এতে দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতাকর্মীদের অনেকেই বাদ পড়েছেন। বাদ পড়াদের মধ্যে ভেড়ামারা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মহসিন আলী ও মিরপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রবীণ নেতা আব্দুল আজিজ খান উল্লেখযোগ্য। অপরদিকে ভেড়ামারার সন্তান বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোছাঃ ফরিদা ইয়াসমিন এ আসনে নির্বাচনের লক্ষ্যে এলাকায় গণসংযোগ করছেন নিয়মিত। এবার নিয়ে ৩য় বারের মতো বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন কমিশনের আরপিও (৩০ শতাংশ নারী কোটা) বাস্তবায়িত করলে ফরিদা ইয়াসমিন এ আসনে মনোনয়ন পাবেন বলে তার সমর্থক ও নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা।
কুষ্টিয়া-২ আসনের আরেক সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব লিংকনও এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন।
বিএনপির অপর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। গত ৮ বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মামলার শিকার কুষ্টিয়া জেলার নেতাকর্মীদের নিজ খরচে হাইকোর্ট থেকে জামিন করিয়েছেন ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। তিনিও এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই নির্বাচনী এলাকার মিরপুর উপজেলার বাসিন্দা তিনি। ভোটের অঙ্কের হিসাবে মিরপুর উজেলায় ভোটারের সংখ্যা ভেড়ামারার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তার পিতা মরহুম আব্দুর রউফ চৌধুরী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিয়নের ডেপুটি কমান্ডার ও তিনবারের এমপি ছিলেন। পিতার রাজনৈতিক অবস্থানের পাশাপাশি ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক। এখানে জামায়াত নেতা আব্দুল গফুরকে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে দলটির পক্ষে।
এ আসনের মিরপুরে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব ও স্থানীয় জাসদ-আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সমন্বয়হীনতার কারণে কিছুটা বেকায়দায় রয়েছে ১৪দলীয় জোট। অপরদিকে বিএনপিতে রয়েছে নীরব দ্বন্দ্ব। ওয়ার্ড পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যন্ত অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটিতে অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের অনুসারীদের প্রাধান্য রয়েছে। সাধারণ কর্মীদের বেশির ভাগ শহিদুল বিরোধী। তারা ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী ও মোছাঃ ফরিদা ইয়াসমিনের সমর্থক। এ আসনে জামায়াতের প্রায় ২০ হাজার রিজার্ভ  ভোট রয়েছে। গত ৮ বছরে দলটির নেতাকর্মীরা কোণঠাসা থাকলেও গোপনে সক্রিয় তারা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বিএনপিতে কোন্দল, ইনুতে নির্ভর আওয়ামী লীগ

আপডেট টাইম : ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এক সময়ে বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত কুষ্টিয়া-২ আসনটিতে বর্তমানে নীরব কোন্দলে জর্জরিত দলটি। অন্যদিকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জোটের অন্যতম শরিক জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ওপর নির্ভর আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি জামায়াতেরও বেশ শক্ত অবস্থান রয়েছে এ আসনে। তবে ১৪ দলীয় মহাজোট না থাকলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এ আসনে নির্বাচন করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে মিরপুর উপজেলায় ভোটার সংখ্যা বেশি। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ থেকে ভেড়ামারার বাসিন্দারা মনোনয়ন পাচ্ছেন ও  সংসদ সদস্য হচ্ছেন। মিরপুরের বেশির ভাগ সাধারণ ভোটারদের মনে খুব কষ্ট। মন্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ ও ব্যাপক গণসংযোগের কল্যাণে হাসানুল হক ইনু বর্তমানে বেশ এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি ও তার মিত্রদের এ আসন ফিরে পেতে প্রার্থী বাছাইয়ে সতর্ক হতে হবে বলে অভিজ্ঞজনদের অভিমত।
কুষ্টিয়া-২ সংসদীয় আসনটি মিরপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভা ও ভেড়ামারা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। মিরপুর উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১ হাজার ৮৩৮ জন ভোটার এবং ভোড়ামারা উপজেলায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৯ জন ভোটার।
এ আসনে ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান শাসনামলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবদুর রউফ চৌধুরী বিজয়ী হন। ১৯৭৩ সালেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুর রউফ  চৌধুরী জয়লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে ব্যারিস্টার আবদুল হক ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। ১৯৮৬ সালে জামায়াতের আবদুল ওয়াহেদ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে বিজয়ী হন। ১৯৮৮ সালে আহসান হাবীব লিংকন লাঙল প্রতীকে বিজয়ী হন। ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে বিজয়ী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রউফ চৌধুরী বিএনপিতে যোগদান করে ১৯৯১ সালে আবারো বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পরপর ৩ বার বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বিজয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জোটের প্রার্থী হিসেবে হাসানুল হক ইনু জয়ী হন।
জেলার দুই হেভিওয়েট নেতার বাড়ি ভেড়ামারা উপজেলায়। এরা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোছাঃ ফরিদা ইয়াসমিন ও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব লিংকনের বাড়িও ভেড়ামারায়। অপরদিকে মিরপুর থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আব্দুল গফুর।
২০০৮ সালের নির্বাচনে হাসানুল হক ইনুকে মনোনয়ন দেয়ার পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। ইনুর মনোনয়ন বাতিল করে এই আসনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি উঠেছিল। সে সময় জোট প্রধানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ফলে ২০০৮ সালে নির্বাচন ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে হাসানুল হক ইনু পর পর এমপি নির্বাচিত ও পরবর্তীতে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর আসনে) থেকে এমপি নির্বাচিত হন হানিফ। ১৪দলীয় জোট ঠিক থাকলে কুষ্টিয়া-২ আসনে হাসানুল হক ইনুর মনোনয়ন আগামী নির্বাচনেও পাকাপোক্ত। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে গণসংযোগে তথ্যমন্ত্রীর তৎপরতাই বেশি। পাশাপাশি রেডিও স্টেশন নির্মাণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, গ্রামে গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনসহ তিনি এলাকায় বেশ উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এই এলাকার ৯০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন হাটবাজার, ইউনিয়ন পরিষদসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানে সোলার প্যানেল বসিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে এই আসনে বিএনপির ভাগ্যবান নেতা সাবেক এমপি অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগে মাঠে নেমেছেন। মিরপুর-ভেড়ামারায় গত ৮ বছরে সরকারবিরোধী তেমন কোনো আন্দোলন হয়নি। এখানে ৫টি মামলা হয়েছে, যার একটিতেও অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম আসামি হননি। তবে নিজ অনুসারীদের দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটিগুলো করেছেন তিনি। এতে দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতাকর্মীদের অনেকেই বাদ পড়েছেন। বাদ পড়াদের মধ্যে ভেড়ামারা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মহসিন আলী ও মিরপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রবীণ নেতা আব্দুল আজিজ খান উল্লেখযোগ্য। অপরদিকে ভেড়ামারার সন্তান বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোছাঃ ফরিদা ইয়াসমিন এ আসনে নির্বাচনের লক্ষ্যে এলাকায় গণসংযোগ করছেন নিয়মিত। এবার নিয়ে ৩য় বারের মতো বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন কমিশনের আরপিও (৩০ শতাংশ নারী কোটা) বাস্তবায়িত করলে ফরিদা ইয়াসমিন এ আসনে মনোনয়ন পাবেন বলে তার সমর্থক ও নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা।
কুষ্টিয়া-২ আসনের আরেক সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব লিংকনও এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন।
বিএনপির অপর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। গত ৮ বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মামলার শিকার কুষ্টিয়া জেলার নেতাকর্মীদের নিজ খরচে হাইকোর্ট থেকে জামিন করিয়েছেন ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। তিনিও এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই নির্বাচনী এলাকার মিরপুর উপজেলার বাসিন্দা তিনি। ভোটের অঙ্কের হিসাবে মিরপুর উজেলায় ভোটারের সংখ্যা ভেড়ামারার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তার পিতা মরহুম আব্দুর রউফ চৌধুরী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিয়নের ডেপুটি কমান্ডার ও তিনবারের এমপি ছিলেন। পিতার রাজনৈতিক অবস্থানের পাশাপাশি ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক। এখানে জামায়াত নেতা আব্দুল গফুরকে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে দলটির পক্ষে।
এ আসনের মিরপুরে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব ও স্থানীয় জাসদ-আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সমন্বয়হীনতার কারণে কিছুটা বেকায়দায় রয়েছে ১৪দলীয় জোট। অপরদিকে বিএনপিতে রয়েছে নীরব দ্বন্দ্ব। ওয়ার্ড পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যন্ত অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটিতে অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের অনুসারীদের প্রাধান্য রয়েছে। সাধারণ কর্মীদের বেশির ভাগ শহিদুল বিরোধী। তারা ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী ও মোছাঃ ফরিদা ইয়াসমিনের সমর্থক। এ আসনে জামায়াতের প্রায় ২০ হাজার রিজার্ভ  ভোট রয়েছে। গত ৮ বছরে দলটির নেতাকর্মীরা কোণঠাসা থাকলেও গোপনে সক্রিয় তারা।