বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মনোনয়ন নিয়ে যুদ্ধ জমে উঠেছে গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগে। দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন দলের মনোনয়ন পেতে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন মরিয়া হয়ে। সভা-সমাবেশ করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনোনয়ন পেতে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জনসংযোগ চালালেও তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা এমন তীব্র নয়।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক নেতা-কর্মী বলেছেন, দলের মধ্যে এ আসনের বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া খানিকটা কোণঠাসা হয়ে আছেন। অনুসারী নেতা-কর্মীরা তার মনোনয়ন বিষয়ে আশাবাদী হলেও ফজলে রাব্বী মিয়া নিজে খুব একটা স্বস্তিতে নেই। তুলনায় বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন মাহমুদ হাসান রিপন। বেশিরভাগ ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মী সাবেক এই ছাত্রনেতার পক্ষে রয়েছেন। তাকে নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে কোনো বিতর্কও নেই।
অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া জাতীয় পার্টির টিকিটে চার দফায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ১৯৯৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদকে পরাজিত করেন তিনি। ১০ম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় তিনি ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজও করেছেন। ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, তিনি নির্বাচনী এলাকার ১৭টি ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেছেন। ব্যাপকভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। মনোনয়ন পেয়ে আবারও জয়ী হলে তিনি উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখবেন।
সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে নেতৃত্বে এক ধরনের শূন্যতা থাকা ও অবমূল্যায়নের কারণে অনেক নেতা-কর্মী ঝিমিয়ে পড়েছিলেন। এসব কারণে অনেকে নিজেদের গুটিয়েও নিয়েছিলেন। তবে মাহমুদ হাসান রিপন নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করে তুলে নতুন মাত্রা আনেন। ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সখ্য বাড়িয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যাপক গতি আনেন। মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গেই রয়েছেন। তাদের মতামত গুরুত্ব পেলে তিনিই মনোনয়ন পাবেন। আর মনোনয়ন পেলে জনগণ তাকেই নির্বাচিত করবে। নির্বাচিত হলে তিনি সাঘাটা ও ফুলছড়িকে মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবেন।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান নিটল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি বলেন, সুযোগ পেলে তিনি সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবেন। দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় তিনি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়েছেন। নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশ করছেন।
তবে এক সময় জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিতি গাইবান্ধা-৫ আসনে তাদের এখন আর সুদিন নেই। সুদিন ফিরিয়ে আনতে এ আসনে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি উঠেছে স্থানীয় জাতীয় পার্টিতে। ফুলছড়ি উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আল আমিন আহম্মেদ জানান, এ আসনে রওশন এরশাদ এমপি থাকার সময় সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় নদীভাঙন রোধে ব্যাপক কাজ করেছিলেন। ওই সময় রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড হয়েছিল। তাই তিনি প্রার্থী হলে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। কোনো কারণে তিনি প্রার্থী না হলে দুই দফায় নির্বাচিত সাঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এএইচএম গোলাম শহীদ রঞ্জু দলের প্রার্থী হবেন।
স্বাধীনতার পর এ আসনে একবার বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রোস্তম আলী মোল্লা। তিনি এখন শারীরিকভাবে অসুস্থ। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইছেন সাঘাটা উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা রাহিদুল ইসলাম রাহী। তিনি জানান, দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছেন, দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। বিএনপির আরেকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নাজেমুল ইসলাম নয়ন দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। সাঘাটা উপজেলা বিএনপি সভাপতি মোহাম্মদ আলীও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
এ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী হিসেবে প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ডা. একরাম হোসেন। চিকিৎসা সেবায় স্থানীয়ভাবে বিশেষ অবদান থাকায় তিনি বেশ পরিচিত। তার নিজস্ব ভোট ব্যাংকও রয়েছে।